মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কয়েক মিলিয়ন নতুন সংক্রমণ নিয়ে ভারত নৃশংস করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গে ভুগছে। মহামারীটি শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় প্রায় ৩ লাখ কোভিড সম্পর্কিত মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করেছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি। ভারতে করোনার ভয়াবহ রূপ যখন বিশে^র সামনে উদ্ঘাটিত হ’ল, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ বিপর্যয় রোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এবং হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে প্রকাশ করার জন্য মোদির তীব্র সমালোচনা করে। সেসব সমালোচনা ঠেকাতে নয়াদিল্লি টুইটারকে মোদি বিরোধী এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কিত টুইটগুলো মুছে ফেলতে বলে।
বিজেপি ক্ষমতসীন হওয়ার পর থেকে ভারতের বিস্তৃত গণমাধ্যম ক্রমশ মোদি সরকারের ধামাধরা হয়ে পড়েছিল। সমালোচনাকারীদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে বিজ্ঞাপনদাতাদের বাধ্য করা থেকে শুরু করে চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দল বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। ফলে, এতদিন বিভিন্ন গণমাধ্যম নিজস্ব বহুমাত্রিক স্বার্থ এবং ভয়ভীতির কারণে মোদির বিরুদ্ধে চুপ করে থাকলেও আন্তার্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে এবং কিছুটা বিবেক তাড়িত হয়ে ভারতের এ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে।
বর্তমানে সাংবাদিকরা কেবল পরিস্থিতির বিয়োগান্তকটিকেই উপস্থাপন করছেন না, সেই সাথে তারা সরকারের কাছ থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্যও লড়াই করছেন, যা এতোদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার সহযোগীরা বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ ও বিচারপতি থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক, এমনকি এক মর্যাদাপূর্ণ মেডিকেল জার্নাল পর্যন্ত সরকারের সমালোচনা করে বলছে যে, দেশের এই ভয়ঙ্কর বিপর্যয় সত্ত্বেও সরকার দলীয় নেতারা বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেয়ে নিজেদের তথাকথিত ভাবমর্যাদা রক্ষার দিকেই বেশি মনোনিবেশ করেছেন। বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ বিক্রিত সংবাদপত্র দৈনিক ভাস্করের জাতীয় সম্পাদক ওম গৌর মোদি প্রশাসনের করোনার তথ্য গোপন করা সম্পর্কেই শুধু লিখেননি, পরিত্যক্ত অনাচ্ছাদিত মৃতদেহগুলোর দায়সারা দাহপর্ব নিয়েও কর্তৃপক্ষেরও সমালোচনা করেছেন। গৌর বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র কর্মকর্তারা গত কয়েকদিনে আমাদের কভারেজটি কয়েকবার বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন এবং এমনকি আদালতের মামলার হুমকি দিয়েছেন।’ সেই প্রথম নিবন্ধের পর থেকে তার প্রত্রিকাটি গঙ্গায় করোনা মৃতদের ভাসিয়ে দেয়া দেহগুলোর গণনা জারি রেখেছে এবং উত্তরবঙ্গ ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের রাজনীতিবিদদের এই সঙ্কটের জন্য দায়বদ্ধ করা অব্যাহত রেখেছে।
এই জাতীয় দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা গত কয়েক বছর ধরে অনেক শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের আদর্শ ছিল না। কিন্তু সারাদেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে করোনা সসংক্রমণ বাড়তে থাকায় পাঠকদের কাছে সরকারের সাজানো বিবরণ বিক্রি করা এবং গণমাধ্যমের প্রতি পাঠকদের শ্রদ্ধা রাখা তাদের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে। তবে, ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১শ’ ৮০ টিদেশের মধ্যে ভারতেকে ১শ’ ৪২ তম দেশকে স্থান দেয়া রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স বলেছে, ‘তাদের কাজটি যথাযথভাবে করার চেষ্টা করার ক্ষেত্রে ভারত সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক দেশ।’
ফ্রি স্পিচ কালেক্টিভের এক বিশ্লেষণ অনুসারে, ‘গত দশকে ভারতে ১৫৪ সাংবাদিককে তাদের পেশাদার কাজের কারণে গ্রেপ্তার, আটক, জিজ্ঞাসাবাদ বা কারণ দর্শানের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাতষট্টিটিই ২০২০ সালে সঙ্ঘটিত হয়েছে।’ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, অনেক ভারতীয় সাংবাদিক সত্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। রাজধানী দিল্লিতে আউটলুক ইন্ডিয়ার ম্যাগাজিনটি গত সপ্তাহে টুইটারে আলোড়ন সৃষ্টি করে, যখন এটি তার নতুন ইস্যুর প্রচ্ছদটি নিখোঁজ ব্যক্তিদের পোস্টারের আকারে স্টাইল করে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করার জন্য ব্যবহার করে।
সিএনএন বিজনেসকে আউটলুকের প্রধান সম্পাদক রুবেন ব্যানার্জি বলেছেন, ‘এটি আমাদের পক্ষে সাহসিকতার কোন কাজ নয়।’ তিনি বলেস, ‘আমরা কেবল বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট করছি। দেশে পরিত্যক্ত অনুভব করার একটি পরিবেশ রয়েছে।’ সূত্র: সিএনএন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।