মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মন্ত্রী, কলকাতার সাবেক মেয়র ফিরহাদ হাকিমসহ তৃণমূল কংগ্রেসের চার নেতাকে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে। সকালে সিবিআই তাদের বাসভবন থেকে তুলে কলকাতার নিজাম প্যালেসে সিবিআই কার্যালয়ে নেয়া হয়। পরে অনলাইনের মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপণ করা হলে জামিন পান তারা। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। তার প্রতিশোধ নিতেই মোদি সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করছে বলে দাবী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
ফিরহাদ ছাড়া অন্য তিনজন হলেন সাবেক মন্ত্রী, নবনির্বাচিত বিধায়ক ও তৃণমূলের প্রবীণ নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাবেক মন্ত্রী ও নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের মুহূর্তে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় তৃণমূলের তিন নেতা ও আরেক সাবেক নেতার বিরুদ্ধে নারদা অর্থ কেলেঙ্কারি মামলা চালানোর অনুমতি দেন। ফিরহাদ হাকিমকে তার চেতলার বাসভবন থেকে সিবিআই তুলে নেয়ার সময় এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ সময় তিনি বলেন, আদালতেই তিনি মোকাবিলা করবেন। এই চার নেতার মধ্যে নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম। মদন মিত্রকে এবার মন্ত্রী করা হয়নি। আর শোভন চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাই এত দিন পর সিবিআই নারদা মামলা চালানোর অনুমতি পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে গত ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একদল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কের অর্থ গ্রহণের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে দিল্লির নারদনিউজ ডট কম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল। তারা একটি গোপন স্টিং অপারেশন করে বলেছে, তাদের হাতে রয়েছে এ সংক্রান্ত ৫২ ঘণ্টার ফুটেজ। ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ সেই ভিডিও কলকাতায় ফাঁস করে বিজেপি। এই তথ্য ফাঁসের পর বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেন। অন্যদিকে, বিরোধীদলীয় নেতা ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র অবিলম্বে নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি তোলেন। তিনি বলেছিলেন, মানুষের টাকা লুট করেছে তৃণমূল। ওদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।
এই স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর ঘরে ঘরে, হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। এই স্টিং অপারেশনে যাদের বিরুদ্ধে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ আসে, তারা হলেন তৃণমূলের ছয়জন সাংসদ মুকুল রায়, সুলতান আহমেদ, সৌগত রায়, শুভেন্দু অধিকারী, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়; রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সারদা–কাণ্ডে কারাবন্দী সাবেক মন্ত্রী ও বিধায়ক মদন মিত্র, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক ইকবাল আহমেদ এবং সাবেক আইপিএস পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ এম এইচ মির্জা। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ কর্ণ শর্মার ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ফাঁস হয়ে যায়। আর এ ঘটনা নিয়ে রাজ্যজুড়ে ঝড় ওঠে। সেই ঝড় সামাল দেয়ার আগেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঝড়। এ তথ্য ফাঁসের পর তৃণমূল নেতা মুকুল রায় বলেছিলেন, ভোটের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ এক বড় ষড়যন্ত্র। মুকুল রায় এখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও এবারের নবনির্বাচিত বিধায়ক।
এ ঘটনার পর স্টিং অপারেশনের দ্বিতীয় ফুটেজ ২০১৬ সালের ২১ মার্চ ফাঁস হয়। এ ফুটেজও কলকাতায় বিজেপি ফাঁস করে। সে ফুটেজে দেখা যায় তৃণমূলের এক সাংসদ ও এক ছাত্রনেতার ছবি। ওই ছাত্রনেতা হলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি শঙ্কু দেব পান্ডা ও হুগলির আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার। এ ভিডিও ফাঁসের পর সাংসদ অপরূপা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এটি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার এ ফুটেজ কেন্দ্র তদন্ত করুক। দোষী প্রমাণিত হলে এক সপ্তাহের মধ্যে আমি সাংসদ পদ ছেড়ে দেব। তবে সাংসদ অপরূপাকে টাকার বান্ডিল নিতে দেখা যায় স্টিং অপারেশনের ভিডিওতে। দ্বিতীয় এই ভিডিও ফাঁসের পর নারদনিউজ ডট কমের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সেদিন টাকা নেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়েও দিয়েছেন তৃণমূলের দুই সাংসদ সুব্রত বক্সি ও দীনেশ ত্রিবেদী।
তবে তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে, নারদাকাণ্ডে ১৩ জনের নামে অভিযোগ। ২০১৪ সালের ঘটনা এটা। ২০১৬ সালে মামলা হয়। এর পর এখন ২০২১ সাল। এতো দিন লাগছে কেন নারোদকাণ্ডের তদন্তে? কেন এই তদন্তে মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, শঙ্কুদেব পান্ডাকে গ্রেফতার করছে না সিবিআই? তবে কী তারা বিজেপিতে যোগ দিয়ে বেঁচে গেলেন তৃণমূলের অভিযোগের মতো? সিবিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে, পাঁচবার লোকসভার স্পিকারের কাছে আবেদন করেও সাংসদদের বিষয়ে পদক্ষেপ করার জন্য কোনও অনুমোদন পাওয়া যায়নি। প্রথমে লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন ও তার পরে ওম বিড়লার কাছে এই বিষয়ে আবেদন করেও কোনও অনুমতি পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি সিবিআই সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে সেই অর্থে কোনও তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই তাকে গ্রেফতারের প্রশ্ন উঠছে না।
এদিকে রাজ্যের তিন দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, একজন বিধায়ক মদন মিত্র ও সাবেক তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির জন্য বিধানসভার স্পিকারকে কোনও চিঠি দেয়া হয়নি। বিধানসভার স্পিকার নিজে অভিযোগ করে বলেছেন, ‘রাজ্যের মন্ত্রিসভা তখন ভোটের জন্য কার্যকরী না থাকলেও স্পিকার হিসেবে আমি সেই পদে ছিলাম। আমায় কিছু না জানিয়ে রাজ্যপালের কাছে অনুমোদন চাওয়া হলো কেন? রাজ্যপাল কী ভাবে এই অনুমতি দিতে পারেন? এই অনুমতি যেমন বেআইনি তেমনই এই গ্রেফতার করাও বেআইনি।’
এদিকে আইনজীবীরা বলছেন রাজ্যের মন্ত্রিসভা শপথ নেয়ার আগের দিন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরকে দিয়ে রাজ্যের বিধায়ক-সাংসদদের চার্জশিট দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করিয়ে নেয়। তবে কেন ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সকাল বেলা বাড়ি থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে বাড়ি ঘিরে এদের গ্রেফতার করা হলো? এরা সবাই সিবিআইকে তদন্তে সাহায্য করেছেন। কেউ পালিয়ে যাননি। এরা মন্ত্রী-বিধায়ক। তাছাড়া রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এভাবে কেন মন্ত্রী-বিধায়কদের চার্জশিট দেয়ার জন্য গ্রেফতার করা হলো সেটা বোঝা যাচ্ছে না। সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস নাউ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।