Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হিন্দু-মুসলিম দম্পতিরা বিপজ্জনক অবস্থায়

ভারতে ধর্মান্তর বিরোধী নতুন আইন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

ভারতে আন্তঃধর্মীয় প্রেমকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা ধর্মান্তরবিরোধী বিতর্কিত নতুন আইন দেশটির হিন্দু-মুসলিম দম্পতিদের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এখন তারা কেবল তাদের পরিবারই নয়, রাষ্ট্রীয় রোষের শিকার হচ্ছে। আইনটি চরমপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর ইসলামবিদ্বেষী প্রচরণা ‘লাভ জিহাদ’-এর ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত¡কে ইঙ্গিত করে, যাতে বলা হয়ে থাকে যে, মুসলিমরা হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ভারতের উত্তরপ্রদেশ এ আইন পাসকারী প্রথম রাজ্য, যারা জোর করে জালিয়াতিমূলক উপায়ে বা বিবাহ দ্বারা ধর্মান্তরকে বেআইনী এবং নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অধ্যাদেশ জারি করে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত এ রাজ্যে এ আইনের ফলে একাধিক মামলা ও গ্রেফতার হয়েছে। বিজেপি-শাসিত আরেকটি রাজ্য মধ্যপ্রদেশ ইতোমধ্যে একই আইন পাস করেছে এবং গুজরাটসহ অন্যরাও তাই করছে। তাই আন্তঃধর্মীয় দম্পতিরা এখন এসব রাজ্য ছেড়ে দিল্লির মতো অপেক্ষাকৃত সুরক্ষিত জায়গাগুলোতে বিয়ে করছেন।

ভিন্ন ধর্মের নারী পুরুষের মধ্যে বিয়ের ঘটনা বিরল। এক সমীক্ষা বলছে, এরকম বিয়ের সংখ্যা মোট বিয়ের দুই শতাংশ। তবে, কট্টর হিন্দু দলগুলো বেশ অনেকদিন ধরে এই লাভ-জিহাদ তত্ত¡ ছড়িয়ে বলছে যে, মুসলিম পুরুষরা হিন্দু নারীদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যে প্রেমের ছল দেখিয়ে তাদের বিয়ে করে। এ তত্ত¡ এখন সত্যিকার অর্থেই ভারতের ভিন্ন ধর্মের নারী-পুরুষের মধ্যে প্রেমকে চরম হুমকিতে ফেলেছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের শিক্ষক চারু গুপ্ত যিনি গবেষণা করে ‘মিথ অব লাভ জিহাদ‘ নামে একটি বই লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম নারী হিন্দু কোনো পুরুষকে বিয়ে করে তখন হিন্দু এ গোষ্ঠীগুলো তাকে দেখায় প্রেম হিসাবে। যখন তার উল্টোটা ঘটে তখন সেটা হয়ে যায় প্রতারণা-জবরদস্তি।’

আন্তঃধর্মীয় দম্পতির মধ্যে বিবাহ সহজতর করার জন্য কাজ করে থাকে ধানাক। প্রধানত হিন্দু-মুসলিম এসব দম্পতি যখন বিয়ে করতে গিয়ে পরিবার ও সমাজের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হন তখন এরা ধানাক নামে এই এনজিও’র কাছে সাহায্য চাইতে আসেন। এসব দম্পতির বয়স সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর। তারা চান ধানাক যেন তাদের বাবা-মার সাথে কথা বলে তাদের রাজি করায়। এতে ব্যর্থ হলে, আইনি সহযোগিতা চায় তারা। ধানাকের কাছে যারা আসেন, তাদের ৫২ শতাংশ হিন্দু নারী যারা মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করতে চান। আর ৪২ শতাংশ মুসলিম নারী যারা হিন্দু প্রেমিককে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ধানাকের প্রতিষ্ঠাতা আসিফ ইকবাল বলেন, উত্তর প্রদেশে নতুন ধর্মান্তরবিরোধী আইন পাস হওয়ার পর থেকেই বিবাহ করতে চাইছেন এমন দম্পতিদের কাছ থেকে অনেক কল আসছে। বিবিসিকে ধানাকের প্রতিষ্ঠাতা আসিফ ইকবাল বলেন, ‘হিন্দু পরিবার বলুন আর মুসলিম পরিবারই বলুন তারা কেউই চায় না তাদের সন্তানরা অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করুক। বিয়ে ঠেকাতে পরিবারগুলো যে কোনো পন্থা নিতে প্রস্তুত। তারা এমনকি তাদের নিজেদের মেয়ের দুর্নাম ছড়াতেও পিছপা হয় না, যাতে মেয়ের প্রেমিক পিছিয়ে যায়। তথাকথিত এ লাভ-জিহাদ এ ধরনের আন্তঃধর্ম প্রেম আটকানোর আরেক চেষ্টা।’

ভারতে আন্তঃধর্মীয় বিবাহগুলো বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে নিবন্ধিত রয়েছে, যা ৩০ দিনের সময়কালের আদেশ দেয়। কিন্তু দম্পতিরা এ সময়ের মধ্যে প্রতিশোধ এবং প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয়ে জীবন যাপন করে এবং এখন এ আইনের কারণে তার রেশ আরও অনেক বেশি। বেশিরভাগ দম্পতি আত্মগোপনে থাকাকালে তাদের চাকরি হারায়। তারা চিন্তিত এবং ভীত-সন্ত্রস্ত। তবে তারা বলে যে, একে অপরের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখেছে এবং প্রতিক‚লতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, প্রেম অন্ধ নয়, বরং ঘৃণা অন্ধ। সূত্র : বিবিসি।



 

Show all comments
  • Shaikh Khalilur Rahman ১৬ মার্চ, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
    ইসরায়েল আর মিয়ানমারের পর মুসলমানরা সবচেয়ে অনিরাপদ হলো ভারতে। ভারতের ২৫ কোটি মুসলমানের জন্য ভারত একটা উন্মুক্ত কারাগারে পরিনত হয়েছে!
    Total Reply(1) Reply
    • aakash ১৬ মার্চ, ২০২১, ৪:৫২ পিএম says : 0
      orom mone hoy
  • Mehadi Hasan ১৬ মার্চ, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    ওরা,জানে ইসলাম ই একমাত্র সত্য ধর্ম যেটা ওদের অস্তিত্ব, কুসংস্কার, কে মিটিয়ে দিবে, তাই ইসলাম কে নিভিয়ে ফেলার পায়তারা করে। কিন্তু ওরা জানে না ইসলাম প্রদিপের আগুন নয় যে ফু দিলেই নিভে যাবে, ইসলাম এমন এক ধর্মের নাম যত নিভাতে চাইবি ততই জ্বলে উঠবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Baker Hasib ১৬ মার্চ, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    পৃথিবীর সব চেয়ে সাম্প্রদায়িক দেশ এখন ভারত। চা আওয়ালার হাতে দেশ থাকলে যা হয় আর কি। অনেক টা বান্দরের হাতে ক্ষুর দেয়ার মত।
    Total Reply(0) Reply
  • সাবিত আহমেদ ১৬ মার্চ, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    একটা ধর্ম কতটা দেউলিয়া হলে এইভাবে ধর্মে আটকে রাখার আইন করতে পারে !
    Total Reply(0) Reply
  • Maksud Hossain Bappy ১৬ মার্চ, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    আজ যদি বাংলাদেশ কিংবা কোন মুসলিম দেশে এমন আইন হতো,এমন ঘটনা ঘটতো।তাহলে সারাবিশ্বের মিডিয়া তুলপার হয়ে যেত & জাতিসংঘ থেকে চাপ আসতো। আফসোস ইসরায়েলের পরবর্তীতে মনুষ্যত্বহীন কোন জাতি থাকলে সেটা ভারত।
    Total Reply(0) Reply
  • Towhid ১৬ মার্চ, ২০২১, ৬:৪২ পিএম says : 0
    All the heinous acts by Indian people would have been stopped if the middle east oil rich countries deported all the non Muslim employees. So technically the Arab countries are liable for these
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ