পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রেলওয়ের অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। এ কারণে বাস্তবায়নের সময় যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ব্যয়। প্রকল্পের সুবিধা পেতেও বিলম্ব ঘটছে। কেন প্রকল্প বাস্তবায়নে এই ধীরতা, এর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের থাকলেও এব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। রেলওয়েমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ইংরেজি দৈনিক নিউএজকে জানিয়েছেন, করোনাকারণে রেলওয়ের সকল প্রকল্পের অগ্রগতিই ব্যহত হয়েছে। এটা অবশ্যই একটা কারণ; তবে একমাত্র কারণ নয়। অভিজ্ঞজনের মতে, তদারকি ও বাস্তবায়নদৃঢ়তার অভাব এবং রেলওয়ে-মাস্টারপ্লানের ত্রুটি-বিচ্যুতই কাজে ধীরগতি ও ব্যয়বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তাদের আরো অভিমত, কর্তৃপক্ষ এই করোনাকালে প্রকল্প বাস্তবায়নের যে সুযোগ পেয়েছিল, তা ব্যবহার করতে পারেনি। এ সময় দেশজুড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। তখন সহজেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া যেতো। জানা গেছে, রেলওয়ের প্রকল্পের সংখ্যা ৩৯টি। এর মধ্যে ২২টির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালে। ৬টির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালে, ৩টির ২০২৩ সালে, ৪টির ২০২৪ সালে এবং ১টির ২০২৫ সালে। এসব প্রকল্পের মধ্যে কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়নসময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মিটারগেজ লাইনের পাশাপাশি ডুয়েলগেজ লাইন বসানোর প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা যায়। ২০২০ সাল পর্যন্ত এর কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ দশমিক ১ শতাংশ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যা প্রথমে নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে সাকুল্যে ১০৭ শতাংশ বেশি। এই নিয়ে প্রকল্পের ডেডলাইনও তৃতীয় দফা বাড়ানো হবে। অপর ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টারের এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, খুলনা-মংলা রেললাইন প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১০ সালে। ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এই রেললাইনের নির্মাণ কাজ ৩ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তুু বাস্তবে এর কাজ শুরু হয় অনুমোদনের ৬ বছর পর। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ। প্রকল্পব্যয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯০১ কোটি টাকা, যা প্রথম নির্ধারিত ব্যয় থেকে ১২০ শতাংশ বেশী।
প্রকল্প বাস্তবায়নের ডেডলাইন বার বার বাড়ানো যেমন অভিপ্রেত তেমনি ব্যয় বাড়ানোও অগ্রহণযোগ্য। আমাদের দেশে এটা একটা কালচারে পরিণত হয়েছে। সরকারের নেয়া প্রায় কোনো প্রকল্পই যথাসময়ে ও নির্ধারিত ব্যয়ে সম্পন্ন হয় না। অথচ এদেশেই জাপানিরা দেখিয়েছে, ঠিকসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায় এবং তাও করা যায় নির্ধারিত অর্থের চেয়ে কম খরচে। আমাদের সেনাবাহিনীও এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জনগুরুত্বসম্পন্ন বিশেষ বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর বাড়তি সময় লাগেনি। অনেক ক্ষেত্রে সময়ের আগেই কাজ শেষ হয়েছে। কোনো কোনো প্রকল্পের ব্যয়ও প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে কম হয়েছে। এ দুটি নজিরের উল্লেখ থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ত্রুটিমুক্ত প্রকল্প, যথাযথ প্রস্তুতি, দৃঢ় অঙ্গীকার, সততা ও আন্তরিকতা থাকলে প্রাক্কলিত ব্যয়ে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব। অনিবার্য কারণ বা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বেশি হতে পারে। এই বাড়তি সময় ও ব্যয়ে কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি উঠতে পারে না। রেলওয়ের যেসব প্রকল্প ঝুলে গেছে, সেগুলো নতুন করে নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কিংবা আর কোনো ব্যয় বাড়বে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ ব্যাপারে স্বচ্ছতার পাশাপাশি কঠোর জবাবদিহিতাও আবশ্যক। শুধু রেলওয়ের প্রকল্প কেন, সড়ক ও সেতুসহ যাবতীয় নির্মাণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই সময়হরণ ও বাড়তি ব্যয়বহনের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ হয়ে থাকে জনস্বার্থে এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। বিলম্বিত বাস্তবায়নে জনস্বার্থ ক্ষুন্ন হয় এবং টাকার হয় অপচয়। এই প্রায় অবধারিত বাস্তবতার পেছনে অন্যান্য কারণ, যাই থাক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগাজস এবং অর্থ লোপাটের অভিসন্ধি যে বিশেষ কারণ, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাট বন্ধ না হলে প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক সময় ও বেশি ব্যয় বন্ধ করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন উপলক্ষে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের তাকিদ দিয়েছেন। প্রকল্পের ব্যয় সাশ্রয়েরও পরামর্শ দিয়েছেন। লক্ষ্য করা যায়, রেলওয়ে হোক, সড়ক ও সেতু হোক, হোক অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ-কোনো ক্ষেত্রেই তার তাকিদ ও পরামর্শ মান্য করা ও অনুসরণ করা হচ্ছে না। সন্তোষজনক কারণ ছাড়া কোনো প্রকল্পের কাজই বিলম্বিত করা যাবে না, ব্যয় বাড়ানো যাবে না। অনেক সময় প্রকল্প নিখুঁতভাবে প্রণীত না হওয়ায় মাঝপথে সমস্যা দেখা দেয়। কখনো টাকা ছাড়ে দেরি হয়। কখনো জমি অধিগ্রহণে বেশি সময় লাগে। এসব কাজ প্রকল্প শুরুর আগেই করতে হবে। যে কোনো প্রকল্প শুরু হলে বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে, অগ্রগতির খতিয়ান নিতে হবে। ঠিকাদারদেরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এবং যে কোনো মূল্যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ লোপাট ডেডস্টপ করতে হবে। এসব করা হলে আশা করা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসবে। রেলওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়কে আরো সক্রিয় ও তৎপর হতে হবে। সরকার রেল যোগাযোগ বাড়াতে এবং পরিবহনে রেলওয়ের ভূমিকা সম্প্রসারিত করতে সচেষ্ট। প্রকল্পগুলোর দিকে নজর দিলেই সেটা বুঝা যায়। বিশ্বজুড়েই রেলওয়েকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। রেলব্যবস্থার উন্নয়নে যা কিছু সম্ভব সব কিছুই করা হচ্ছে। রেলওয়ের এই নবযাত্রায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকতে পারে না। রেলওয়ে সবচেয়ে নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী পরিবহন। একথা স্মরণে রেখেই রেলওয়ের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দ্রুতায়িত করতে হবে। রেলওয়ে মন্ত্রণালয়কে একইসঙ্গে যাত্রীসেবাও বাড়াতে হবে। যাত্রী সেবার ব্যাপক অবনমন ঘটেছে বলে অনেকেই রেলভ্রমণ পরিহার করে থাকে। রেলওয়েকে অবশ্যই জনপ্রিয় ও প্রত্যাশিত সেবাদায়ী পরিবহনে পরিণত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।