মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মোগল ঐতিহ্যবাহী ইমারতগুলো ধ্বংস করে দেয়া দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইসলাম বিদ্বেষী ঘৃণাপূর্ণ সাম্প্রদায়িকতা বিস্তারের সাম্প্রতিক প্রয়াস। মোদি পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা না করে সমগ্র ভারতকে ভয়ঙ্কর করোনা এবং ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। দেশটিতে চলমান মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে বিশ^ ঐতিহ্যের অন্তর্গত পুরোনো পার্লামেন্ট ভবন ধ্বংস করে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা খরচ করে তিনি নতুন পার্লামেন্ট ভবন তৈরি করছেন।
মোদির ঘৃণাবাদী ধর্মান্ধতার সমালোচনা করে ১৯৯১ সালে টার্নার পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রখ্যাত স্থপতি স্যার অনিশ কাপুর বিশ^খ্যাত পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানে অত্যন্ত আক্ষেপ ভরে লিখেছেন:
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির প্রাণকেন্দ্রে মোগল ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় সংসদ ভবনটি ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্স ১৯১১ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে নির্মাণ করেন। লুটিয়েন্স সম্ভবত আধুনিক সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক ঐতিহ্য অনুপ্রাণিত নকশা করেছেন। এর দুর্দান্ত পরিকল্পনাটি মোগল-ইসলামিক ঐতিহ্য অনুসরণ করে কিঞ্চিত রোমানীয় আদলে তৈরি। তবে, ভবনগুলো হিন্দু মন্দির এবং প্রাসাদগুলোর প্রত্নতাত্ত্বিক প্রতীকগুলোও প্রতিভাত করে। এটি আমার দৃষ্টিতে বিশ্বের যে কোনও স্থানের সরকারি ভবনগুলোর শ্রেষ্ঠ সমষ্টি।
কিন্তু, এসব ভবনের ইসলামিক নকশা দিল্লির বর্তমান শাসন ব্যবস্থার চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব স্বৈরাচারী মোদি এবং অনুচররা এগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমার লেখা চলাকালীন, ধ্বংসযজ্ঞটি ঘটে চলেছে। মোদির ঘৃণাপূর্ণ অ-ইসলামীকরণের কদর্য অভিযানের ভারতে বিশ্ব-মানের কীর্তিগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে, জাতিসংঘের ঐতিহ্য ফোরাম এ বিষয়ে নিরব এবং বিশ্ব-ঐতিহ্য সংস্থা তাদের মুখে কুলুপ এঁটেছে। তারা কি মোদিকে ভয় পান, নাকি ভারতে কী ঘটছে, তারা পরোয়া করেন না?
মতাদর্শগতভাবে ঘৃণায় পরিপূর্ণ এ ধ্বংযজ্ঞটি ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং পুরো ভারতবর্ষে ইসলামী ও মোঘল স্মৃতিস্তম্ভগুলো ভাঙচুরকে অনুসরণ করে ঘটছে। মোদি ভারতের সমস্ত ইসলামিক পুরাকীর্তিগুলোকে বিলুপ্ত এবং ভারত থেকে ২শ’ মিলিয়ন ভারতীয় মুসলিমকে অপসারণের চেয়ে কম কিছু চান বলে মনে হয় না।
ভুলে গেলে চলবে না যে, তিনি ইতোমধ্যে লাখ লাখ ভারতীয় মুসলিমদের কাছ থেকে জোর করে ভারতীয় নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন এবং তাদেরকে রাষ্ট্রহীন হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। এটি এমন একটি গর্হিত অপরাধ, যেটির জন্য তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি, যদিও নাগরিকত্বকে একটি মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা জাতিসংঘের মানবাধিকারের ঘোষণায় ভারত অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ।
জায়গার অভাবের দোহাই দিয়ে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো স্রেফ একটি প্রহসন। সংসদ ভবনের মধ্যে অবস্থিত ভারতের জাতীয় জাদুঘরটিকেও তার দুর্দান্ত সংগ্রহের সাথে একটি অপর্যাপ্ত জায়গায় স্থানান্তরিত করা হবে, যার ফলে অমূল্য ও ভঙ্গুর শিল্পগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। মোদির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই কাজটি শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ গতি প্রয়োগ করা হয়েছে। এই হীন ষড়যন্ত্রটিতে সম্মতি দেয়ার জন্য ভারতীয় আদালতের ওপর চাপ তৈরি করা হয়েছে এবং সাংবাদিক ও অন্যান্য সমালোচনাকারীদের ভয় দেখানো হয়েছে।
আমি এখানে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাথে মোদির তুলনা করছি, যিনি ১৭ শতকে উগ্র ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে সমগ্র ভারতবর্ষে হিন্দু পুরাকীর্তি এবং মন্দিরগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। মোদি আমাদের সময়ের একজন আওরঙ্গজেব। তার সরকারকে আফগানিস্তানের তালেবানদের সাথে তুলনা করা যায়, যারা আদর্শিক ধর্মান্ধতা দিয়ে দেশ শাসনের পাঁয়তারা করছে। মোদির হিন্দু তালেবানদের সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য নিজস্ব স্মৃতিস্তম্ভের প্রয়োজন। বাকি সমস্ত ফ্যাসিবাদী রাজনীতিবিদদের মতো তিনিও আশাবাদী যে, ভারতবাসীর হৃদয়ে তার নতুন স্মৃতিস্তম্ভগুলোর ছাপ বসিয়ে তিনি তার নতুন ভারতের জন্য একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবেন, যা তাকে মহাত্মা গান্ধী এবং বল্লভভাই প্যাটেলের সারিতে জায়গা করে দেবে।
উত্তর কোরিয়ার কিম জং-উনের হাস্যকর নকল করে মোদি সম্প্রতি নিজের নামে একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম চালু করেছেন। তিনি ৪শ’ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে হিন্দু-গুজরাটি মুক্তিযোদ্ধা বল্লভভাই প্যাটেলের একটি মূর্তি তৈরি করেছেন, যা স্ট্যাচু অফ লিবার্টির চেয়ে চারগুণ বড়।
সংসদ ভবন ধ্বংসের ঘটনা একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের ভারতীয়দের মানসিকতাকে আচ্ছাদনের প্রতিনিধিত্ব করে। দুঃখজনকভাবে, করোনা ভারতকে ধ্বংস করে ফেলেছে। যখন ভারতের লাখ লাখ দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ ভ্যাকসিন এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর সম্মুখীন এবং প্রতিদিন হাজারে হাজারে মারা যাচ্ছে, তখন নতুন সংসদ ভবন প্রকল্পের তহবিলের জন্য মোদির সরকার ২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।
ভারতের নাম না জানা অসংখ্য নাগরিকের লাশের ওপর দিয়ে মোদি কদর্যভাবে নিজেরও একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করছেন। হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর আশির্বাদ দেয়ার অনুকরণে নির্মাণাধীন সেই মূর্তিটি সমস্ত ভারতীয়ের উপর হিন্দু আধিপত্যবাদের অতি-জাতীয়তাবাদী আদর্শ এবং এর স্থপতি হিসাবে মোদির ভারত শাসনের প্রতিনিধিত্ব করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।