নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশ থেকে ভারতে নির্বাসিত বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন যে কোনো উপায়ে যেন আলোচনায় থাকতে চান। ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবে কখন কি বলে ফেলেন, সেই হুঁশও তার থাকে না। ইতিপূর্বে অনেকবার নানা ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন এই আলোচিত লেখিকা। সম্প্রতি ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীকে নিয়ে বেঁফাস এক মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন তসলিমা। মূলত মুসলিম এই ইংলিশ অলরাউন্ডারের শুশ্রুমন্ডিত চেহারা আর অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়র প্রচারণায় নিজেকে না জড়ানোর নীতিই যেন গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তার। হুট করে টুইট করে বসেছেন, ‘মঈন আলী ক্রিকেটে না আসলে, নিশ্চিতই সিরিয়ায় আইএস যোদ্ধা হিসেবে যোগ দিতেন।’ তসলিমার এই টুইটে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে রীতিমত তোলপাড়। তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তসলিমাকে একহাত নিয়েছেন ইংলিশ সুপারস্টার জফরা আর্চারসহ অনেকেই।
ধার্মিক হিসেবে একাধিকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন মঈন, ক্রিকেট বিশ্বে যার তুমুল জনপ্রিয়তা। এবার আইপিএলে তার দল চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে ছিল একটি ‘অ্যালকোহল’ প্রতিষ্ঠানের লোগে। মঈন অনুরোধ করায় কেবল তার জার্সি থেকেই নির্দিষ্ট ঐ লোগোটি সরিয়ে ফেলে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। এরপরই ইংলিশ অলরাউন্ডারের ধার্মিকতা নিয়ে টুইটারে তসলিমা করে বসেন বেফাঁস মন্তব্য। তসলিমার এবারের টুইটটি চোখে পড়া মাত্রই ইংলিশ তারকা পেসার জফরা আর্চার লিখেছেন, ‘তুমি কি ঠিক আছো? আমার তো মনে হয় না তুমি ঠিক আছো।’ তোপের মুখে এরপর তসলিমা আরেক টুইটে দাবি করেন, মঈনকে নিয়ে তিনি ঠাট্টা করেছেন। তিনি লিখেন, ‘নিন্দুকরা এটা ভালো করেই জানে যে মঈনকে নিয়ে টুইটটা মজা করে দিয়েছি। কিন্তু তারা এটাকে আমাকে অপমান করার মত ইস্যু বানিয়ে ফেলেছে কারণ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলি এবং ইসলামিক ধর্মান্ধতার বিরোধিতা করি।’ তসলিমা আরও দাবি করেন, ‘মানবসমাজের অন্যতম বড় ট্র্যাজেডি হল নারীপন্থী বামপন্থীরাও নারীবিরোধী ইসলামিস্টদের সমর্থন করেন।’ আর্চার তসলিমার সেই টুইটেরও কড়া জবাব দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এটা রসিকতা? কেউই তো হাসছে না, এমনকি তুমিও না। অন্তত টুইটটা ডিলিট তো করতে পারো।’
এরপর থেকে একে একে আর্চারের কণ্ঠে সুর মিলিয়েছেন স্যাম বিলিংস, বেন ডাকেট, সাকিব মাহমুদের মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররা। তসলিমার টুইটে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইংলিশ ক্রিকেটার সাকিব মাহমুদ লিখেছেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না। বিশ্রী টুইট। ঘৃণ্য ব্যক্তি (তসলিমাকে উদ্দেশ্য করে।’ সাকিবের সেই টুইটে আরেক ইংলিশ তারকা স্যাম বিলিংস লিখেছেন, ‘অনুগ্রহ করে আপনারা সবাই তসলিমার একাউন্টকে রিপোর্ট করুন। জঘন্য!’ শুধু ইংলিশ ক্রিকেটাররা নন, ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করা তসলিমার এই টুইটের সমালোচনা করেছেন অনেকে। অস্ট্রেলিয়ার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল লিখেছেন, ‘রিপোর্ট করো এবং ব্লক দাও। টুইটারের মান নষ্ট হয়ে যাবে যদি আমরা তা না করি।’ বেন ডাকেট পৃথক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘টুইটারের সমস্যা হল এটাই। মানুষ এরকম যা তা বলে বেড়াতে পারে। পরিবর্তন দরকার। সবাই এই একাউন্ট রিপোর্ট করুন।’
এই প্রতিবেদন লেখার সময় তসলিমার বিতর্কিত টুইটটি মুছে ফেলা হয়েছে। যদিও তার প্রথম টুইটকে রসিকতা করে দাবি করা পোস্ট এখনো প্রদর্শিত হচ্ছে। যদিও ভুলের জন্য ক্ষমা চাননি বিতর্কিত এই লেখিকা। তারই জের ধরে এবার এই বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন মঈনের বাবা মুনির আলীও। ভারতের প্রথম সারির একটি গণমাধ্যমে মুনির জানান, তসলিমার এমন জঘন্য মন্তব্য শুনে তিনি রীতিমত হতবাক এবংক্ষুব্ধ। তবুও বাজে ভাষায় তাকে আক্রমণ করতে রাজি নন মুনির। কখনও দেখা হলে তসলিমাকে মুখের ওপরই জবাব দেবেন জানিয়েছেন তিনি। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ছেলের বিরুদ্ধে তসলিমা নাসরিনের করা এমন জঘন্য মন্তব্যে আমি হতবাক, একইসঙ্গে ব্যথিত। তার মন্তব্যের সমর্থনে উনি যে টুইট করেছেন, সেখানে তিনি লিখেছেন- ওই মন্তব্য নিছক মজা ছিল। তিনি বলেছেন, তিনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে। আমার মনে হয় আয়নার সামনে দাঁড়ালে উনি বুঝবেন কী লিখেছেন আর মৌলবাদই বা কাকে বলে। তার এই মন্তব্য সম্পূর্ণ ইসলাম-বিরুদ্ধ। কোনো মানুষের আত্মসম্মান এবং অন্যের প্রতি সম্মান না থাকলে, সে এত নিচে নামতে পারে।’
মুনির আলী আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি ভীষণ ক্ষুব্ধ। তবে রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে লোকজন আমাকেও ছেড়ে কথা বলবে না জানি। তবে কোনোদিন ওনার সঙ্গে দেখা হলে আমি তাকে মুখের উপর এর জবাব দেব। আপাতত তাকে বলব, একটি ডিকশনারি হাতে নিন এবং সারকাজমের অর্থ খুঁজে বের করুন।’ মঈনের বাবা বিশ্বাস করতে পারছেন না, তসলিমার এজেন্ডায় তার সহজ-সরল ছেলেও পার পাবে না। তিনি বলেন, ‘কাউকে না জেনে তাকে নিয়ে এমন বিষাক্ত মন্তব্য করা, আবার পরে সেটাকে মজা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উনি যেমনটা ভাবছেন তেমনটা নয় এটা। আমি ভাবতে পারছি না উনি আমার ছেলেকেই বেছে নিয়েছেন। ক্রিকেট বিশ্বে সকলে জানে, মঈন কেমন মানুষ।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।