Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হওয়া রাজধানীর বুকে এক চিলতে সবুজ বন হয়ে থাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এই গাছ কাটা হচ্ছে, স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পের অধীনে খাবারের দোকান, রেস্তোঁরা ও হাঁটার পথ তৈরি করার জন্য গাছ কাটা হচ্ছে বলে গতকাল বিভিন্ন দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। ঐতিহাসিক এই উদ্যানের পঞ্চাশ বছর বয়সী শতাধিক গাছ ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কত গাছ কাটা হয়েছে তার হিসাব মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। উদ্যানের গাছ কেটে ফেলার প্রতিবাদ করছেন পরিবেশবিদ, নগরবিদ, প্রকৃতিপ্রেমীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে এক আইনজীবী লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছেন। পরিবেশবিদরা বলছেন, যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রকৃতি বাঁচিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, সেখানে আমাদের দেশে গাছ কেটে হাঁটার পথ ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। তারা একে ‘প্রকৃতি হত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। তারা মনে করছেন, স্থাপনা নির্মাণ করা যেতেই পারে, তবে তা প্রকৃতি ধ্বংস করে নয়। বরং প্রকৃতি বাঁচিয়ে কিভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা যায়, সেভাবে নকশা তৈরি করা উচিৎ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্প নির্মিত হওয়া নিয়ে কারো কোনো আপত্তি নেই। তবে এই প্রকল্প নির্মাণ করতে গিয়ে নগরীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিতি সোহওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা কোনোভাবেই উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে প্রকৃতি বাঁচিয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে হবে।

ঢাকা বহু আগেই বসবাসের অনুপযোগী শহর হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। একটি নগরীতে বসবাসের ন্যূনতম যে পরিবেশ থাকা প্রয়োজন, তা ঢাকায় নেই। এটি ইট-পাথরের নগরীতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি হেন কোনো দূষণ নেই যা এতে নেই। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, বর্জ্যদূষণ থেকে শুরু করে সবধরনের দূষণ বিরাজমান। গত কয়েক মাস ধরে বায়ুদূষণের দিক থেকে এটি শীর্ষ স্থানে রয়েছে। যানজট, পানিবদ্ধতা নিত্যকার বিষয়। বায়ুদূষণে যেমন মানুষ বিভিন্ন ধরনের কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তেমনি শব্দদূষণে অনেকে নীরবে বধির হয়ে যাচ্ছে। যানজটে অচল হয়ে থাকা শহরটি একটি বৃহৎ গ্যারেজে পরিণত হয়। এরকম একটি ভয়াবহ নগরীতেই মানুষ বসবাস করছে। এর মধ্যে যতটুকু প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে তা কেটেকুটে সাফ করে কংক্রিটের বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ বিলুপ্তির সাথে সাথে নগরীর তাপমাত্রাও উষ্ণ হয়ে উঠেছে। হিসাব করলে দেখা যাবে, বিশ্বের উষ্ণ নগরী হিসেবেও ঢাকা শীর্ষে রয়েছে। অথচ একটা সময় এই ঢাকাই ছিল বিশ্বের অন্যতম সবুজ প্রাকৃতিক শহর। এর অভ্যন্তরে জলাশয়, লেকসহ অর্ধশতকের বেশি খাল ছিল। ছিল স্নিগ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ। বিশ্বে ঢাকার মতো দ্বিতীয় শহর আরেকটি ছিল না। অথচ অপরিকল্পিত নগরায়ণের কবলে পড়ে এবং সরকারি-বেসরকারি অবৈধ দখলে খালগুলো হারিয়ে গেছে। লেক-জলাশয় সংকুচিত হয়ে পড়েছে। একদশক আগেও ঢাকার সড়কের দুই পাশে সবুজ গাছপালা দেখা যেত। সড়ক প্রশস্তকরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কারণে সেসব এখন হারিয়ে গেছে। প্রধান প্রধান সড়ক এবং রেসিডেন্সিয়াল এলাকার গাছ কেটে ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। সবুজ বলতে কিছু নেই। ঢাকাকে পরিণত করা হয়েছে পাথরের নগরীতে। কংক্রিটের এই নগরীর মাঝেও কোনো রকমে টিকে আছে রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এ দুটি উদ্যান নগরীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত। দেখা যাচ্ছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণের থাবা এ দুটি উদ্যানেও পড়েছে। একসময় যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সবুজ বৃক্ষরাজিতে আচ্ছাদিত থাকত, তা এখন কংক্রিটের স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। উদ্যানের শত শত গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে গ্রীণ সিটি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সড়কের দুই পাশ এবং সড়কের মাঝে সড়ক দ্বীপে গাছপালা লাগানো হয়েছিল। এখন এ উদ্যোগ দেখা যায় না। বরং পুরনো যতটুকু সবুজ প্রকৃতি ছিল, সড়ক সংস্কার ও বিভিন্ন প্রকল্পের নামে তা ধ্বংস করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রকৃতি ধ্বংস করা যত সহজ, তা গড়ে তোলা ততই কঠিন। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে প্রকৃতি দ্রুতই ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।

ঢাকাকে যেভাবে কংক্রিটের নগরীতে পরিণত করা হচ্ছে, তাতে এক সময় সুস্থভাবে বেঁচে থাকার কোনো পরিবেশ থাকবে না। পরিবেশবিদরা মনে করছেন, ঢাকায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে ঢাকাকে ভারমুক্ত করতে হবে। নগরীর মধ্যে খালি জায়গা সৃষ্টি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নগরীকে সবুজ নগরীতে পরিণত করতে হবে। আমরা মনে করি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেভাবে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বরং এর প্রকৃতি সংরক্ষণ করে কিভাবে স্থাপনা গড়ে তোলা যায়, সে পরিকল্পনা করতে হবে। কিছু গাছ কাটা পড়লেও তার পরিবর্তে নতুন করে গাছ লাগাতে হবে। কোনোভাবেই এর পরিবেশে ক্ষত সৃষ্টি করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, একটি গাছ একটি অক্সিজেন ফ্যাক্টরি হিসেবে পরিচিত। উদ্যান বা নগরীর শত শত গাছ কেটে অক্সিজেন সংকট সৃষ্টি বা পরিবেশ বিনষ্ট করা যাবে না। রাজধানীর পরিবেশ রক্ষায় বরং সবুজায়ন কর্মসূচি চালাতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন