মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যপূরণ হল না। বাংলার ভোটে কার্যত বিপর্যয় হয়েছে বিজেপির। অথচ, ক’দিন আগে পর্যন্তও আত্মবিশ্বাসের সুরে মোদি-শাহরা বলেছিলেন, ‘বাংলায় নতুন সরকার আসছে’। কিন্তু, এভাবে যে মোদি-শাহ ম্যাজিক ধরা খাবে, বিজেপির স্বপ্নভঙ্গ হবে, তা বোধহয় আঁচ করতেই পারেননি দিল্লির বিজেপি নেতারা। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এতটাই আশাবাদী ছিলেন যে, দেশের করোনা প্রকোপ তোয়াক্কা না করে বারবার হানা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। ‘আর একটু কষ্ট করলে হয়েই যেত’ ভেবে পরে যেন পস্তাতে না হয় সেজন্য কোন কসুর করেননি পুরো বাংলা চষে ফিরতে।
বিশ্লেষকরা পর্যন্ত বিভ্রান্তিতে পড়ে যান মোদি-শাহদের বাংলায় হানা দেয়াতে। তাদের ধারণা হতে থাকে যে, নিশ্চয় গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই বারবার পশ্চিমবঙ্গ মুখো হচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু সব তথ্য, আঁচ-অনুমান বা মোদি-শাহ ম্যাজিক ফিকে করে নিজের মেয়ের ওপরই আস্থা রাখল বাংলার জনগণ। বর্গীদের তাদের এলাকায় ঢোকা অন্তত এবারের জন্য রুখে দিল। কেন এমন ভরাডুবি হল, এই নিয়ে এবার সরব হলেন অমিত শাহ। বাংলার ভোটে দলের ভরাডুবির কারণ জানতে চেয়েছেন অমিত শাহ, এমনটাই জানালেন রাজ্য বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।
‘হয়তো বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পছন্দ করেন’, কার্যত হার স্বীকার করে এমন কথাই বলেছেন কৈলাশ। যদিও এদিন দিনের শুরুতে কৈলাশের গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গিয়েছিল। কৈলাশ বলেছিলেন, ‘বিজেপি ম্যাজিক সংখ্যা পার করবে’।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে মোট ২২টি জনসভা করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। কিন্তু রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শেষ দু’টি সফর বাতিল হয়। এর পরেও তিনি একদিনে ৪টি সমাবেশ করবেন ঠিক করেছিলেন। কিন্তু শেষে তাও বাতিল করে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন তিনি। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, সিউড়ি ও দক্ষিণ কলকাতার সমাবেশ বাতিল হলেও বাংলার জন্য অনেকটাই সময় দিয়েছেন মোদি। সেই সঙ্গে অমিত শাহ, জে পি নড্ডা, যোগী আদিত্যনাথরা মিলেও শ’খানেক সভা বা রোড-শো করে ফেলেছেন।
কিন্তু মোদি যেখানে যেখানে এলেন, সেখানে বিজেপি কেমন ফল করল? উত্তর খুঁজতে গিয়ে যা দেখা যাচ্ছে তাতে সেই ফল মোটেও স্বস্তির নয় মোদির কাছে। নীলবাড়ির লড়াইয়ে মোদির প্রচার পর্ব শুরু হয়ে যায় ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের অনেক আগেই। তার প্রথম সভাটি ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি হলদিয়ায়। সেদিন মূলত সরকারি কর্মসূচিতে এসেছিলেন তিনি। একগুচ্ছ প্রকল্প সূচনার পাশাপাশি একেবারে শেষ মুহূর্তে ঠিক হয় তিনি একটি দলীয় কর্মসূচিতেও যোগ দেবেন। সেই মতোই পাশাপাশি দু’টি মঞ্চে দলীয় ও সরকারি সভা হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে ২৪ মার্চ আরও একটি সভা করেন মোদি। হলদিয়া আসনে বিজেপি জয় পেলেও জেলার বাকি আসনে আশাপূরণ হয়নি। কাঁথি উত্তর ও দক্ষিণ দুই আসনেই পরাজিত বিজেপি। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীকে অল্পের জন্য জেতাতে পারেন মোদি।
এর পরে ওই মাসেরই ২২ তারিখ হুগলির সাহাগঞ্জে সভা ছিল মোদির। হুগলিতে রীতিমতো খারাপ ফল বিজেপির। অধিকাংশ আসনে হার শুধু নয়, মোদি যেখানে সভা করেছিলেন সেই আসনে সাংসদ লকটে চট্টোপাধ্যায় পরাজিত। ওই সমাবেশ মূলত ছিল হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা আসনগুলির জন্য। যার সবকটিতেই পরাজিত বিজেপি।
মার্চ মাসে মোট ৫টি বাংলা সফর ছিল মোদির। শুরু ৭ মার্চ কলকাতার ব্রিগেডে সমাবেশে। এর পরে আর কলকাতায় আসেননি মোদি। তবে একের পর এক সভায় প্রায় গোটা রাজ্যে প্রচার চালিয়েছেন। ১৮ মার্চ পুরুলিয়ায়, ২০ মার্চ খড়্গপুরে, ২১ মার্চ বাঁকুড়ায়। কলকাতায় অনেক আশা করেও বলা যায় দাগ কাটতেই পারেনি গেরুয়াশিবির। আর গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এগিয়ে থাকা পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় বিজেপির ফল খুবই খারাপ। আর মোদির সভাস্থল বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া আসনে জয়ী তৃণমূল। তবে মোদির সমাবেশ করা খড়্গপুর সদর আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরের সার্বিক ফল বলছে তৃণমূল অনেক এগিয়ে।
দ্বিতীয় দফার দিনে ১ এপ্রিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর সভা করেন মোদি। কিন্তু এই জেলায় সে ভাবে দাগই কাটতে পারেনি বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই জেলায় কোনও আসনেই এগিয়ে ছিল না বিজেপি। তৃণমূলের গড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জোড়াফুলের দখলেই রয়ে গেল। হাওড়া জেলায় দু’টি সভা করেন মোদি একটি উলুবেড়িয়ায় ও অপরটি ডুমুরজলায়। রবিবার ফল বলছে উলুবেড়িয়া উত্তর ও দক্ষিণ দুই আসনেই জয়ী তৃণমূল। এই জেলায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে আসা প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে অনেক ভরসা ছিল গেরুয়াশিবিরের। কিন্তু তিনিও ডোমজুড় আসনে পরাজিত।
বরং সফল বলা যেতে পারে শিলিগুড়ি, কোচবিহারে হওয়া মোদির সভা। শিলিগুড়ি-সহ দার্জিলিং জেলায় সব আসনেই জয় পেয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে কোচবিহার উত্তরে জিতলেও দক্ষিণে পরাজিত বিজেপি। আর জেলায় ৯ আসনের মধ্যে বিজেপি জয় পেয়েছে ৬ আসনে। নদিয়ার কৃষ্ণনগরেও সভা করেছেন মোদি। কৃষ্ণনগর উত্তরে মুকুল রায় জিতলেও বিজেপি হেরেছে দক্ষিণ আসনটি। এই জেলার কল্যাণীতেও সভা করেছেন মোদি। নদিয়ায় খুব ভাল ফলের আশা করা বিজেপি শেষ পর্যন্ত ১৭-র মধ্যে পেয়েছে ৮।
এ ছাড়াও মোদি সভা করেছেন পশ্চিম বর্ধমানে আসানসোলের কাছে তালিত ও উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে। আসানসোল দক্ষিণে বিজেপি জিতলেও হেরেছে উত্তরে। আর বারাসতেও পরাজিত বিজেপি। সূত্র : আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।