Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভূমি জরিপে মন্থর গতি

প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭ বছর লাগবে ব্যক্তিমালিকানা জমি খাস খতিয়ানে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে সীমাহীন হয়রানি-দুর্নীতি। ব্রিটিশ আমলের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইনের মারপ্যাঁচের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জমি কেনাবেচায় জালিয়াতি, মালিকানা-সংক্রান্ত বিরোধ, দালালচক্রের দাপট, নিবন্ধনে হয়রানি, অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে জটিলতা, বেদখল হওয়া ব্যক্তিমালিকানা জমি খাসভুক্ত, সহকারী ভূমি কমিশনের নিষ্ক্রিয়তাসহ মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। এরপর শুরু হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায় জরিপ কাজ। যাদের ব্যক্তিমালিকানা জমি জরিপের সময় খাস খতিয়ানে দেখানো হয়েছে তারা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন, মামলা করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তা সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। গতি নেই বাংলাদেশ ভূমি জরিপ প্রকল্পে। ফলে তিন বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে লাগবে ৭ বছর। গত তিন বছরের প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, যা মূল অনুমোদিত ব্যয়ের ১৫.৭৬ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে। ‘বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে বিরাজ করছে এই চিত্র। প্রকল্পের প্রথম সংশোধন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর। এই প্রস্তাবের ওপর গত ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটি এখনও আমার হাতে আসেনি। প্রকল্পটির গভীরে গিয়ে ধীর গতির কারণ খুঁজে দেখা উচিত। শুধু ভাসা ভাসাভাবে দেখে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া ঠিক নয়।

জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে সরকারের অবহেলা-উদাসীনতার কারণে ভূমি ব্যবস্থাপনায় সঙ্কট দূর হচ্ছে না। ভূমির অপরিকল্পিত ব্যবহারে আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। ডিজিটালাইজড এ পদ্ধতি চালু হলে ভূমি জরিপ ও মালিকানা-সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি, জমি কেনাবেচা নিয়ে জাল-জালিয়াতি বন্ধ, পর্চা- মৌজার নকশা সংগ্রহে হয়রানি বন্ধ, ব্যক্তিমালিকানা জমি খাসভুক্ত আবার খাসজমি উদ্ধার, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ও বিক্রয় কাবলা, বায়নাপত্র, চুক্তিপত্র, বণ্টননামা, অংশনামা, ফ্ল্যাট বাড়ি বিক্রয়-সংক্রান্ত রেজিস্ট্রেশনে ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ হবে। এতে ভূমি ব্যবস্থাপনার সুফল পৌঁছবে সাধারণ মানুষের ঘরে। ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২১ জেলার ১৫২টি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪০টি জেলায় ল্যান্ড জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ কার্যক্রম সফল করতে কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ করা হয়েছে।

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়, আধুনিক বিশ্বে ভূমি ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ভূমি ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। কিন্তু ভূমি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তিসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন থাকলেও ভূমি জরিপ শিক্ষায় এসব প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও এ বিষয়ে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদার জন্য ভূমি ও অন্য জরিপ শিক্ষায় দক্ষ জনবল তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে হাতে নেয়। ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৮ সালের জুলাই থেকে গত বছরের জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল একনেকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। এরপর আইএমইডি সুপারিশে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় প্রথমবার প্রকল্পটির আন্তঃখাত ব্যয় সমন্বয় করা হয়। এ পর্যায়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পে কিছু নতুন টেকনোলজি অন্তর্ভুক্তি, পিডবিøউডির রেট সিডিউল পরিবর্তন, কিছু অঙ্গের ব্যয় হ্রাস বা বৃদ্ধি এবং কোভিড-১৯ মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নি¤œ অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে প্রকল্পের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় অবশিষ্ট কার্যক্রম শেষ করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় মোট ৩৬০ কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

এছাড়া ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২৫ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। গত জুনে প্রস্তাবটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পটির গত ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতিসহ বাস্তব অগ্রগতির হালনাগাদ চিত্র উপস্থাপন করা হয়। কিছু খাতে অনুমোদন বহিভূর্ত ব্যয়, নির্মাণাধীন কয়েকটি ভবনের জন্য অনুমোদিত প্রকল্পের অতিরিক্ত অর্থের চাহিদা, কয়েকটি নতুন অঙ্গের প্রস্তাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। তাই আলোচনা শেষে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পাশাপাশি নতুন অঙ্গগুলোর প্রয়োজনীয়তাসহ সকল অঙ্গের পরিমাণ বা সংখ্যা ও ব্যয় বৃদ্ধির পুনরায় যাচাই করে প্রতিবেদন প্রণয়ন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর জন্য আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধানকে আহŸায়ক করে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সমন্বয় একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

গত ৪ জুলাই পুনরায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কিছু সিদ্ধন্তের পাশাপাশি এই প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত নতুন এবং যেসব অঙ্গের কার্যাদেশ এখনও দেয়া হয়নি সেসব নির্মাণ ও পূর্তকাজ পিডবিøউডির রেট সিডিউল ২০২২ অনুযায়ী শেষ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পুনর্গঠিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রাপ্তি সাপেক্ষ পুনরায় পিইসি সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে জন্য প্রকল্পটির নির্মাণ ও পূর্তকাজের ব্যয় প্রাক্কলন রেট সিডিউল ২০২২ অনুযায়ী নির্ধারণ করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৮০ কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা মূল অনুমোদিত ব্যয় অপেক্ষা ১০১ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার (৩৬.৩৯ শতাংশ) টাকা বেশি। প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, পিডবিøউডির রেট সিডিউল পরিবর্তন, নির্মাণ ও পূর্তকাজের জন্য পিডবিøউডির রেট সিডিউল ২০১৪ ও ২০১৮-এর পরিবর্তে রেট সিডিউল ২০২২ এর অন্তর্ভুক্তির কারণে সংশোধন করতে হচ্ছে। অনুমোদিত ৪টি টেকনোলজির পরিবর্তে নতুন করে ৫টি যুগোপযোগী টেকনোলজি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বেশ কিছু নতুন বিষয় এতে যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, মাল্টিপারপাস ভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ডরমেটরি, ছাত্রীনিবাস, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, বাউন্ডারি ওয়াল, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, স্টাফ কোয়ার্টার ইত্যাদি খাতে ব্যয় বেড়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ বা ক্রয়, ভূমি উন্নয়ন, ওয়ার্কশপ ভবন, অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়ন, পরামর্শক ব্যয় (ইইডি), ওভারহেড ট্যাংক, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে বলায়, প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম বিলম্বে শুরু হওয়ায় এবং কোভিড-১৯ মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তাই কর্যক্রম শেষ করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বলেন এখন কথা সময় নেই বলে ফোন কেটে দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ