মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার। আর এই নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে পূর্ব মেদিনিপুরের নন্দীগ্রাম। দ্বিতীয় দফার নির্বাচন আসল লড়াইটাই হবে এখানে। এরই মধ্যে নন্দীগ্রাম উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আর এ কারণে নন্দীগ্রামে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন করতে ১৪৪ ধারা জারি করে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। এমনকি নন্দীগ্রামের নির্বাচনের পর বাড়তি নজর দিয়ে নির্বাচন কমিশনে বিশেষ একটি সেলও গঠন করা হয়েছে।
২০০৭ সাল থেকে রাজ্য রাজনীতির শিরোনামে এসেছে নন্দীগ্রাম। জমি দখলে রাখার আন্দোলনে নন্দীগ্রাম অন্যতম একটি নাম। সেই জমি দখলের লড়াইয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি এবং তার এক সময়ের সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী আজ নন্দীগ্রামের নির্বাচনে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়বেন। তাই এই আসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তাপ বেড়েই চলেছে। নন্দীগ্রামে ৩৫৫টি নির্বাচনী বুথের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি কোম্পানিতে ৭১ থেকে ৭২ জন করে মোট ১৬০০ জন সদস্য থাকবে। এছাড়াও থাকবে রাজ্য পুলিশ। সোমবার পর্যন্ত নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে ২১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নন্দীগ্রামের ৭৫ ভাগ বুথ ওয়েবকাস্টিংয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকছে। ফলে ৩৫৫টি বুথের মধ্যে ২৬৭টি বুথে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এ ক্যামেরার ভিডিও সরাসরি নির্বাচন কমিশন দেখতে পাবে। আবার প্রতিটি বুথে একজন করে মাইক্রো অবজার্ভার থাকছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ওয়েবক্যামের নেটওয়ার্ক যাতে সচল থাকে সেই ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নন্দীগ্রাম ছাড়াও আজ ৪ জেলার আরো ২৯টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। নন্দীগ্রামে যেমন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মমতা নিজে ভোট লড়ছেন, তেমনই পাশের চন্ডীপুর আসনে অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীকে লড়াইয়ে নামিয়েছেন মমতা। আগেও ভোট লড়েছেন সোহম। সেটা অবশ্য উপনির্বাচনে। ২০১৭-র বাঁকুড়ার বরজোড়ায় সিপিএমের সুজিত চক্রবর্তীর কাছে পরাজিত হন সোহম। সোহমের পাশাপাশি আজ রাজনীতিতে নবাগতা অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ভাগ্য পরীক্ষা। সদ্যই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আর তার পরেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বাঁকুড়া থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন সায়ন্তিকা। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে এ আসনে তৃণমূল জিতলেও গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে ‘সুবিধাজনক’ জায়গায় বিজেপি।
দ্বিতীয় দফায় তারকা প্রার্থী শুধু তৃণমূলের ঘরেই নেই। অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায় রয়েছেন খড়্গপুর সদরে। ২০১৬-য় রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের জেতা ওই আসন পরে ২০১৯-এর উপনির্বাচনে হাতছাড়া হয় পদ্মের। দিলীপ মেদিনীপুরের সাংসদ হওয়ার পর খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হন প্রদীপ সরকার। সেখানে হিরণ কতটা সুবিধা করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদির মতো বিজেপি-র শীর্ষস্থানীয় নেতারা তার হয়ে প্রচার করে গেছেন। এই দফায় বিজেপি-র আরও এক তারকা প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক দিন্দা। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় তাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এ আসনে ইতোমধ্যে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার দিন্দার ওপর আক্রমণের অভিযোগও ওঠে। এর পরেই দিন্দাকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।
এই দফায় নজরে থাকবে আর এক আসন ডেবরা। দুই প্রাক্তন আইপিএস অফিসারের লড়াই সেখানে। বিজেপি-র ভারতী ঘোষ বনাম তৃণমূলের হুমায়ুন কবীর। ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে ঘাটালে পদ্মশিবিরের হয়ে লড়লেও অভিনেতার দেবের কাছে পরাজিত হন ভারতী। বাংলার আর এক ‘ভিআইপি’ রাজনীতিক সবং-এর মানস ভুঁইয়াও এই দফায় প্রার্থী। দীর্ঘ ৪০ বছর পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থেকে লড়াই করে আসছেন তিনি। কংগ্রেসের অনেকবারের বিধায়ক মানসের এ প্রথম জোড়াফুল প্রতীকে বিধানসভা নির্বাচনের লড়াই। ২০১৭-য় রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরে এ আসনে জিতেছিলেন মানসের স্ত্রী গীতারানি ভুঁইয়া। অন্যদিকে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে খালিহাতেই ফিরতে হয়েছিল মানসকে।
সোনিয়া-শরদসহ একাধিক নেতাকে চিঠি মমতার
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনী আবহে ফের বিজেপি বিরোধী ফ্রন্টকে এক ছাতার তলায় আনতে সক্রিয় হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় দফার ভোটের আগের দিন গেরুয়া শিবিরের প্রতি আক্রমণ শানিয়ে অবিজেপি দলগুলোকে এক ছাতার তলায় আসতে আবেদন করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এই মর্মে অবিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সনিয়া গান্ধী, শরদ পওয়ার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, এমকে স্টালিন, তেজস্বী যাদব, উদ্ধব ঠাকরে-সহ বিজেপি বিরোধী মুখগুলোকে এই মর্মে বার্তা পাঠান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
এখন দেখার রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আদতে কে সফল হন বিজেপি-বিরোধী ফ্রন্ট গঠনে।
ভ‚মিধ্বস বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে মমতার তৃণমূল : গোয়েন্দা রিপোর্ট
এদিকে এবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস আবারো বড় ব্যবধানে জয় পেতে চলেছে বলে চ‚ড়ান্ত গোয়েন্দা সমীক্ষা রিপোর্ট সূত্রে জানা গেছে। বিধানসভার ২৯৪ আসনের নির্বাচনে মূল লড়াই হবার কথা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি, রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস এবং বাম দলের মধ্যে। নির্বাচনের একেবারে আগ মুহ‚র্তে করা গোয়েন্দা জরিপে (১০-২১ মার্চ) দেখা গেছে তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে। দলটির প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিজেপি হলেও তৃণমূল একপ্রকার অনায়াসেই জিততে চলেছে।
নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস ২০৪ থেকে ২১১টি আসন পেতে পারে। যেখানে সরকার গড়তে প্রয়োজন ১৪৮টি আসন। আর বিজেপি পেতে পারে ৮২ থেকে ৯১টি আসন। অন্যদিকে বাম দল পেতে পারে মাত্র ২ থেকে ৪টি আসন। অন্যান্য দলগুলো এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবাই মিলে পেতে পারে মাত্র ১ থেকে ৩টি আসন। আর শতাংশের হিসেবে তৃণমূলের ঝুলিতে যেতে পারে ৪৪ থেকে ৪৮ শতাংশ ভোট। বিজেপির থলিতে যেতে পারে ৩৫ থেকে ৩৯ শতাংশ ভোট। উক্ত জরিপে প্রায় ৩১ হাজার ব্যক্তি অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। রিপোর্টটি ২২ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।