পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বলা হয়, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় সবচেয়ে কূটিল ও জটিল এবং নানাবিধ জটিলতার কারণেই জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। জমিজমার মামলা অত্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। কয়েক পুরুষ পর্যন্ত মামলা চলার নজির রয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়াদি সহজ করে মানুষের হয়রানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর তাকিদ উচ্চারিত হচ্ছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ-পদক্ষেপের অভাবে সমস্যা আগে যেমন ছিল, এখনো প্রায় তেমনই রয়েছে। জমিজমার রেকর্ডপত্রসহ যাবতীয় তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সাম্প্রতিককালে। এখানেও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, দেশে এখনো এসএ, সিএস ও আরএস রেকর্ডের সংশোধনীর কাজ শেষ হয়নি। সংশোধনের লাখ লাখ মামলা এখনো ঝুলে আছে আদালতে। কবে এসব মামলার নিষ্পত্তি হবে, কেউ বলতে পারে না। এদিকে বিআরএস এবং মহানগর জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত এই জরিপের ফলাফল যতটুকু প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেও রয়েছে বিস্তর ভুল। এসব ভুলের সংশোধন কবে হবে কে জানে! সবমিলে একটা হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে এক্ষেত্রে। জরিপে দুর্নীতি হয়, যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। দুর্বলের জমি চলে যায় সবলের কবলে। কারো জমি চলে যায় খাস খতিয়ানে। সরকারি জমি ব্যক্তির নামে, এমন কি সার্ভেয়ার বা ভূমি অফিসের লোকদের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। অনিয়ম-দুর্নীতিই যে এসবের প্রধান কারণ, তা বলাই বাহুল্য। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে যা বলেছেন তার মর্মার্থ হলো, ভূমি জরিপ যে জায়গায় যায় সেখানে কিছু লোক কোটিপতি হয়ে যায়। জরিপের সঙ্গে দুর্নীতি যে হাত ধরাধরি করে চলে সেটা তার একথা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, সিএস, আরএস-এর যুগ শেষ হতে চলেছে। এখন চলছে বিআরএস ও মহানগর জরিপ। সিএসও-আরএস জরিপে অসংখ্য ভুল ছিল, যার সংশোধন এখনো শেষ হয়নি। হাজার হাজার মানুষ এজন্য হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এখনো। বিআরএস ও মহানগর জরিপে একই ধরনের ভুল হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও দেখা যাচ্ছে, ১৯টি জেলার বিআরএস জরিপে লাখ লাখ মানুষের পৈত্রিক জমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত হয়েছে। অনেকের জমি কম থাকলেও বেশি দেখানো হয়েছে। আবার অনেকের ব্যক্তিগত জমিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর তৈরি করে দিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সার্ভেয়ারদের ঘুষ দেওয়া না দেওয়ার কারণে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি, ভুল ও বিচ্যুতি হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন কী না করতে পারে! দিনকে রাত আর রাতকে দিন করা তার বাম হাতের খেলা। ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসাবে ঘর করে দেয়া হচ্ছে। এই ঘর হওয়ার কথা খাস জমিতে। কিন্তু তা না হয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়েছে ব্যক্তি মালিকানার জমিতে। বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় এনিয়ে মামলা হয়েছে। শুধু কি তাই? ইউএনও-অফিসের এক কর্মচারীর ধনী আত্মীয়-স্বজনের জমিতেও উপহারের ঘর উঠেছে বলে এক খবরে প্রকাশ। বরগুনার আমতলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটরের দৌলতে তার গ্রামে ১৪ জন ধনী আত্মীয় উপহারের ঘর পেয়েছে। এখানে একাধিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। প্রথমত : খাস জমিতে ঘর হওয়ার কথা, যা হয়নি। দ্বিতীয়ত : ঘর ভূমিহীনদের পাওয়ার কথা। তারা তা না পেয়ে পেয়েছে ভূমিওয়ালা ও ধনী লোকেরা। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে যারা এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে পারে, তারা সবকিছুই করতে পারে। সার্ভেয়ারের মতো সামান্য কর্মচারী ও একজনের জমি অন্য জনের নামে ব্যক্তি মালিকানার জমি খাস খতিয়ানে এবং খাস খতিয়ানের জমি ব্যক্তি মালিকানায় তুলে দিতে পারে। তাদের বিচার হয়না। রেকর্ড সংশোধনের জন্য ডিসি অফিস ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে ধরনা দিতে দিতে ভুক্তভোগীদের হয়রানির শেষ হয় না।
আগের এসএ, সিএস ও আরএস রেকর্ডের ভ্রান্তি মোচন হতে হবে। একই সঙ্গে বিআরএস ও মহানগর জরিপের ভুল-ভ্রান্তি অপনোদন করতে হবে। এসব ‘ভুল-ভ্রান্তি-বিচ্যুতি’ যাদের কারণে হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ অনিয়ম-দুনীতি, অপকর্ম ও অপরাধ না করতে পারে সেজন্যই কঠোর শাস্তি আবশ্যক। সরকার গোটা ভূমিব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করতে চায়। এটা করতে হলে ভূমির নির্ভুল তথ্য নিশ্চিত করা অপরিহার্য। যতদিন সেটা না হচ্ছে ততদিন ভূমিব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করা সম্ভব নয়। করলেও তা থেকে কাঙ্খিত সুফল চয়ন করা সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যে ডিজিটাল জরিপও শুরু হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালিত হওয়ায় জমির প্রকৃত পরিমানগত তথ্য পাওয়া যাবে বটে, তবে ভূমিবিরোধ তাতে নিবারিত হবে না। এই বিরোধ মেটাতে হলে যেসব রেকর্ড সংশোধনের মামলা রয়েছে, সেসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। রেকর্ড সংশোধনের মামলা সম্পর্কে হয়রানির যে অভিযোগ রয়েছে, লাখ লাখ মামলা ফয়সালার অপেক্ষায় থাকা সে অভিযোগেরই প্রমাণ বহন করে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিৎ রেকর্ড সংশোধনের মামলার দিকে। এই মামলার জটিলতা শেষ হলে ডিজিটাল ভূমিব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কাজ তরান্বিত হবে। মানুষের দুর্ভোগ ও হয়রানি কমবে, মামলা-মোকদ্দমা কমবে, সামাজিক বিরোধ-বিসংবাদও কমবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।