পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা শহরে গতকাল ছিল হরতালের আবহ। আর্šÍজেলা বাস বন্ধ রাখা হয়। এমনকি ঢাকা শহরের আশপাশ থেকে এবং রাজধানীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন রুটে যেসব বাস- অন্যান্য যানবাহন নিত্যদিন চলাচল করে সেগুলো দেখা যায়নি। রাজধানীর পথে পরিবহনের দেখা নেই; তারপরও রাস্তায় নেমেছিল মানুষের ঢল। পায়ে হেটেই মানুষ হাজির হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশে। সব পথ যেন মিশে যায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বেগম জিয়ার সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হলেও গুলিস্তান, পল্টন, মৎসভবন, শাহবাগ, টিএসসি, কাকরাইল, বাংলা একাডেমী হয়ে পড়ে লোকে লোকারণ্য।
সমাবেশের অনুমতি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। অতপর ২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি মেলে। সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া ভাষণ শোনার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দুদিন আগ থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত সমাবেশে যোগ দিতে নানা রঙ-বেরঙের সাজে উপস্থিত হন নেতাকর্মীরা। শুধু নেতাকর্মীই নয়; সাধারণ মানুষের অনেকেই বেগম জিয়া কি বলেন এবং সমাবেশে কত মানুষ হয় তা স্বচক্ষে দেখার জন্য হাজিন হন সমাবেশ স্থলে। ঢাকার ফুটপাতে হকারি করেন এমন অনেকেই দোকান না খুলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান জনসমাবেশে। কিন্তু মঞ্চের কাছাকাছি যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি হাজার হাজার নেতাকর্মীর। তারা মঞ্চ থেকে ৫শ গজ, কেউ বা এক হাজার গজ দূরে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শোনেন। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই সমাবেশের কার্যক্রম সকাল ১০টায় শুরু হয়। তবে মূল আয়োজন শুরু দুপুর ২টার পর কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। প্রায় অর্ধশতাকিক নেতা বক্তৃতা করেন ঐতিহাসিক এই মাঠের সমাবেশে। কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগ নেতাদের আহবান জানিয়ে বলেন, দেখে যান লাখ লাখ মানুষ কিভাবে সমাবেশে হাজির হয়েছেন। গাড়ি-বাস বন্ধ করেও মানুষকে আটকে রাখা যায়নি।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূলত দুপুর ১২টার পর থেকেই রাজধানীর চারদিক থেকে মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেউ মাথায় নিজ নিজ সংগঠনের ফিতা, কেউবা ক্যাপ নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে আসেন। ব্যানার-প্লাকার্ড ফেন্টুন ছিল সবার হাতে। ঢাকা ও আশপাশের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ সমর্থনদের নিয়ে যেমন সমাবেশে হাজির হন; তেমনি রাজধানীর বিভিন্ন থাকা ও ওয়ার্ডের নেতারা নিজেদের সমর্থন প্রদর্শনের জন্য হাজার হাজার কর্মীর মিছিল নিয়ে হাজির হন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে লোকজনের সমাগম। সমাবেশকে ঘিরে শাহবাগ, কাকরাইল, খামারবাড়ি, টিএসসি মোড়, মৎস্য ভবন, দোয়েল চত্বর, পলাশী এলাকা দিয়ে দলে দলে মিছিল নিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। দুপুরের মধ্যে কানায় কানায় ভরে উঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। প্রায় দুই বছর পর প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১২টার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মঞ্চে হাজির হন। এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থানের নির্দেশনা দেন। সফলভাবে সমাবেশ সম্পন্ন করতে সমাবেশস্থলের মাঝখানে ছাত্রদল, ডানপাশে যুবদল ও বামপাশে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। মহিলা নেতাকর্মীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা হয়। সমাবেশস্থলে মহিলা দলের নেতাকর্মীদের ভেতর যেন কোনো পুরুষ নেতাকর্মী প্রবেশ না করেন তিনি সেই অনুরোধও করেন।
১০ বছরের শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত এসেছিলেন বেগম জিয়ার বক্তৃতা শোনার জন্য। স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারেন না এমন এক বৃদ্ধ নাতির সঙ্গে এসেছেন ক্রাচে ভর দিয়ে বিএনরি সমাবেশে। তিনি জানান, দূর থেকে বেগম জিয়াকে এক নজর দেখার জন্যই তিনি মূলত এসেছেন। অনেক নেতাকে দেখা গেল কর্মীদের নিয়ে মঞ্চে সামনে সেলফি তুলছেন। সমাবেশে আসার দৃশ্য ধারণ করে রাখতে এই প্রচেষ্টা। কেউ বা দলবদ্ধ হয়ে গল্প করছেন। সবার প্রত্যাশা বেগম জিয়া দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। তবে সবার দৃষ্টি কেড়েছে আবু সাঈদ নামের এক কর্মী। ৬৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ পেশায় সাইকেল মেকানিক। হাতে বাঁশের লাঠির উপরে শুকনো ধানের কয়েকটি ছড়ি শক্ত করে বেঁধে মঞ্চের এদিক সেদিক ছুটছেন। কৌতুহলী মানুষটিকে ঘিরে কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা সেলফি তুলছেন। জানা গেলো সিরাজগঞ্জের আবু সাঈদ বিএনপি করেন। বলছেন, ‘জিয়া, খালেদা, তারেক জিয়াকে ভালোবাসি। খালেদা জিয়ার সমাবেশ হবে তাই সব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ঢাকায় চলে এসেছি।’ সাঈদ জানায় শনিবার বাসে করে সিরাজগঞ্জ থেকে গাবতলী আসেন। ভোর রাতে গাবতলী নেমে চা টোস্ট খেয়ে দিনের আলোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সকালে পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাজির হন। গাবতলী থেকে পায়ে হেঁটে আসলেন কেন সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকা নেই তাই হেঁটে এসেছি’। জানালেন সমাবেশে আসার জন্য কেউ তাকে টাকা পয়সা দেয়নি। বিএনপির প্রতি একান্ত ভালবাসা থেকেই মনের টানে সমাবেশে এসেছেন। কেন কষ্ট করে আলেন জানাতে চাইলে বলেন, বিএনপিকে ভালোবাসি। বিএনপি থাকলে শান্তিতে থাকতে পারি। আওয়ামী লীগের জুলুম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে আবু সাঈদ বলেন, এখন গ্রামের মানুষ ঘুমাতে পারেনা পুলিশের ভয়ে। ছাত্রলীগ যুবলীগের যন্ত্রণায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ট। তিনি আরও জানালেন, কোথাও বিএনপির সমাবেশ হবে শুনলে চলে যান তিনি। এর আগে বগুড়ায়, রাজশাহী ও পাবনায় সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
বিএনপির এ সমাবেশে লোকসমাগম যাতে না হয় সে জন্য রাজধানীর বিভিন্ন রুটে যান চলাচল বন্ধ ছিল। আবার কোনো কোনো রুটে যান চলাচল ছিল সীমিত। বিশেষ করে শাহবাগ, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন, গুলিস্তান, মিরপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, ফার্মগেইটসহ বেশ কয়েকটি সড়কে গণপরিবহনের দেখাই পাওয়া যায়নি। গুটিকয়েক রিকশা ও প্রাইভেট কার ছাড়া আর কোনো যানবাহন চোখে পড়েনি। তারপরও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে ছিল মানুষের শ্রোত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।