মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে মুম্বাইয়ের কেন্দ্রস্থলে এশিয়ার শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির বাড়ির সামনে থেকে বিস্ফোরকবাহী একটি গাড়ি উদ্ধার করা হয়। গাড়ির ভেতর মুকেশ আম্বানি ও তার স্ত্রী নিতা আম্বানিকে উদ্দেশ করে লেখা একটি চিরকুট মেলে। সেখানে লেখা ছিল, ‘এটি একটি ট্রেলার, আবার আমরা আসব। আমরা আপনার পুরো পরিবারকে উড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’ এর কদিন পর মুম্বাইয়ের সমুদ্রতীরে ভেসে ওঠে ওই গাড়ির মালিকের লাশ। এ ঘটনায় মুম্বাই পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। সব মিলিয়ে জটিল এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যার অনেক প্রশ্নের এখনো উত্তর মেলেনি।
বর্তমানে এশিয়ার শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির সম্পদের পরিমাণ ৭ হাজার ৬শ’ কোটি ডলার। এমন একজনের বাড়ির সামনে কেন বিস্ফোরক ভরা গাড়ি এবং চিরকুট রাখা হবে, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেন মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ২৫ ফেব্রæয়ারি সকালে মুকেশ আম্বানির ২৭ তলা ভবনের এক নিরাপত্তারক্ষী প্রথম সবুজ রঙের ভারতীয় স্করপিও এসইউভিটি দেখেন। গাড়িভর্তি বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক ছিল। খবর পেয়ে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। তবে বিস্ফোরকগুলো এমন ধরনের ছিল, সেগুলো কেউ না ফাটালে বিস্ফোরণের আশঙ্কা ছিল না।
গাড়িটি পাওয়ার পরই খোঁজ পড়ে এর মালিকের। স্থানীয় ব্যবসায়ী মানসুখ হিরেন ছিলেন গাড়িটির মালিক। তিনি তদন্তকারী দলকে জানান, গাড়িটি আসলে অন্য একজনের, গাড়ি ঠিক করতে নিয়েছিলেন তিনি। তবে ওই লোক অর্থ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরে গাড়িটি দখল করেন তিনি। তিনি আরও জানান, গত ১৭ ফেব্রæয়ারি গাড়িটি চালিয়ে মুম্বাইয়ের কাছে একটি এক্সপ্রেসওয়েতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় গাড়ির স্টিয়ারিং জ্যাম হয়ে যায়। তিনি গাড়িটি সেখানে দাঁড় করিয়ে রেখে বাড়িতে চলে যান। পরদিন সকালে যখন তিনি গাড়িটি নিতে আসেন, সেটি ওখানে ছিল না। তিনি কাছের পুলিশ স্টেশনে এ বিষয়ে অভিযোগও করেন। এসব তথ্য দেওয়ার পর হিরেনের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়।
এরপর ৪ মার্চ দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন হিরেন। পরদিন সমুদ্রে ভেসে ওঠে তার লাশ। লাশের মুখ চার পাঁচটি রুমাল দিয়ে বাঁধা ছিল। শেষবার বাড়ির সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় তিনি জানান যে, একজন পুলিশ অফিসার তাঁকে ডেকেছেন, তিনি সেখানে যাচ্ছেন। তদন্তে বের হয়ে আসে, ৪ মার্চ রাত আটটার দিকে হিরেন দোকান থেকে বের হয়েছিলেন। এর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় অজানা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন হিরেনের স্ত্রী।
ঘটনার এ পর্যায়ে উঠে আসে নতুন এক নাম। আম্বানির বাসার সামনে পরিত্যক্ত যানের খবর পেয়ে ওই দিন কারমাইকেল রোডে গিয়েছিলেন পুলিশের এলিট ক্রাইম শাখার সহকারী পরিদর্শক সচিন ওয়াজে। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে। ১৩ মার্চ গ্রেফতার করা হয় এই সচিন ওয়াজেকে। গ্রেফতারের আগে ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন যে, আম্বানির বাড়ির বাইরে বিস্ফোরক গাড়ি নিয়ে দাঁড়ানোর পরিকল্পনার অংশ ছিলেন সচিন।
যে গাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার হয়েছিল, ২০২০ সাল থেকে সেই গাড়ি ছিল সচিনের নামেই। পরে হিরেনের স্ত্রীও জানান, হিরেনের সঙ্গে সচিন ওয়াজের ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করেন সচিন। বুধবার জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) নিশ্চিত করেছে, ২৫ ফেব্রæয়ারি ওই ঘটনার রাতে তাকে আম্বানির বাসার সামনে দেখা গেছে। পিপিই পরিহিত ছিলেন তিনি। সচিনের বিরুদ্ধে আইপিসি ধারায় বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সচিনের জীবনে এবারই প্রথম এমন অভিযোগ এল, তা নয়। ৬৩ জন অপরাধীকে এনকাউন্টারে মেরে ফেলার রেকর্ড রয়েছে সচিনের। এর আগে ২০০৪ সালে পুলিশি হেফাজতে এক তরুণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুর ঘটনার জন্য বরখাস্ত হয়েছিলেন তিনি। শহরে বিস্ফোরণের ঘটনায় খাজা ইউনুস নামের ২৭ বছর বয়সের ওই যুবককে আটক করেন সচিন ওয়াজে ও তার দল। ওই ঘটনার দায় অস্বীকার করেন সচিন। পরে আবার দায়িত্বে বহাল হন তিনি।
তিনি ২০০৮ সালে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন, তবে তার পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়নি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী যাদব ঠাকরে জানিয়েছেন যে, সচিন ২০০৮ সাল থেকে শিবসেনার সদস্য। ১২ মার্চ তাঁকে পুলিশের সিটিজেন ফেসিলিটেশন সেন্টারে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে এখনো জানা যায়নি কেন এই কাজ করতে পারেন সচিন। এ সবকিছুই এখনো রহস্য, যা উদ্ঘাটনে জোর তদন্ত চালাচ্ছে মুম্বাই পুলিশ। সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।