Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাসপাতালে সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০৭ এএম

দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আলামত বলে মনে করছেন কেউ কেউ। গত বছর মার্চ মাসে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে আতঙ্ক, অব্যবস্থাপনা ও অপ্রতুল অবকাঠামো ও চিকিৎসা সরঞ্জামের হাহাকার নিয়ে দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছিল। স্বীকার করতেই হবে, সরকারের ত্বরিৎ পদক্ষেপের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের উদ্যোগগুলো দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বছরের শেষদিকে এসে করোনা অনেকটাই কমে আসলেও এখন সংক্রমণের নতুন মাত্রা দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণের তীব্রতা মৃত্যুর হার দুইই বেড়ে চলেছে। গত বছরের চেয়ে সাম্প্রতিক আক্রান্ত করোনা রোগীদের আইসিইউ সাপোর্ট বা নিবিড় পরিচর্যা অনেক বেশি লাগছে বলে জানা গেছে। এহেন বাস্তবতায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ বেডের যোগান নিশ্চিত করা যখন সম্ভব হচ্ছে না, ঠিক তখন দেশের বৃহত্তম ও প্রধান সরকারি হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশন খুলে অন্যত্র স্থানান্তর করতে গিয়ে অন্তত তিনজন রোগীর তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়েছে। আইসিইউতে থাকা অন্য রোগীদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডিএমসি হাসপাতালের নতুন ভবনের করোনা ইউনিটের আইসিইউ’র ১২ নম্বর বেডে সংযুক্ত হাই-ফ্লো নাজাল ক্যানোলা থেকে এই অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটে। তবে অগ্নিকান্ডের শুরুতেই তা নেভানোর ব্যবস্থা বা চেষ্টা না করেই হাসপাতালে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নার্সরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করার কারণে রোগীদের স্বজনরা নিরূপায় হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। করোনা ইউনিটে এমনিতেই রোগীর স্বজনদের অবস্থান খুব সীমিত, তাছাড়া অধিকাংশ রোগীর স্বজনরাই হয়তো কাছাকাছি ছিলেন না। এহেন বাস্তবতায় ধোঁয়া ও শ্বাসকষ্টে রোগীদের মৃত্যু হয়েছে। রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে রোগীদের মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন। দেশের বৃহত্তম ও সবচেয়ে বেশি সুযোগসুবিধা সম্বলিত হাসপাতালেই যদি এ অবস্থা হয়, সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। গত বছর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেলে ঢাকার একটি অভিজাত বেসরকারি হাসপাতালের করোনা আইসিউতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৫ রোগীর মৃত্যু হয়। সে ঘটনার পরও হাসপাতালের নিরাপত্তা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ব্যত্যয় ও অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে আসে। গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে পর্যটন শহর কক্সবাজারের সদর হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

প্রতিটি দুর্ঘটনা ও অগ্নিকান্ডের পরই ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন বিভাগের তরফ থেকে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করতে দেখা গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না। কখনো কখনো তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ পেলেও রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখা যায়নি। দুই বছর আগে, ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শত শত রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হয়েছিল। সে ঘটনার পরও ফায়ার সার্ভিস এবং হাসপাতালের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে বুধবারের অগ্নিকান্ডের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব তদন্তের রিপোর্টে যাই আসুক, অগ্নিনিরাপত্তা ও হাসপাতালের দায়িত্বরতদের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে যে সুপারিশই আসুক না কেন, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার দায় সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না। গতকাল গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে হাসপাতালের দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার পাশাপাশি আইসিইউ প্রতিষ্ঠায় প্রটোকল লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবলের অভাবের কথা বলা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা খাতের জন্য জনগণের রাজস্ব থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। অথচ, জনগণকে নানাভাবে সেবা বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। দেশের হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থা ও নিরাপত্তার সংকট দেখা দিয়েছে। শুধু সরকারি হাসপাতালই নয়, সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে সেবার মান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা এবং বিভিন্ন খাতের ফি ও খরচাদি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সরকারের। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান ও নিরাপত্তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। নিরাময় কেন্দ্র মৃত্যুকূপে পরিণত হোক, এটা কেউ চাইতে পারে না। কাজেই হাসপাতালে সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 



 

Show all comments
  • Jack+Ali ১৯ মার্চ, ২০২১, ৪:৫৭ পিএম says : 0
    Without Quranic rule nothing will happen, what ever you people write it just waste of time, money.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাসপাতাল

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন