২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্নসাত করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না)। জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কতাবার্তা) হবে। যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রূপে আবির্ভূত হবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো- রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (এসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতো র্ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নির্দশনগুলোর জন্য।’(তিরমিজি, হাদিস: ১৪৪৭)। আমাদের দেশে বৈশিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড় ও খরা আগের চেয়ে বেড়েছে। কয়েক দশক ধরে উপকূলীয় এলাকাসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ছে। এ ছাড়া দেশের একটি বড় অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ; বিশেষ করে সিলেট এলাকা ভূকম্পনের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলেন, দেশে যেকোনো সময় বড় ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। বিজ্ঞানীদের সেই আশঙ্কা আরো জোরালো হয়েছে সিলেটে গত ২৯/০৫/২০২১ ইংরেজি শনিবার ও রোববারে সাত দফা ভূকম্পন অনুভূত হওয়ায়। শুধু শনিবারই সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে ছয়বার কম্পন অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, গত দুই দিনের ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট সীমান্তের ডাউকি ফল্ট। এটি খুব বিপজ্জনক ফল্ট। এক দিনে কয়েক দফা কম্পন শক্তিশালী ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস; যদিও ঘন ঘন কম্পন শক্তিশালী ভূমিকম্পকে কিছুটা দুর্বলও করে দেয়।
ভূমিকম্পের প্রি শক ও আফটার শক থাকে। অনেক সময় বড় ভূমিকম্পের আগে আগে ছোট কম্পন হয়। আবার বড় ভূমিকম্প হলে তার পর ছোট ছোট কম্পন হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাউকি ফল্ট পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় তিন শ’ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই পলিমাটি দিয়ে ঢাকা। ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও মিয়ানমার তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। তাদের মতে, অল্প সময়ের মধ্যে ছয়বার ভূমিকম্পের ঘটনা বিরল, এমনটি আর কখনোই হয়নি। অতীতে সিলেট অঞ্চলে অথবা আশপাশে বড় বড় বেশ কিছু ভূমিকম্প হয়েছে। বাংলাদেশের দ্ইু দিকের ভূগঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হওয়ায় বড় ধরণের ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেশ কয়েক বছর ধরেই করা হচ্ছে; যা রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রা পর্যন্ত হতে পারে যদি একবারে হয়। বারবার যেভাবে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে তার প্রতিক্রিয়ায় বড় ধরনের কম্পন অনুভূত হতে পারে। অতীতে ছোট ছোট ভূকম্পনের পর বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার নজির রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্ব কোণে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টে এবং পূর্বে চট্টগ্রাম ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে দু’টি বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। রিখটার স্কেলে যা হতে পারে সাড়ে ৭ থেকে ৮ মাত্রার। এমনটি হলে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও সিলেট শহরে ব্যাপক ক্ষতি হবে। যদিও ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূতাত্তি¡ক অবস্থা নেই। কিন্তু তা সত্যেও সিলেট ও চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী শহরও। এর অন্যতম কারণ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েয়ে চার লাখের বেশি ভবন। রাজউক এলাকায় যে সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি; যার বেশির ভাগই ভূমিকম্প সহনীয় নয়। ঢাকাসহ আমাদের নগরীগুলোতে অবকাঠামো যেমন দুর্বল, তেমনি মানুষের সচেতনতাও কম। সে জন্য যদি একটা বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয় তা হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হবে। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গা রাজধানী ঢাকায় নেই। অথচ এমন দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা দরকার।
বুয়েটের সাথে যৌতভাবে সিডিএমপির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। যেখানে তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তুূপ। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কতটা প্রস্তÍত আমরা? তাই এখন থেকেই আমাদের ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় বড় ধরনের প্রস্তুুতি প্রয়োজন। সবার জানা, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। ভূকপম্পের মতো দুর্যোগে এটি আরো প্রাসঙ্গিক। একই সাথে স্মরণ রাখা জরুরি, এ ধরনের প্রাকৃতিক ঝুঁকি কমাতে জনসচেতনতাও বড় ভূমিকা পালন করে।
ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়-
*ভূকম্পন অনুভূত হলে শান্ত থাকুন: আতঙ্কিত হয়ে ছুটাছুটি করবেন না কিংবা তাৎক্ষনিক ভাবে বাড়ি থেকে বের হবার চেষ্টা করবেন না।
*ভূকম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোন আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিন।
*রান্না ঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসুন।
*বীম, কলাম ও পিলার ঘেঁেষ আশ্রয় নিন।
*অফিস কক্ষ / বাসস্থান থেকে বের হওয়ার পূর্বে গ্যাস, বৈদ্যুৎ ও পানির সরবরাহের সংযোগ স্থল বন্ধ করতে হবে।
*বারান্দা, বেলকুনি, জানালা, বুকশেলফ, আলমারি, কাঠের আসবাবপত্র, বাঁধানো ছবি বা অন্য কোন জুলন্ত ভারি বস্ত থেকে দূরে থাকুন।
*শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুল ব্যাগ মাথায় নিয়ে শক্ত বেঞ্চ / টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।
*ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক / টেলিফোনের খুঁটি থেকে দূরে খোলা স্থানে আশ্রয় নিন।
*গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে থাকলে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় কিংবা ধাক্কাধাক্কি না করে দু’হাতে মাথা ঢেকে বসে পড়–ন।
*ভাঙ্গা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়া চড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলা বালি শ্বাস নালিতে না ঢোকে। *অফিস কক্ষে অথবা টয়লেটে থাকলে দ্রুত বেরিয়ে আসুন।
*একবার কম্পন হওয়ার পর আমারও হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিন।
*উপর তলায় থাকলে কম্পন বা ঝাকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে বা লিফট ব্যবহার করে নামা থেকে বিরত থাকুন।
*কম্পন বা ঝাঁকুনি থাকলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন এবং খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিন।
*গাড়ীতে থাকলে ওভার ব্রীজ, ফ্লাই ওভার, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ী থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ীর ভিতরে থাকুন। *ব্যাটারীচালিত রেডিও, টর্চলাইট, হাতুড়ি, হেলমেট, কুড়াল এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম একটি ব্যাগে মজুদ রাখুন।
*বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করুন। *ফায়ার ষ্টেশন, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমূহের জরুরি টেলিফোন নম্বর বাড়ির প্রকাশ্য স্থানে ঝুলিয়ে রাখুন। যেন তা সকলে দেখতে পারে।
*ভূকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
শিক্ষক-কলামিস্ট, মোবাইল- ০১৭১৬২৭০১২০।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।