Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সউদী আরবের বিপুল অর্থনৈতিক কর্মসূচির সুযোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

সউদী আরব বিগত ৩০০ বছরে অর্থনৈতিক খাতে যে ব্যয় করেছে আগামী এক দশকে তার চেয়েও বেশি ব্যয় করবে বলে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা দিয়েছেন। ভিশন-২০৩০ নামে কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে এ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ২৭ ট্রিলিয়ন রিয়াল বা ৭.২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে। অর্থনৈতিক এই কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে, দেশটির বেসরকারি খাতকে তেল রফতানির ওপর নির্ভরতা বন্ধ করতে অর্থনৈতিক সহায়তা এবং লাখ লাখ সউদী নাগরিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। বিন সালমান বলেছেন, আগামী দশ বছরে এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের ব্যবস্থা ও সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আগামী দশ বছরে সউদী আরবের এই অর্থনৈতিক কর্মসূচি উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে উঠবে। বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সউদীর এই বিশাল অর্থ ব্যয় থেকে আমাদের লাভবান হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে দেশটির সাথে আমাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ট করার উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে আমাদের দেশও এই ব্যয়ের সুবিধাভোগী হতে পারে।

সউদী আরব অতীতের রক্ষণশীল অর্থনীতি থেকে বের হয়ে উদার অর্থনীতির দিকে ঝুঁকছে। বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান প্রথাগত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঘরানা থেকে বের হয়ে উদার নীতি গ্রহণ করায় দেশটির বহুমুখী অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। করোনা অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দেশটিকে রক্ষণশীল অর্থনীতি থেকে বের হতে ভূমিকা রেখেছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দেশটি এখন তৎপর হয়েছে। ভিশন-২০৩০ কর্মসূচির মাধ্যমে বিপুল অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সেটা বোঝা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, সউদী আরব ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা শুরু করেছে। অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে আগামী পঞ্চাশ বছরের জন্য তাকে জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে। পাকিস্তানের সাথেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন বিন সালমান। ট্রাম্পের রক্ষণশীল অর্থনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশটির বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধীর হয়ে গিয়েছিল। এখন নতুন করে এ সম্পর্ক গতি পাচ্ছে। সউদী আরব তার অর্থনীতিকে সম্প্রসারিত এবং বিভিন্ন দেশের সাথে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে যে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে তাতে আমাদেরও শামিল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে দেশটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার আশ্বাস দিয়েছিল। সম্প্রতি ঢাকাস্থ সউদী রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আঅ দুলাইহান সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সউদী আরব বাংলাদেশে দেড় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেছেন, কেবল সউদী প্রতিষ্ঠানগুলোই শুধু বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে না, বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদেরও সউদী আরবে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশটির আগ্রহ রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ-বাণিজ্য সম্প্রসারণে দেশটির এমন আগ্রহ অতীতে পরিলক্ষিত হয়নি। তার এ আগ্রহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন প্রাণাবেগ সঞ্চারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে, বহু বছর ধরেই দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের জনশক্তি অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশও জনশক্তি রফতানি করে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশটি থেকে আহরণ করছে।
সউদী আরব তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। কাল বিলম্ব না করে শুরুতেই বাংলাদেশকে এ সুযোগ গ্রহণের পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। আমরা দেখেছি, দেশটির সাথে সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে কার্যকর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণে এক ধরনের শৈথিল্য রয়েছে। দেশটি বিভিন্ন খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিলেও যথাযথ কূটনৈতিক দক্ষতার অভাবে তা দৃশ্যমান হচ্ছে না। অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। সরকারের উচিৎ সউদী আরবের সাথে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো। বিগত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটিতে বেশ কয়েকবার সফর করেছেন। এতে বিভিন্ন খাতে বেশ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় দেশটির নতুন অর্থনৈতিক কর্মসূচির সুফল পেতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পররাষ্ট্র, অর্থ ও বাণিজ্যসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়সহ বেসরকারি খাতে দেশটির সাথে ব্যাপক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদী আরব


আরও
আরও পড়ুন