পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একের পর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ দুর্ঘটনা এমনই যে, পরিবার পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একটি পরিবারের সকল সদস্যের মৃত্যু হচ্ছে। গত ১৬ মার্চ রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের কাপাশিয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে থাকা ১৭ জনই নিহত হয়। এর মধ্যে এক পরিবারের নারী-শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়। পুরো পরিবারটি মুহূর্তে বিলীন হয়ে যায়। এমন হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার কথা শুনে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। পরিবারটির আত্মীয়-স্বজনদের কাছে তা কতটা ভয়াবহ ও হৃদয়ছেঁড়া তা কেবল তারাই জানেন। বিগত কয়েক মাসে দুর্ঘটনায় এমন বেশ কয়েকটি পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য নিহত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের একজন ব্যক্তির নিহত হওয়া যে বেদনার, একসঙ্গে পুরো পরিবারের সদস্য নিহত হওয়ার বেদনা কি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এ বছর চার মাসে কতটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং মানুষ আহত-নিহত হয়েছে, তার পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, গত মার্চ মাসে সারাদেশে ৪০৯টি দুর্ঘটনায় ৫১৩ জন নিহত ও ৫৯৮ জন আহত হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬ হাজার ৬৮৬ জন। আহত হয়েছে ৮ হাজার ৬০০ জন। সারাদেশে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৭৩৫টি। গত বছর লকডাউন সত্তেও এত দুর্ঘটনা ঘটেছে। লকডাউন না থাকলে আরও কত দুর্ঘটনা ঘটত তা ধারণা করা যায় না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতি মাসে নিহত হয়েছে ৫৫৭ জন এবং আহত হয়েছে ৩৯৪ জনের বেশি। এসব দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের বেশিরভাগই কর্মজীবী। বলা যায়, একটি পরিবারের চালিকাশক্তি। এই চালিকাশক্তি যখন নিহত কিংবা পঙ্গু হয়ে যায় তখন পরিবারটির কি দশা হয়, তা কেবল ঐ পরিবারই জানে। আমরা কেউই ঐ পরিবারের খোঁজ-খবর নেই না। সরকারও নেয় না। তাহলে এর দায় কে নেবে? প্রথমত, এর দায় দুর্ঘটনা ঘটার কারণ। দ্বিতীয়ত দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের অভাব। দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে শীর্ষে গাড়িচালক। তাদের বেপরোয়া আচরণ এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতায় এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ সময় যাত্রী আহত-নিহত হলেও কিভাবে যেন চালক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায়। তাদের ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় না। দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চম্পট দেয়। এতে মনে হতে পারে, এসব চালক গাড়ি চালানোর দক্ষতা অর্জনের চেয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে কিভাবে পালিয়ে যাওয়া যায়, এ প্রশিক্ষণই যেন বেশি নিয়ে থাকে। যাত্রী বা পথচারীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার এ প্রবণতাকে কি দুর্ঘটনা বলা যায়?
দুই.
সড়ক দুর্ঘটনা এমনই যে এতে কোন শ্রেণীভেদ থাকে না। ধনী-দরিদ্র, রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট ব্যক্তি এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রেহাই পায় না। বলা যায়, বেপরোয়া ও দুর্বিনীত গাড়ি চালক এদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যেসব দুর্ঘটনা ঘটে এবং যেসব মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তার শতকরা ৭০ ভাগই কর্মক্ষম এবং দেশের অর্থনীতিতে তাদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক হিসেবে দেখানো হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি জিডিপি’র ১ শতাংশের বেশি। দুর্ঘটনায় কর্মক্ষম এসব মানুষের হতাহতের ঘটনায় তাদের পরিবারে কি দুর্বিষহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তা কেবল তারাই জানে। এমন শত শত পরিবার রয়েছে, যারা সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে ধাবিত। চালক বেঁচে গেলে হয়ত তার পরিবার অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা পায়, তবে তার বেপরোয়া আচরণের কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটে এবং এতে যার বা যাদের মৃত্যু হয়, তার বা তাদের পরিবারের কি পরিস্থিতি হয়, তা তারা ভাবে না। তার অসচেতনতা ও বেপরোয়া আচরণের কারণে যে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, তার দায় কি সে এড়াতে পারে? যে পরিবহন কোম্পানির গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কি এ বিষয়টি কখনো ভেবে দেখেছে বা নিহতদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছে? সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও কি কখনো তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছে? এমন সংবাদ আমরা কখনো পাই না। বরং আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখেছি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করতে এবং চালককে ‘ঘাতক’ বলা যাবে না বলে তীব্র আপত্তি করতে। এর অর্থ হচ্ছে, সরকারের তরফ থেকে গণপরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট চালক এবং মালিকদের এক ধরনের দায়মুক্তির প্রবণতা রয়েছে। ফলে বেপরোয়া চালকরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যেভাবে খুশি সেভাবে গাড়ি চালায়। দায়মুক্তির এই প্রবণতা থেকে যতদিন না বের হয়ে আসা যাবে, ততদিন মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক যে শব্দেই প্রকাশ করা হোক না কেন, দুর্ঘটনা যে ঘটবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের এক হিসেবে দেখানো হয়েছে, গত ১৫ বছরে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গড়ে প্রতি বছর নিহত হয় ৪ হাজারের বেশি। বিশ্বব্যাংক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটেছে চালকের ভুল এবং বেপরোয়া মনোভাবের কারণে। এটাই হওয়া স্বাভাবিক। যে দেশে সিংহভাগ চালক ত্রুটিপূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালায়, সেখানে দুর্ঘটনার হার ও মানুষের হতাহতের ঘটনা এবং পরিবার-পরিজনের হাহাকার ও আর্তনাদ কমার কোন কারণ নেই। বিশ্বের কোন সভ্য দেশে মানুষ মারার এমন চলমান অস্বাভাবিক গণপরিবহণ ব্যবস্থা আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। উন্নত বিশ্বে নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ির গতিসীমা সামান্য অতিক্রম এবং লেন পরিবর্তন করলেই সংশ্লিষ্ট গাড়ি চালকের অরিজিনাল লাইসেন্স স্থগিত, এমনকি বাতিল করে দেয়া হয়। সেই চালককে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স ফেরত পেতে হয়। আমাদের দেশে এসব নিয়ম কানুন দূরে থাক, যে সংস্থা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় তার বিরুদ্ধেই ত্রুটিপূর্ণ লাইসেন্স প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। তার উপর রয়েছে গাড়ি চালক, শ্রমিক সংগঠন এবং পরিবহন মালিকদের বেপরোয়া মনোভাব। ত্রুটিপূর্ণ লাইসেন্স ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি ধরলে বা অভিযান চালালে তারা হয় পরিবহণ ধর্মঘট ডেকে বসে, না হয় কৌশলে গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ উন্নত হচ্ছে। তবে গণপরিবহণে যেসব অনিয়ম, অরাজকতা চলছে, এ ক্ষেত্রে উন্নতির কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ খাত এবং এর সাথে জড়িতদের যদি সংস্কার ও সুশৃঙ্খল করা না যায়, তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা যতই উন্নত করা হোক তাতে কোন লাভ হবে না। বেপরোয়া চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি মসৃন ও উন্নত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটাবে এবং অধিক বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
তিন.
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বহু কথা হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় এ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা অনেক লেখালেখি করেছেন। এখনও করছেন। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এসবে যে কোন কাজ হচ্ছে না, তা সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির হারই প্রমাণ করছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের কোন বিচলন আছে বলেও মনে হচ্ছে না। বরং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের পক্ষাবলম্বন করতে দেখা গিয়েছে। যে চালক ও পরিবহন সংস্থার ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে, তারা যদি নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে প্রশ্রয় পায়, তবে তাদের বেপরোয়া মনোভাব রোখার কারও সাধ্য নেই। এর ফলে বেপরোয়া চালকরা নিজেদের ‘রাস্তার রাজা’ ভাববে, যাত্রীরা তাদের কাছে জিম্মি হবে, সড়ক-মহাসড়ক মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হওয়াই স্বাভাবিক। প্রতিকারের পরিবর্তে যদি প্রশ্রয় ও উদাসীনতা প্রদর্শন করা হয়, তবে চালকদের বেপরোয়া মনোভাব কোনো দিনই কমবে না। এ ধরনের প্রবণতা মানবঘাতী এবং স্বাভাবিক চলাচলে মানবাধিকার খর্ব করা ছাড়া কিছুই নয়। দিনের পর দিন সড়ক দুর্ঘটনায় যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, এ ক্ষতিকে ¯্রফে দুর্ঘটনা বা দুর্ঘটনায় মানুষের কোন হাত নেই বলে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে মাঝে মাঝে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়। কিছুদিন পর আবার যেই-সেই অবস্থা। প্রশ্ন হচ্ছে, স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? এভাবে আর কতদিন? দেশের কর্মক্ষম ও ব্রিলিয়ান্ট ব্যক্তিদের বাঁচাতে এর স্থায়ী সমাধান কি সরকার অনুভব করছে না? তাদের জীবন কি গণপরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা ও কিছু বেপরোয়া গাড়ি চালকের হাতেই জিম্মি থাকবে? আমরা দেখেছি, যখনই কোন বিশিষ্টজন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন, তখন সরকার সংশ্লিষ্টরা দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন। নিশ্চয়ই তারা শোক প্রকাশ করবেন, অশ্রুসজল হবেন। পাশাপাশি আমরা তো আশা করি, পরিবহন খাতে যে মারাত্মক ত্রুটি-বিচ্যুতি বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে, সেগুলোর ব্যাপারেও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে। দুঃখের বিষয়, আমরা এ ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখি না। সরকারকে অনেক ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব পোষন এবং দমন করার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখা যায়। সড়ক ও পরিবহন খাতে যে অনিয়ম শিকড় গেঁড়ে রয়েছে, এ ক্ষেত্রে যদি এমন মনোভাব পোষন করত, তবে সড়ক দুর্ঘটনা হত্যাকান্ড হিসেবে অভিহিত না হয়ে স্রেফ দুর্ঘটনা হিসেবেই চিহ্নিত হতো। সাধারণ মানুষও দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়ে সান্ত¦না পেত।
চার.
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বহু উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। বাস্তবে চোখে পড়ে না। আরেকটি ট্র্যাজিক ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত টনক নড়ে না। অথচ উদ্যোগ নেয়া হবে-হচ্ছের মাঝেই প্রায় প্রতিদিন একের পর এক প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশে দক্ষ চালকের অভাব রয়েছে। এক চালককে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আঠার-ঊনিশ ঘন্টা গাড়ি চালাতে হয়। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ট্রিপ নিয়ে পুনরায় আরেক ট্রিপ নিয়ে ফিরতে হয়। এতে তার বিশ্রামের কোনো সুযোগ থাকে না। এই বিশ্রামহীন চালকের পক্ষে সচেতন হয়ে গাড়ি চালানো অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে কিংবা ঘুম চোখে নিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে মনোযোগ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। চালকদের এই একটানা গাড়ি না চালানো এবং বিশ্রাম নেয়ার জন্য সড়ক-মহাসড়কে বিশ্রামাগার নির্মাণের কথা তিন বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন হয়নি। এ ধরনের শৈথিল্য ও ঢিলেমি কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশে পরিবহন খাত এবং সড়ক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলায় আইনের শাসন নেই বললেই চলে। পরিবহন খাতে যেসব সংগঠন ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্ত, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেই। রাস্তায় গাড়ি চললে দুর্ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক, তাদের মধ্যে এমন প্রবণতা বিরাজমান। তাদের এ প্রবণতার কাছে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে আছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আজ পর্যন্ত এ খাতটিকে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করতে পারেনি। অথচ সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও মালিকদের সচেতন ও সংশোধন করা প্রয়োজন। পরিবহন সংক্রান্ত যেসব আইন রয়েছে, সেগুলো কেবল খাতা-কলমে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানো অপরিহার্য। দক্ষ চালক গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদার, কাউন্সিলিং, মোটিভেশন এবং মানবিক করে তোলা জরুরি। গণপরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোকে চালকদের অরিজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে যে প্রতিষ্ঠানের গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটাবে, সে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। গণপরিবহণখাতে যাত্রীবীমা কার্যকর করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা এবং এ অনুযায়ী উদ্যোগী হতে হবে। জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সড়ক নিরাপত্তা দশক ঘোষণা করেছিল। প্রতিটি সদস্য দেশকে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করার কথা বলা হয়। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশ দেশ পর্যায়ক্রমে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুহার কমিয়ে এনেছে। অথচ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পেছনে রয়েছে। দিন দিন তা জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে। অসংখ্য মানুষ ও পরিবার সড়ক পথে বিলুপ্ত হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা মহামারি আকার ধারণ করেছে। এতে অর্থনীতির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মেধাবী ও কর্মজীবীদের হারিয়ে দেশ মেধাশূন্য হচ্ছে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।