নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
‘ঢাকায় আরো ভয়ঙ্কর হয়ে আসছি’- চট্টগ্রাম টেস্টে অবিস্মরণীয় জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ফিল সিমন্সের হুঙ্কার বেশ সিরিয়াসলিই নিয়েছে তার শিষ্যরা। তবে সেই হুমকিকে নিছকই একটি ‘বুলি’ মনে করে যে ভুল করেছে বাংলাদেশ, দু’দলের প্রথম ইনিংসই তার জ্বলজ্বলে প্রমাণ।
মিরপুরে টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ম্যাচের লাড়াম নিজেদের হাতে রেখে এগিয়ে চলছে উইন্ডিজ। চট্টগ্রামে অতিমানবীয় ইনিংস খেলা কাইল মেয়ার্সকে ‘অল্পতেই’ ফিরিয়ে যে স্বস্তির ‘খাঁজ’ পেয়েছিলেন মুমিনুল হকের দল, সেটি উবে গিয়েছে জশুয়া ডি সিলভা আর এনক্রুমা বনারের ব্যাটে। বেশ কায়দা করেই ভোগালেন বাংলাদেশের বোলারদের। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হওয়ায় তাদের কাছ থেকে এমন ব্যাটিং অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু টুকটাক ব্যাটিং করতে জানা আলজারি জোসেফও যেন ‘বিরাট’ হয়ে দাঁড়ালেন টাইগারদের নির্বিষ বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে। উইন্ডিজের ৮ নম্বর এই ব্যাটসম্যান থামেন ৮২ রানে। তাতেই প্রথম ইনিংসে ৪০৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পেল উইন্ডিজ। পরে সেই জোসেফই নিজের আসল কাজেও হলেন সফল, বল হাতে ফেরালেন তামিমকে। বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত রান তখন ৬৯! যাতে ফুটে উঠেছে টপ অর্ডারের করুণ চিত্র। গতকাল দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১০৫। ফলোঅন চোখ রাঙাচ্ছে স্বাগতিকদের।
চট্টগ্রাম টেস্টে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে গেছে বাংলাদেশ। সিরিজে সমতা ফেরাতে হলে মিরপুরে জয়ের বিকল্প নেই টাইগারদের। তার জন্য হয়তো নিজেদেরকে কিছুটা আগ্রাসী করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল দলটি। কিন্তু সেটি কাল হলো ডমিঙ্গোর শিষ্যদের। অতি আগ্রাসন দেখাতে গিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনে ব্যাটসম্যানরা। প্রতিপক্ষ বোলারদের আর কষ্ট করতে হয়নি। নিজেরাই উপহার দিয়েছেন উইকেট। অন্যদিকে ক্ষুরধারহীন সাদামাটা বোলিংয়ে আগেই প্রতিপক্ষের বিশাল রানের পাহাড়ের নিচে মুমিনুলে দল। নিঃসন্দেহে মিরপুর টেস্টের নিয়ন্ত্রণ ক্যারিবিয়ানদের হাতে।
লাল বলের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের মূলত ধৈর্য ধারণ করতে হয়, লোভ সামলাতে হয়। কিন্তু সেটা করতেই ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকার (০) আউট হলেন স্বাভাবিক ওয়ানডে স্টাইলের ব্যাটিংয়ের নজির দেখিয়ে। ফ্লিক করতে গিয়ে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ তুলে দেন মেয়ার্সের হাতে। আর নাজমুল হোসেন শান্ততো (৪) লোভই সামলাতে পারেননি। অফস্টাম্পের বাইরে রাখা ফুল লেংথের বলটিতে বোলার চেয়েছিলেন ব্যাটসম্যান ড্রাইভ করতে এগিয়ে আসুক। এলেনও। ফলাফল গালিতে বনারের হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন। ১১ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বড় চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
সে চাপ কাটাতেই হয়তো ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং শুরু করেন তামিম। দারুণ কিছু শটে রানের গতি সচল রাখেন। দলীয় ফিফটি পূরণ হতে লাগেনি ১২ ওভারও। চার নম্বরে নামা অধিনায়ক মুমিনুল হকও (২১) দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন। পেসারদের বলে দৃষ্টিনন্দন আপার কাট ও ফ্লিক করে কিছু বাউন্ডারিও আদায় করে দেন অধিনায়ক। তাতে টাইগারদের প্রত্যাশাটা বড় হচ্ছিল। কিন্তু দীর্ঘদেহী স্পিনার রাহকিম কর্নওয়ালের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ভাঙে ৫৮ রানের জুটি।
অবশ্য অধিনায়কও নিজের উইকেট দিয়েছেন ওই লোভ সামলাতে না পেরে। অফস্টাম্পের বাইরে বলটি ব্যাটসম্যানকে ড্রাইভ করতেই উদ্দীপ্ত করেছিলেন কর্নওয়াল। আর নিজের দীর্ঘ দেহের সুবিধা আদায় করে তুলে নেন বাড়তি বাউন্স। তাতেই লাইন মিস করেন টাইগার অধিনায়ক। উইকেটরক্ষক জশুয়ার হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। বাংলাদেশ আবারও পড়ে যায় চাপে।
সেটি সামলে নেওয়ার মূল দায়িত্ব ছিল সেট ব্যাটসম্যান তামিমের। কিন্তু উল্টো দলকে আরও বড় চাপে ফেলে যান এ ওপেনার। মূলত জোসেফের বলে আগে ছয়টি বাউন্ডারি তুলে নেওয়ায় হয়তো আত্মবিশ্বাসটা তুঙ্গে ছিল। কিন্তু এবার আর ঠিক মতো হয়নি। ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো শেন মোসলের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে আসেন এ ওপেনার। ফলোঅনে পড়ার শঙ্কাটা তখনও তীব্রভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ৫২ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৪ রান করেন তামিম।
এরপর অবশ্য মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে নেমেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। অবিচ্ছিন্ন ৩৪ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছেন এ দুই ব্যাটসম্যান। দিনশেষে ৪ উইকেটে ১০৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ। মুশফিক ২৭ ও মিঠুন ৬ রানে ব্যাট করছেন। ফলোঅন এড়াতে এখনও ১০৫ রান করতে হবে টাইগারদের।
এর আগে প্রথম দিনের ৪ উইকেটে ২২৩ রান নিয়ে খেলতে নামা উইন্ডিজ শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে আরও ১৮৬ রান যোগ করে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯২ রানের ইনিংস খেলেন জশুয়া। ১৮৭ বলে ১০টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। জোসেফের ব্যাট থেকে আসে ১০৮ বলে ৮২ রান। তার মারমুখী ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৫টি ছক্কা। ২০৯ বলে ৭টি চারের সাহায্যে বনার করেন ৯০ রান। বাংলাদেশের পক্ষে তাইজুল ও রাহী পেয়েছেন ৪টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
উইন্ডিজ ১ম ইনিংস : (আগের দিন ২২৩/৫) ১৪২.২ ওভারে ৪০৯ (বনার ৯০, জশুয়া ৯২, জোসেফ ৮২, কর্নওয়াল ৪*, ওয়ারিক্যান ২, গ্যাব্রিয়েল ৮; রাহি ৪/৯৮, মিরাজ ১/৭৫, নাঈম ০/৭৪, তাইজুল ৪/১০৮, সৌম্য ১/৪৮)। বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩৬ ওভারে ১০৫/৪ (তামিম ৪৪, সৌম্য ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ২১, মুশফিক ২৭*, মিঠুন ৬*; গ্যাব্রিয়েল ২/৩১, কর্নওয়াল ১/১৮, জোসেফ ১/৩৪, মেয়ার্স ০/১২, ওয়ারিক্যান ০/১০)।
দ্বিতীয় দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।