Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজেপি-আরএসএসের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অসন্তোষ

ভারত বিধ্বস্ত মোদির কারণে : দ্য ল্যানসেট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২১, ১২:০৩ এএম

দেশকে বাঁচানোর জন্য কিছুই করছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দাবি করেছে প্রখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ‹দ্য ল্যানসেট›। ভারতে করোনা বিপর্যয়ের জন্য মোদিকে দায়ী করে কঠোর সমালোচনা করেছে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। দ্য ল্যানসেটের সম্প্রতি প্রকাশিত সম্পাদকীয়টি পড়ে অনেকেই বলছেন, স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক মঞ্চে এভাবে আর কখনও অপদস্থ হয়নি ভারত।

একেবারে প্রথম অনুচ্ছেদেই ল্যানসেট লিখেছে, ‘ভয়ঙ্কর এই করোনা আবহেও সংক্রমণ ঠেকানোর থেকে সমালোচনার টুইট মুছতে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে মোদি সরকার।’ মোদির কারণেই করোনা বিধ্বস্ত হয়েছে ভারত এমন দাবির পাশাপাশি, দেশবাসীর প্রতি মোদি সরকারের এই মনোভাবকে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলেও মন্তব্য করেছে পত্রিকাটি। এই সঙ্কটমুক্তির উপায় হিসেবে ল্যানসেট বলেছে, ‘মোদির প্রশাসন নিজেদের এই ভুল স্বীকার করে তা শুধরে না নিলে কিছু করার নেই।’
একদিকে দিল্লির কৃষক আন্দোলন, আর অন্য দিকে ৪ রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোট! এর মধ্যেই হরিদ্বারের কুম্ভ মেলায় কয়েক লাখ পুণ্যার্থীর সমাবেশ। এবং তখন থেকে চড়তে শুরু করা দেশটির করোনা গ্রাফের কারণে ভারতের প্রায় সব বিরোধী দল, এমনকি মাদ্রাজ হাইকোর্টও মোদি ও নির্বাচন কমিশনকে অভিযুক্ত করে কাঠগড়ায় তুলেছে। ভারতে দৈনিক সংক্রমণ এখন ৪ লাখেরও বেশি। গত বছর থেকে শুরু করে সরকারি হিসেবে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজারের। ল্যানসেটে বলা হয়েছে, ‘১ অগাস্টের মধ্যে দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছবে। সেক্ষেত্রে এই জাতীয় বিপর্যয় ডেকে আনার দায় নিতে হবে মোদিকেই।’
প্রত্রিকাটি মোদিকে কটাক্ষ করে লিখেছে, ‘মহামারী মোকাবিলার চেয়ে যে তার নজর বেশি ছিল টুইটারে সরকার-বিরোধী মন্তব্য মোছায়! গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করা কিংবা সমালোচকদের বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্রে কিন্তু কোনও অজুহাতই দাঁড়ায় না।’ ল্যানসেট আরও লিখেছে, ‘হাসপাতালে বেড নেই। গণচিতা জ্বলছে শ্মশানে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বিধ্বস্ত। ভারতের এই দুর্যোগ সত্যিই চোখে দেখা যায় না।’
সংক্রমণ হাতের বাইরে চলে যেতে পারে জেনেও কেন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাগমের অনুমতি দেওয়া হল, প্রশ্ন তুলেছে ল্যানসেট। এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘দ্বিতীয় ঝড়ের আভাস থাকা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ভারত সরকার। বরং মার্চে যখন সেই ঝড় আছড়ে পড়েছে, ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তখনও দাবি করতে থাকেন ভারত করোনার বিরুদ্ধে জয়ের পথে! অথচ সেই সময়ের আইসিএমআর-এর সার্ভে দেখিয়েছিল, দেশবাসীর মাত্র ২১ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।’
ল্যানসেটের আরও দাবি, প্রাথমিক সাফল্যের পরে ভারতের কোভিড টাস্ক ফোর্স বহু মাস বৈঠকেই বসেনি। কেন্দ্রের ভ্যাকসিন নীতিও টিকাকরণে শ্লথ গতিরও তীব্র সমালোচনা করেছে তারা। বহু দেশ যেখানে টিকাদান প্রায় সেরে ফেলেছে কিংবা মাঝপথে, ভারতে সেখানে টিকা পেয়েছেন মাত্র ২ শতাংশ!
এদিকে, ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবারের মতো বিজেপি এবং আরএসএসের সিনিয়র কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এবং শীর্ষস্থানীয় নেতারা করোনার তান্ডবের মধ্যে জনগণকে কী জবাব দেবেন বা কীভাবে গদি বাঁচাবেন, সেবিষয়ে আত্মরক্ষামূলক অবস্থান নিয়েছেন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন। এবং এনিয়ে দ্বন্দ¦ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে বিজেপি এবং এর অঙ্গসংগঠন আরএসএস এর অভ্যন্তরে। ভারতের স্বনামধণ্য প্রত্রিকা সানডে এক্সপ্রেস জানিয়েছে, করোনা ঝড় কীভাবে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং এর অঙ্গসংগঠন মতপার্থক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করেছে, তা কিছু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপি ও আরএসএসের বেশ কয়েকজন কর্মীর মন্তব্যে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
আরএসএসের একজন প্রবীণ নেতা করোনা নিয়ে দূরদর্শী না হওয়োর জন্য এবং করোনার দ্বিতীয় ঝড়ের শিকারে পরিণত হওয়ার জন্য কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পিএমওতে অত্যধিক কেন্দ্রীকরণ রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী যে মতামতগুলি পান সেগুলির গুণগত মানে গভীর সমস্যা রয়েছে। প্রধান বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা স্বীকার করেছেন যে তিনি দ্বিতীয় ঝড়টি দেখতে পাননি এবং তারপর তিনি জানিয়েছেন যে তৃতীয় ঝড়ও আসছে।’
মোদির খাস লোকদের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতার প্রশ্নও তুলেছেন দলের কিছু নেতা। আরএসএস নেতা বলেছেন, ‘নেতৃত্বের আশেপাশের লোকদের জন্য কোনও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রয়েছে কিনা আমার সন্দেহ। নাম্বার ওয়ান (প্রধানমন্ত্রী) কে খুশি করার একটি প্রবণতা রয়েছে, তাই সময় মতো তার কাছে নেতিবাচক পরিস্থিতি চিহ্নিত করা হচ্ছে না।’
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পরাজয়ের দিকে আঙ্গুল তুলে কিছু নেতা বলছেন, ‘স্পষ্টতই ৪ ও ১৫ এপ্রিলের মধ্যে রেকর্ডটি বিস্ফোরিত হওয়ার পর কেউ অনুভব করেছে যে, কোভিড মাত্রা দ্রত উর্ধ্বগামী হয়ে উঠছে এবং বাংলায় সমাবেশগুলি এর প্রতিকার নয়। আমরা রাজ্যটির রাজনৈতিক মেজাজ এবং জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ দুটোই ভুলভাবে নিয়েছি।’ সূত্র : দ্য ল্যানসেট, সানডে এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ