Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন অবিলম্বে সরাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

আবারও পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আরমানিটোলার একটি ছয় তালা ভবনের নিচ তালায় থাকা রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকান্ডে ৪ জনের মৃত্যু এবং ২০ জন অগ্নিদগ্ধ ও আহত হয়েছে। ভবনটি আবাসিক হলেও এর নিচ তালায় রাসায়নিক গুদাম ভাড়া দেয়া হয় বলে জানা যায়। বাকি তালায় আবাসিক ফ্ল্যাট। পুরান ঢাকার অধিকাংশ আবাসিক বাড়ির নিচ তালায় রাসায়নিক গুদাম ভাড়া দেয়া হয় বলে ভাড়াটিয়ারা জানিয়েছেন। বাড়িওয়ালারা অধিক ভাড়া পাওয়ার লোভে এসব গুদাম ভাড়া দেয়। এর ফলে উপরের ফ্ল্যাটগুলোতে যেসব ভাড়াটিয়া থাকে, তারা অনেকটা বিস্ফোরকের ডিপোর উপর বসবাস করে বিস্ফোরণের আশঙ্কা নিয়ে তাদের দিন কাটাতে হয়। গত শুক্রবার রাতে এমনই এক ট্র্যাজিক ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে নিমতলি ট্র্যাজেডিতে ১২৪ জনের পুড়ে মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় আরেক ট্র্যাজেডিতে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া প্রায়ই ছোট-খাটো দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন এবং পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন-কারখানা সরানোর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই তা থেমে যায়। ফলে পুরান ঢাকা এক ভয়ংকর অনিরাপদ এলাকা হয়ে রয়েছে।

নিমতলী ট্র্যাজেডির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানা স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেখা যাচ্ছে, প্রায় এক যুগেও এই স্থানান্তর কাজ শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমীক্ষা, স্থান নির্বাচন ইত্যাদি করতে করতেই কালক্ষেপণ করে চলেছে। বিষয়টি করব, করছির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। এই ঢিলেমির মধ্যেই চুড়িহাট্টা এবং সর্বশেষ আরমানিটোলার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। চুড়িহাট্টার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন এবং কেমিক্যাল গোডাউন-কারখানা সরিয়ে নেয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। পরবর্তীতে এ নিয়ে আর তেমন কোনো খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি। বছরের পর বছর ধরে রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা সরাতে নতুন নতুন কমিটি গঠন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, নতুন করে নানা তথ্য সংগ্রহের মতো ধীর প্রক্রিয়ার মধ্যেই পুরো কার্যক্রম সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। বর্তমানে পুরান ঢাকায় প্রায় দুই হাজার রাসায়নিক গুদাম, কারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এগুলোর অধিকাংশই লাইসেন্স ছাড়া এবং ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এটা কল্পনাও করা যায় না, রাসায়নিকের মতো অতি দাহ্য ও ভয়াবহ বিস্ফোরক পদার্থের ব্যবসা লাইসেন্স এবং বিশেষায়িত কোনো এলাকা বা ব্যবস্থা ছাড়া বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। বিশ্বের কোনো দেশে এমন অনিয়ম আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। একেকটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটছে, আর মানুষের মৃত্যু ও পরিবার নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। একটি ট্র্যাজিক ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়ে বড় বড় বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া শুরু করে। তারপর তা ধীরে ধীরে থেমে যায়। যেন আরেকটি ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত তাদের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গে না। চুড়িহাট্টার ঘটনার পর কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন সরিয়ে নেয়ার জন্য মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। দুই বছর অতিবাহিত হলেও প্রকল্পটি কারখানা স্থানান্তরের উপযোগী হয়নি। আরও দুই বছর লাগবে বলে বলা হচ্ছে। এই প্রকল্প চালু হলেও সেখানে মাত্র ৬০০ কারখানা স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। বাকি কারখানা কোথায় স্থানান্তর হবে, তার কোনো ঠিকঠিকানা নাই।

পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন সরিয়ে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বহু তাকিদ দিয়েছি। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তাতে কোনো ফল লাভ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বিভিন্ন উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও সেগুলো কেবল সভা ও সেমিনার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে আটকে রয়েছে। এভাবে বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন সংখ্যাও বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শঙ্কা। বাড়িওয়ালারা বাড়ি করেই বেশি ভাড়ার আশায় নিচ তালা যেন কেমিক্যালের গোডাউনের জন্যই রেখে দেয়। পরান ঢাকায় এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কেমিক্যালের কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানা ও গোডাউন নেই। সঙ্গত কারণেই আমরা বলব, জান-মালের জন্য ভয়ংকর পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। সরকারি ব্যবস্থার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে যাতে এগুলো স্থানান্তর করা যায়, এ উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো বাড়িওয়ালা যাতে নিচ তালা কেমিক্যাল কারখানা বা গোডাউন ভাড়া দিতে না পারে, এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করতে হবে। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেসব ব্যবসায়ী বিনা লাইসেন্সে প্রাণঘাতী কেমিক্যালের ব্যবসা করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেমিক্যাল

২১ ডিসেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন