পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ থাকলেও অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক মানুষ আসছে। এর ফলে করোনার বিপজ্জনক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যবিদরা। তারা মনে করছেন, ভারত থেকে মানুষের আসা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিন করতে না পারলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকানো যাবে না। ইতোমধ্যে সীমান্তের ২৯ জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। এই জেলাগুলোর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মানুষ যাতায়াত করছে। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতে সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা লোকজন। এতে যেকোনো সময় দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। গত কয়েক দিনে ভারত ফেরত বেশ কয়েকজনের দেহে করোনার ভারতীয় ধরণ শনাক্ত হয়েছে। বৈধপথে আসা মানুষের দেহে এই ধরণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অবৈধ পথে আসাদের মধ্যেও এ ধরনের সংক্রমণ থাকতে পারে। বিষয়টি স্বাস্থ্যবিদদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা সীমান্তে আরও কড়াকড়ি আরোপ করে কিছুদিনের জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির পরামর্শ দিয়েছেন।
দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে কোনোভাবেই ছড়াতে না পারে এজন্য গত ২৬ এপ্রিল থেকে সরকার ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধের এ সীমা এখনও বলবৎ রয়েছে। তারপরও দেখা যাচ্ছে, বৈধ-অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ দেশে প্রবেশ করছে। দেশের স্থলবন্ধরগুলো দিয়ে মানুষের প্রবেশের হিসাব রাখা গেলেও অবৈধ পথে কত সংখ্যক মানুষ প্রবেশ করছে, তার কোনো হিসাব নেই। এটিই এখন বড় ধরনের আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাইরোলজিস্টরা ভারতীয় ধরণ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও দেখা যাচ্ছে, তাতে শৈথিল্য রয়েছে। মানুষের দেশে প্রবেশ ও যাতায়াত কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। বৈধ পথে আসা কিছু মানুষকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টেনে নেয়া সম্ভব হলেও অবৈধ পথে আসাদের ব্যাপারে কোনো খোঁজ রাখা হচ্ছে না, তাদের শনাক্তেরও উদ্যোগ নেই। এটাই ভয়ের কারণ হয়ে রয়েছে। অবৈধ পথে আসা ও যাতায়াত করা লোকজন দেশের অভ্যন্তরে অবাধে চলাফেরা করায় ক্রমশ ঝুঁকি বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুতই দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে। তখন তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সম্প্রতি সাতক্ষীরায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনে থাকা ১৩৯ জন ভারতফেরত যাত্রীর মধ্যে ১১ জনের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এ ঘটনা স্বাস্থ্যবিদদের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ এবং যাতায়াতের ব্যাপারে তারা বারবার কঠোরতা অবলম্বনের তাকিদ দিয়ে আসছেন। এমনকি সরকারের করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে কিছুদিনের জন্য রেড অ্যালার্ট জারির পরামর্শ দিয়েছে। ভারতে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঊর্ধ্বমুখী। দেশটিতে প্রতিদিনই গড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যাও দুই লাখের উপরে। ফলে ভারতের দ্বিতীয় ঢেউ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে যদি আছড়ে পড়ে, তবে বাংলাদেশের পক্ষে তা সামাল দেয়া সম্ভব হবে না। আশঙ্কার এ প্রেক্ষিতে, কিছু দিনের জন্য হলেও সীমান্তে মানুষের প্রবেশ এবং যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা জরুরি।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পাশাপাশি নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা সরকার এই সংক্রমণকে ইতোমধ্যে মহামারি বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর সংক্রমণে ইতোমধ্যে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও বাংলাদেশের জন্য নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও যদি দেশে প্রবেশ করে তবে তা হবে মরার উপর খাঁড়ার ঘা। এ বিবেচনায় সীমান্ত কিছুদিনের জন্য পুরোপুরি বন্ধ রাখা অপরিহার্য। দেশে এখন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার নিম্নগামী। অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর তেমন চাপ নেই। এ অবস্থায় নতুন করে বিপজ্জনক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছড়ালে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। করোনার এ চিত্রের মধ্যে দুঃসংবাদ হয়ে রয়েছে, টিকার সংকট এবং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। বলা যায়, বাংলাদেশ বিপৎসীমার মধ্যে রয়েছে। আমরা মনে করি, করোনার চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং উন্নতী বজায় রাখতে হলে, অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিদরা যেসব আশঙ্কা ও পরামর্শ ব্যক্ত করছেন, তা গুরুত্বসহকারে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অনতিবিলম্বে যেমন টিকার ব্যবস্থা করতে হবে, তেমনি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে না ছড়ায় এ দিকে সক্রিয় দৃষ্টি দিতে হবে। এখন প্রধান কাজ হচ্ছে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকানো। এ কাজ করতে হলে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ এবং রেড অ্যালার্ট জারির বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।