Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে কৃষকদের চাক্কা জ্যাম কর্মসূচিতে অবরুদ্ধ দিল্লি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে শুরু হয়েছে লাখ লাখ কৃষকের চাক্কা জ্যাম অবস্থান। এর জেরে দিল্লির সঙ্গে হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থান যাওয়ার জাকীয় সড়কের বিভিন্ন মোড় অবরুদ্ধ। গতকাল বেলা ১২টা থেকে দিল্লি সড়কপথে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল দেশের উত্তর-পশ্চিমের রাজ্যগুলো থেকে। সংযুক্ত কিষান মোর্চার এ আন্দোলনের পুরোভাগে সারা ভারত কিষাণসভা, ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন। রয়েছে আরও সংগঠন।
কৃষকসভা জানিয়েছে, এদিনের চাক্কা জ্যাম বড়সড় আকার নেয় খোদ কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরের নিজের এলাকা গোয়ালিয়রেই। স্থানীয় কৃষকরা কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে চাক্কা জ্যাম করেন গোয়ালিয়রের সর্বত্র। কৃষিমন্ত্রীর গ্রাম অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর এলাকা ছাড়াও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার কৃষক বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছেন। অন্যদিকে দিল্লিতে চাক্কা জ্যাম হবে না বলেই জানিয়েছিল কৃষক সংগঠনগুলো। গত ২৬ জানুয়ারি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর দিল্লির সবকটি চেকপোস্টে অন্তত ৫০ হাজার নিরাপত্তাপক্ষী মোতায়েন করা হয়। আন্দোলনকারী কৃষকরা বিশৃঙ্খল ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ চাক্কা জ্যামে অংশ নিচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর এলাকায় চাক্কা জ্যামের প্রভাব দেখে চিন্তিত মধ্যপ্রদেশ সরকার। একইভাবে উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানার সবকটি জাতীয় ও রাজ্য সড়কে অবরোধ চলেছে। সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা জানিয়েছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তাদের বন্ধু কর্পোরেট সংস্থাগুলোর সুবিধা করতে কৃষি আইন এনেছে। এ আইন বাতিল না করা পর্যন্ত ঘেরাও আন্দোলন চলবেই।
এর আগে গত শুক্রবার ভারতের কৃষিমন্ত্রী সংসদে নতুন কৃষি আইনের পক্ষে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। এর ফলে উত্তর ভারতের সাথে রাজধানীর সংযোগকারী তিনটি মহাসড়ক দুই মাসের বেশি সময় ধরে অবরোধ করে রাখা কয়েক হাজার কৃষকের দ্রæত সমাধানের আশা নিষ্প্রভ হয়ে যায়। কৃষকরা পার্লামেন্টে পাস করা তিনটি কৃষি সংস্কার আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।
কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর কৃষকদের সাথে স্থগিত আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য নতুন কোনও প্রস্তাব করেননি। কৃষকরা বিশ্বাস করেন যে, আইনটি গম এবং চালের গ্যারান্টিযুক্ত দাম হ্রাস করে তাদের আয় নষ্ট করবে। আর এটি তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে শক্তিশালী কর্পোরেশনের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করবে।
সিং বলেন, আইনগুলো কৃষিতে আরো বেশি বেসরকারী বিনিয়োগ আনবে এবং গুদাম স্থাপনের মাধ্যমে আয় বাড়বে যেখানে কৃষকরা ফসল সংরক্ষণ করতে পারবেন এবং উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত দামে বিক্রি করতে পারবেন। ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে হাজার হাজার কৃষক ভারতের ঐতিহাসিক লাল দুর্গে ঝড়ের বেগে প্রবেশ করে এবং সংখ্যালঘু শিখ স¤প্রদায়ের পতাকা উত্তোলন করে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়। কৃষক ও সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষে একজন বিক্ষোভকারী মারা যান এবং ৪০০ পুলিশ আহত হন।
কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা এবং বহুজন সমাজ পার্টির সতীশ মিশ্রসহ বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, সরকার প্রতিবাদের স্থানে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ কেটে এবং ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে কৃষকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। তিনি নয়াদিল্লি সীমান্তের বাইরে তিনটি প্রধান প্রতিবাদকারী স্থানে তীব্র নিরাপত্তা গড়ে তোলারও আপত্তি জানিয়েছেন। তোমর বিরোধী দলগুলোর প্রতি কৃষকদের উসকে দেয়ার অভিযোগ করেন।
এদিকে সীমান্ত-কাঁটাতার পেরিয়ে ইতিমধ্যেই দেশের অন্নদাতাদের জন্য আওয়াজ তুলেছেন মার্কিন পপ তারকা রিহানা এবং কিশোরী পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। গোটা বিশ্বকে তারা চোখে আঙুল দিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, আজকের প্রেক্ষিতে এ কৃষক আন্দোলন কতটা প্রাসঙ্গিক এবং কেন এ বিষয়ে সরব হওয়া প্রয়োজন। যা স্বাভাবিকবশতই গেরুয়া শিবিরের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার রিহানা, গ্রেটার মতো অস্কারজয়ী অভিনেত্রী সুজান সার‌্যান্ডনও কৃষকদের পক্ষে অবস্থান জাহির করলেন। ভারতের কৃষক বিক্ষোভ যে এ মুহ‚র্তে আন্তর্জাতিক ময়দানেও বেজায় চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে, তা বলাই বাহুল্য।
কৃষক আন্দোলন নিয়ে এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেই প্রতিবেদনই টুইটারে শেয়ার করে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে সুর চড়ান সুজান সার‌্যান্ডন। টুইটে তিনি লেখেন, ‘ভারতের কৃষক আন্দোলনের জন্য আমার সহমর্মিতা রইল। এখানে পড়ুন, ওরাঁ কারা? কেনই বা ওঁদের এই আন্দোলন’। সুজান সার‌্যান্ডনের এমন টুইটের পরই তা দাবানল গতিতে ভাইরাল হতে থাকে। নেটজনতারাও একের পর এক ভারতের কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে মত দিতে থাকেন। এখনও পর্যন্ত ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ সার‌্যান্ডনের টুইটে লাইক করেছেন। কমেন্ট করেছেন প্রায় ৭ হাজার জনেরও বেশি। ভারতের কৃষকদের এ আওয়াজ যে ক্রমশই আন্তর্জাতিক স্তরে আরও জোরালো হয়ে উঠছে, অস্কারজয়ী অভিনেত্রীর টুইট-ই তার প্রমাণ। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, কলকাতা২৪ ও ডন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ