মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের অধীনে একাডেমিক স্বাধীনতা এবং ভিন্নমত দমনাভিযানের কথা তুলে ধরে ভারতের অন্যতম নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ এ সপ্তাহে পদত্যাগ করেছেন। দিল্লির নিকটবর্তী অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রতাপ বানু মেহতা সোমবার পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার অনলাইনে পুনরায় জমা দেওয়া তার পদত্যাগপত্রে মেহতা উল্লেখ করেন যে, ভারত সরকারের পরোক্ষ চাপ তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। সংবাদপত্রের কলাম লেখা ও শিক্ষাদানের কাজ নিয়ে মি. মেহতা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) থেকে সমালোচিত হয়েছিলেন।
একদা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পদে থাকা অশোকের অর্থনীতির অধ্যাপক অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম গত বৃহস্পতিবার মেহতার ‘বৈজ্ঞানিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ বক্তব্যের সাথে সংহতি প্রকাশ করে পদত্যাগ করেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত করা এবং আরো বিস্তৃত মতবিরোধ তৈরির সর্বশেষ উদাহরণ হল এসব পদত্যাগ। ২০২০ সালে, মার্কিন এনজিও ফ্রিডম হাউস ‘রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে একাডেমিক আলোচনা রুদ্ধ করার লক্ষ্যে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণে ভারতের শিক্ষাগত স্বাধীনতার সূচককে সম্ভাব্য চারটির মধ্যে তিন থেকে দুইয়ে হ্রাস করেছে’।
সরকারি হুমকি রোধে সহায়ক ভ‚মিকা পালনকারী সুপরিচিত শিক্ষাবিদ হর্ষ মেন্ডার বলেছেন, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও কর্মীদের ভয় দেখানোর জন্য পুলিশও জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহার করেছে। ম্যান্ডার বলেন, ‘সরকার এখন অনুভব করছে যে, শিক্ষাবিদরা এবং নাগরিক সমাজের কিছু কণ্ঠস্বর শুধু তার বিরোধী এবং ভারতকে হিন্দু-অধ্যুষিত জাতিতে ঠেলে দেওয়ার একমাত্র বাধা’। ২০১৯ সালে একটি শান্তিপূর্ণ সরকারবিরোধী প্রতিবাদ র্যালিতে বক্তব্য রাখায় মান্ডারের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তারা ভীতি তৈরিতে প্রচুর কৌশল অবলম্বন করেছে’।
পদত্যাগপত্রে মেহতা উল্লেখ করেন, অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারত সরকারের পরোক্ষ চাপের কারণে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তিনি লিখেন, ‘[বিশ্ববিদ্যালয়ের] প্রতিষ্ঠাতাদের সাথে দেখা করার পর আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার সম্পৃক্ততা একটি রাজনৈতিক দায় হিসাবে বিবেচিত হতে পারে’। ‘এ নীতিমালার সমর্থনে আমার প্রকাশ্য লেখাগুলো, যা সংবিধানের স্বাধীনতার মূল্যবোধ এবং সকল নাগরিকের সমান সম্মান চায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে হুমকি হিসাবে বিবেচিত হয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে পদত্যাগ করি।
চাকরি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অশোকের একজন কর্মী বলেন, ২০১৪ সালে বেসরকারী অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা একটি বৈঠকে মেহতাকে বলেছিলেন যে, ভারত সরকারের সমালোচনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় হুমকি সৃষ্টি করছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে টাইমের অনুরোধে অশোক বিশ্ববিদ্যালয় বা ভারত সরকার কেউই সাড়া দেয়নি। কিন্তু অশোকের ছাত্রদের পত্রিকা ‘এডিক্ট’-এর সম্পাদকের অনুরূপ অভিযোগের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলেছিলেন, এডিক্টের নিবন্ধটি ‘সত্যিই ভুল’। মেহতা এ ব্যাপারে মন্তব্য করার অনুরোধের জবাব দেননি।
মেহতা ২০১৯ সাল থেকে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। এটিই বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ পদ। পদত্যাগপত্রে তিনি ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেন। তবে অনেকের অনুমান, সেখানে রাজনৈতিক কারণও ছিল। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে-তে সেন্টার ফর রেস অ্যান্ড জেন্ডার-এর আঙ্গানা চ্যাটার্জি বলেন, ‘এ পদক্ষেপটি আমাদের অনেকের পক্ষে আপত্তিকর, কারণ এটি একটি ক্রমবর্ধমান কৌশলের অংশ হিসাবে ঘটে যেখানে পবালিক বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজের উকিল এবং মানবাধিকার রক্ষাকারী যারা প্রগতিশীল, উদার, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে একটি স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাধীনতার ভিন্ন ধারণা নিয়ে বক্তব্য রাখেন, তাকে চিহ্নিত করা হয়, নিরুৎসাহিত করা হয় এবং লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়’। সরকার একটি বার্তা দিতে চায় যে, ‘কেবল একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নয়, যে কোনো সংস্থা সরকারের সমালোচনা করার পক্ষে অবস্থান নিলে তা অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে’।
বৃহস্পতিবার অশোকের কাছ থেকে পদত্যাগকারী আরেক শিক্ষানবিশ সুব্রামানিয়াম তার পদত্যাগের অন্যতম কারণ হিসাবে মেহতার উপরে কথিত চাপকে উদ্ধৃত করেছেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক লিখেছেন, ‘অশোকের অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিকোণকে মূর্ত করে তোলা এমন একজন ব্যক্তি এবং একজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে মন খারাপ করতে হয়েছিল’। যে অশোক এমনকি তার স্বাধীন মর্যাদা এবং স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ভিত্তি থাকা সত্তে¡ও একাডেমিক মত প্রকাশের এবং স্বাধীনতার পক্ষে কোনও স্থান দিতে পারে না’। ২০১৮ সালে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করার পর থেকে সুব্রামানিয়াম সরকারের অর্থনৈতিক নীতিগুলির সমালোচনা করেছেন। তিনি মন্তব্য করার অনুরোধে সাড়া দেননি।
ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত ভারতীয় শিক্ষাবিদ চ্যাটার্জী কাশ্মীরে কয়েক দশকের ভারতীয় দমনাভিযানের সময়কার একটি গণকবর আবিষ্কৃত হবার পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনায় ২০০৮ সালে পুলিশ তার বিরুদ্ধে দেশবিরুদ্ধ সহিংসতা প্ররোচিত করার অভিযোগ এনেছিল। এটি ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগের ঘটনা। তবে চ্যাটার্জি বলছেন, দলটি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের হুমকির কারণে প্রায়শই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে দেশে ফিরতে তার অসুবিধা হয়েছিল।
নাগরিক সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোও ভারতে সেন্সরের মুখোমুখি। ২০২০ সালে ভারতের মানবাধিকার রেকর্ডের প্রকাশ্য সমালোচনা করার পর সরকার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় শাখাটিকে সেদেশে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল। চ্যাটার্জি বলেন, ‘অগণিত উপায়ে আজ ভারতে মানুষকে হয়রানি, পরাধীন করা হচ্ছে। ‘আজ ভারতে কথা বলা বিপজ্জনক’। সূত্র : টাইম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।