Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কেন এই অবক্ষয়

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২১, ১২:০৩ এএম

এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী অলস সময় অতিবাহিত করছে। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নিলেও বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তা করতে পারছে না। এর মধ্যে সিংহভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনের সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক অভিভাবকের পক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন দিয়ে অনলাইনের খরচ যোগানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কোটি কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে দূরে রয়েছে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ঝরেও পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে বোঝা যাবে, কত শিক্ষার্থী পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে তার নিশ্চয়তা নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে নগরীর অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকের প্রতি ঝুঁকেছে। এতে তাদের মন ও মননে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ প্রেক্ষিতে, উৎকণ্ঠিত নাগরিক সমাজ আহবান জানিয়ে বলেছে, স্কুলবিহীন এ সময়টাতে সন্তানদের নীতি-নৈতিকতার দিকে অভিভাবকদের বেশি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পড়ালেখার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের ওপর জোর দিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ ও সুশৃঙ্খল জীবন গড়ার ক্ষেত্রে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেখানেই শিক্ষার্থীর মানুষ হয়ে ওঠার ভিত্তি রচিত হয়। ক্লাসে যাওয়া আসা ও সহপাঠীদের সঙ্গে মেলামেশার মধ্য দিয়ে তাদের মানসিক উন্নতি ও অবনতির বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষক ও অভিভাবক শ্রেণী বুঝতে পারেন একজন শিক্ষার্থী কিভাবে বেড়ে উঠছে। ভুল পথে ধাবিত হলে সংশোধনের পন্থা অবলম্বন করা সহজ হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একজন শিক্ষার্থীর মনোজগতে কি পরিবর্তন হচ্ছে, তা বোঝা সহজ নয়। আবার ক্লাসবিহীন অবস্থায় অভিভাবকদের পক্ষেও সন্তানের সঠিক তত্ত্বাবধান করা সম্ভবপর হচ্ছে না।

দুই.
করোনা শুধু শিক্ষার্থীদের মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে না, সামগ্রিকভাবে মানুষের মূল্যবোধেও প্রভাব ফেলেছে। গত বছর করোনাকালে অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে সামর্থ্যবান ও বোধসম্পন্ন মানুষ যেভাবে দাঁড়িয়েছিল, এক বছরের ব্যবধানে তা যেন উধাও হয়ে গেছে। এ বছর লকডাউনে সেসব মানুষকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। এর কারণ কি? এর দুটি উত্তর হতে পারে। এক. বিগত এক বছরে সামর্থ্যবানদের অনেকে সামর্থ্য হারিয়েছেন। তারা এখন আর অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। দুই. আগামীতে অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারেন, এ শঙ্কায় তারা কৃচ্ছতা অবলম্বন করছেন। কিংবা অর্থ জমিয়ে রাখছেন। ফলে এবার অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে কেউ তেমন এগিয়ে আসেননি। তারা মানবিকতাকে বাক্সবন্দি করে ফেলেছেন। অথচ আমাদের দেশের মানুষের চিরায়ত বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, মায়া-মমতা এবং একের অপরের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা। পরিচিত হোক, অপরিচিত হোক, একের দুঃখে দুঃখিত হওয়া, সহমর্মীতা প্রকাশ করা, পাশে দাঁড়িয়ে সান্ত¦না দেয়া। নিজে যত কষ্টেই থাকুক না কেন, তার মানবিক মূল্যবোধটি খুবই টনটনে থাকে। গাঁয়ের পথ ধরে কোনো তৃষ্ণার্ত পথিক কোনো বাড়িতে গিয়ে এক গøাস পানি চাইলে, দেখা যেত, শুধু এক গøাস পানি নয়, সঙ্গে একবাটি মুড়ি-মিঠাই নিয়ে বাড়ির কর্তা হাজির হতো। নিজে বসে আপ্যায়ন করত। চেনা নেই জানা নেই, এমন ব্যক্তিকে অতিথি ভেবে পরম মমতায় হাত বাড়িয়ে দিত। এখন এমন দৃশ্য খুব কম দেখা যায়। গত বছর করোনায় আমাদের চিরায়ত মূল্যবোধের এই দৃশ্য দেখা গেছে। এমন দৃশ্য দেখে অভিভূত না হয়ে পারা যায়নি। এ বছর সেটা দেখা যাচ্ছে না। তার মানে কি আমাদের মূল্যবোধে ধ্বস নেমেছে? নাকি অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কায় মূল্যবোধকে চাপা দেয়া হয়েছে? এ কথাই বা বলি কি করে? অর্থের টানাপড়েনের মধ্যে আমাদের দেশের মানুষ যুগযুগ ধরেই ছিল, সে সময়ও তারা মানবিক মূল্যবোধ হারায়নি। অভাবের মধ্যেও তার নীতি-নৈতিকতা অটুট ছিল। বলাবাহুল্য, জীবনে অর্থের প্রয়োজনীয়তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তবে অর্থ রোজগার করতে গিয়ে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিসর্জন দেয়া আমাদের দেশের মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নয়। অর্থের সাথে মানবিকবোধটুকুও জড়িয়ে থাকে। আবার এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, সময়ের বিবর্তনে আমরা এখন এমন এক সমাজে বসবাস করছি, যেখানে মান-সম্মান, মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতাকে কেউ আর বড় তোয়াক্কা করছে না। অনেকের মধ্যে এমন একটা প্রবণতা বিরাজমান, অর্থ-বিত্তের মালিক হতে পারলে মান-সম্মান কেনা যাবে। ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’, এমন প্রবণতা দেখা দিয়েছে। মানবিক গুণাবলীর ধার ধারছে না এমন লোকের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে, সমাজের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ ও চিহ্নিত দুষ্টু শ্রেণী নিয়ন্তা হয়ে বসে আছে। তাদের অর্থ আছে, পেশীশক্তিও আছে। তারা মনে করে, এই দুই শক্তি থাকলে মান-সম্মান এমনিতেই তাদের পায়ে লুটিয়ে পড়বে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আমরা সম্মিলিতভাবেই এদের অবস্থানকে শক্ত করার সুযোগ করে দিচ্ছি। আমাদের মধ্যে যাদের এখনও একটু-আধটু সুকুমারবৃত্তি রয়েছে, তারা কোনোভাবেই এক হতে পারছি না। একেক জন যেন আলাদা হয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপবাসী হয়ে বসবাস করছি। কে মরল, কে মারল, এ নিয়ে টুঁ শব্দ করি না। কিভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে হয়, তা জেনেও উদ্যোগী হই না। আমাদের দুর্বলতার এ সুযোগটাই নিচ্ছে সমাজের মাথা হয়ে থাকা দুষ্টচক্র। শুধু সমাজের এই দুষ্টচক্র নয়, রাজনীতিক থেকে রাষ্ট্র পরিচালকরাও এ সুযোগ নিচ্ছে। তারা জানে, হুমকি-ধমকি দিয়ে মানুষকে ভীত করতে না পারলে কোনোভাবেই তাদের দাপট বা ক্ষমতা কায়েম রাখতে পারবে না। আর আমরাও নৈতিক মূল্যবোধ প্রাধান্য না দিয়ে ভীতিসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর হুমকি মেনে নিচ্ছি। করোনার ভয়াবহতা এবং মৃত্যু দুষ্টুচক্রকে দমাতে পারছে না। বরং করোনাকে উপলক্ষ করে ধন-সম্পদ লুটপাটের প্রবণতা যেন আরো দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে ত্রাণ ও প্রনোদনার উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানেও এই দুষ্টুচক্র সক্রিয় হয়ে রয়েছে। নিজেরা গরিব সেজে গরিবের ধন মেরে খাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, মৃত্যুসম করোনা তাদের মধ্যে কোনো বোধশক্তি জাগাতে পারেনি। নীতি-নৈতিকতা পদদলিত করে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের নীতি- নৈতিকতার অবক্ষয়ের প্রভাব এখন সুদূরপ্রসারি হয়ে উঠেছে। এর প্রতিক্রিয়া পড়ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর। এই যে শহর ও গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে, এর মূল কারণই হচ্ছে, অভিভাবক শ্রেণীর উদাসীনতা ও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া। তা নাহলে, একটি বাড়ন্ত কিশোর যার পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা, তার মধ্যে কেন খুন, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ প্রবণতা দেখা দেবে? এর জন্য ঐ কিশোর যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী আমাদের পরিবার ও সমাজের অভিভাবক শ্রেণী। চোখের সামনে এক দল কিশোর ভয়ংকর অপরাধী হয়ে উঠছে অথচ তা নিবৃতকরণে কোনো ধরনের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং কেউ কেউ এসব উঠতি বয়সী কিশোরদের অপরাধ প্রবণতাকে কাজে লাগাতে উঠেপড়ে লাগছে। এই যে অসংখ্য কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে, তা এমনি এমনি গড়ে উঠেনি। তাদের পেছনে সমাজেরই প্রভাবশালীদের প্রশ্রয় রয়েছে। তারা কিশোরদের বিবেচনাহীন উড়ন্ত-দূরন্ত প্রবণতাকে উস্কে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। এই প্রশ্রয়দাতারা যদি কিশোরদের প্রশ্রয় না দিত তাহলে পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠার কোনো কারণ থাকতে পারে না।

তিন.
পরিবার ও সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রাতারাতি ঘটে না। আবার সামাজিক নীতি-নৈতিকতা ধরে রেখে সময়কে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়াও হঠাৎ করে হয় না। দশকের পর দশক ধরে এর পরিবর্তন হয়। পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ অটুট রেখে পরিবর্তিত সময়কে ধারণ করা হচ্ছে কিনা, সেটাই বিবেচ্য বিষয়। মানুষের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, সভ্যতার দিকে ধাবিত হওয়া। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের যে ক্রমপরিবর্তন তা সভ্য হওয়ারই ধারাবাহিকতা। এই সভ্য হতে গিয়ে মানুষ ভাল-মন্দ দুটো পথের দিকেই এগিয়ে চলেছে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ মানুষই ভাল পথের পথিক হয়েছে। সমাজ গঠনে নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ সম্পন্ন মানবিক গুণাবলি প্রতিষ্ঠা করেছে। যুথবদ্ধ সমাজ গড়ে তুলেছে এবং তাদেরই আধিপত্য স্থাপিত হয়েছে। তারাই সমাজকে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং দিয়ে আসছে। বলা হচ্ছে, এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এসে প্রযুক্তি মানুষের আবেগ ও মায়া-মমতা কেড়ে নিয়েছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকের মধ্যেই স্বাবলম্বী ও স্বনির্ভর হওয়ার প্রবল ইচ্ছা শক্তি জেগেছে। তাদের গতি এতটাই বেড়েছে যে, পারিবারিক ও সামাজিক রীতি-নীতি, মূল্যবোধ এমনকি ধর্মীয় অনুশাসন এই গতির কাছে হার মানছে, পেছনে পড়ে যাচ্ছে। এসব দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করছে না। এর ফলে আমাদের দেশের মতো আবহমান কাল ধরে চলে আসা রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থা এবং সামাজিক যে বন্ধন, তা ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে পড়ছে। শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের এই উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছে সমাজের সবচেয়ে সংখ্যালঘু অথচ ভয়ংকর দুর্বৃত্ত শ্রেণী। তারা প্রাধান্য বিস্তার করছে, একের পর এক অমানবিক ঘটনা ও দুর্নীতির মহোৎসবে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকে মনে করেছিলেন, করোনার কারণে দুষ্টু শ্রেণীর মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কারণ, করোনা এমনই যে, এর কবল থেকে কেউই নিষ্কৃতি পাচ্ছে না। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে প্রত্যেকেই আক্রান্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বহু ক্ষমতাধর এবং হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক করোনাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। বিপুল বিত্ত-বৈভব তাদের বাঁচাতে পারেনি। সঙ্গে কিছুই নিয়ে যেতে পারেনি। বিশাল সাম্রাজ্য ছেড়ে শূন্য হাতে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এই নজির সামনে থাকার পরও অসংখ্য বিত্তবানের হুঁশ হয়নি। আর্তমানবতার সেবায় তাদের দেখা যাচ্ছে না। বরং কীভাবে সম্পদ কুক্ষিগত রাখা যায় এবং আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কারা ব্যস্ত। অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে। অথচ তাদের বিপুল সম্পদ থেকে অসহায় মানুষকে দিলে একটুও টান পড়ার কথা নয়। আমরা দেখেছি, দেশের এক বড় শিল্পপতি যিনি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসইউতে থাকাকালীন চিকিৎসকদের কাছে আঁকুতি জানিয়ে বলেছিলেন, যত টাকা লাগে আমি দেব, আমাকে বাঁচান। তার এই আঁকুতিতে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেনি। হাজার হাজার কোটি টাকা এবং বিশাল শিল্প সা¤্রাজ্য রেখেই তাকে পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে। সঙ্গী হয়েছে এক চিলতে থানকাপড়। উদাহরনটি এ জন্য দেয়া যে, নিজের জীবনে অর্থ-বিত্তের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও উপার্জিত অর্থ থেকে অসহায় মানুষের পাশে মানবিক হয়ে দাঁড়ানোও অবশ্য কর্তব্য। দেশে এখন লাখ লাখ কোটিপতি। অনেকে শত থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক। এই কোটিপতিরা যদি তাদের সম্পদ থেকে অসহায় হয়ে পড়া মানুষকে সহায়তা দেয়া শুরু করে, তাহলে তাদের কষ্টের জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসত। আমরা তা দেখছি না।

চার.
জীবনকে সুশৃঙ্খল ও সঠিকপথে পরিচালিত করার লক্ষ্যেই মানুষ মানবিক গুণাবলী ধারণ করেছে। তা নাহলে, মানুষ সেই আদিম যুগেই পড়ে থাকত, আজকের সভ্যযুগে বসবাস করত না। দুঃখের বিষয়, আমরা যত সভ্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছি, ততই যেন মানবিক গুণাবলি হারিয়ে ফেলছি। করোনা এসে এই মানবিকতায় বড় ধরনে ধাক্কা দিয়েছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা কতটা মানবিকতা ধারণ করতে পারছি। কতটা অন্যের স্বার্থরক্ষা করতে পারছি। তবে আমাদের হতাশ বা নৈরাশ্যবাদী হলে চলবে না। আমাদের চিরকালের মানবিক মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার দিকে তাকাতে হবে। আমাদের এই আচার-আচরণে করোনাভীতি সাময়িকভাবে আস্তরণ ফেললেও তা শেষ হয়ে যায়নি। এখনও মানুষের মধ্যে মানবিকতা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু তা জাগিয়ে তোলা। আমরা আশা করি, সরকার তার সাধ্যমতো যেমন অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে, তেমনি যারা বিত্তবান তারা যাতে অসহায়দের পাশে দাঁড়ায় এ জন্য সরকারকে আহবান জানাতে হবে। কারণ, মানবিকতা দেখানোর সবচেয়ে বড় সুযোগ এটাই। একই সঙ্গে পরিবারের অভিভাবক শ্রেণীকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এ সময়ে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে। সন্তানরা কিভাবে সময় কাটাচ্ছে, কি করছে, সেদিকে তীক্ষè নজর রাখতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোনোভাবেই বিপথে যেতে দেয়া যাবে না। এতে শুধু পরিবারই ধ্বংস হবে না, সমাজ ও রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
[email protected]



 

Show all comments
  • Dadhack ২৮ মে, ২০২১, ১:২৫ পিএম says : 0
    NO Quranic law no peace. We just waste our time to write all these article in the news paper.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মূল্যবোধ


আরও
আরও পড়ুন