Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিল্লি কাঁপিয়ে প্রতিবাদ ক্যাম্পে ফিরেছেন ভারতীয় কৃষকরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে ঝড়ের গতিতে ঐতিহাসিক লাল কেল্লায় প্রবেশ করা কয়েক হাজার কৃষক ফের রাজধানীর বাইরে তাদের প্রতিবাদ ক্যাম্পে ফিরে গেছেন। দুই মাসের অবস্থান ধর্মঘটের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত দিনে মঙ্গলবার একজন প্রতিবাদকারী নিহত এবং ৮০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এদিকে প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানী দিল্লিতে কৃষক বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনায় মোট ২২টি মামলা দায়ের করেছে ভারতের পুলিশ। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত দুইশ’ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট এবং পুলিশ সদস্যদের হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশের দাবি সহিংসতার ঘটনা যাচাই করে অভিযুক্তদের আটকের কাজ চলছে।

নতুন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবারের বিক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে রূপ নেয়। দাঙ্গার বেশে থাকা পুলিশ সদস্যরা ১০ হাজারের বেশি ট্র্যাক্টরসহ পদব্রোজে আগত কৃষকদের টিয়ার গ্যাস ও পানিকামান যোগে হামলা চালিয়ে সরিয়ে দেয়। সতেরো শতকের দুর্গ মোগল সম্রাটের বাড়ীতে তাদের ঝড়োগতির প্রবেশ ভারতীয় নিউজ চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করে। স্মারক তলোয়ার, দড়ি এবং লাঠি নিয়ে কৃষকরা মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী সরকারের জন্য গভীর প্রতীকী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে লাল কেল্লায় প্রবেশ করে ও গম্বুজের শীর্ষে শিখ ধর্মীয় পতাকা টানিয়ে দেয়।

‘এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে’। গতকাল সকালে নয়াদিল্লির পুলিশ অফিসার আন্তো আলফোনস বলেন, বিক্ষোভকারীরা রাজধানীর রাস্তা ছেড়ে গেছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতের মধ্যে নয়াদিল্লির বেশিরভাগ রাস্তা আবার যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বিক্ষোভ আয়োজক সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা বা ইউনাইটেড ফারমার্স ফ্রন্ট শান্তিপূর্ণ ট্র্যাক্টর মার্চ স্থগিত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর আন্দোলনে হস্তক্ষেপ করার জন্য বাইরের দুটি গ্রুপকে দায়ী করে। প্রতিবাদী নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেন, ‘এটি নাশকতা হলেও আমরা দায়বদ্ধতা থেকে বাঁচতে পারি না’।
মোদি সরকার যখন আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে তার বার্ষিক বাজেট উপস্থাপন করবেন তখন আরেকটি মার্চের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবেন কিনা সে সম্পর্কে কিছু বলেননি।

যাদব বলেন, প্রতিবাদী কৃষকদের মধ্যে হতাশা জেগে উঠেছে এবং ‘তারা দুই মাস ধরে যে দাবি করে আসছেন সে বিষয়ে সরকার গুরুত্ব না দিলে আপনি কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করবেন’।
মঙ্গলবারের তীব্র বিক্ষোভ প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনকে ছাপিয়ে গেছে। করোনাভাইরাস মহামারিজনিত কারণে আগেই বার্ষিক সামরিক প্যারেডসহ সব আয়োজন নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ কয়েকটি মেট্রো ট্রেন স্টেশন বন্ধ করে দেয় এবং বিক্ষোভ রোধে সরকারের বারবার কৌশল হিসাবে রাজধানীর কিছু অংশে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছিল। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের শিখ-কৃষকরা নভেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে যাত্রা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। তার পর থেকে তীব্র শীত এবং ঘন ঘন বৃষ্টিপাতের কারণে তারা শহরের প্রান্তে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে এবং খামারের আইন বাতিল না করা হলে তারা অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীরাজা চৌধুরী বলেন, কী হতে যাচ্ছে তা আঁচ করতে এবং পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ‘কৃষকরা যদি সমগ্র ভারতে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয় তবে কতিপয় বিরোধীর পক্ষ থেকে কৃষকদের উসকে দেয়ার অভিযোগ তুলে আপনি এ বিক্ষোভকে উপেক্ষা করতে পারবেন না’।

পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কৃষকদের সাথে সংঘর্ষে তাদের ৮৬ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ প্রতিবাদকারীদের হাত থেকে বাঁচতে দুর্গ এলাকায় একটি গভীর শুকনো ড্রেনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আহত হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তার ট্র্যাক্টর উল্টে একজন প্রতিবাদকারী মারা গেছে। তবে কৃষকরা জানিয়েছে, তাকে গুলি করে মারা হয়েছে। বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত প্রতিবাদকারীকে টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়।

পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারী কৃষকরা অনুমোদিত বিক্ষোভের রুট উপেক্ষা করে ‘সহিংসতা ও ভাঙচুর’ শুরু করে। আটটি বাস ও ১৭টি ব্যক্তিগত গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগে চারটি মামলা হয়েছে।

সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে, সেপ্টেম্বরে সংসদে পাস হওয়া কৃষি আইন কৃষকদের উপকার করবে এবং বেসরকারী বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে তুলবে। তবে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন যে, এটি কৃষি কর্পোরেট চালু করবে এবং তাদের পেছনে ফেলে দেবে। সরকার আইনটি ১৮ মাসের জন্য স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছে, তবে কৃষকরা পুরো বাতিল হওয়ার চেয়ে কম কিছু চায় না।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে মোদির সরকার বেশ কয়েকটি বিভ্রান্তিতে পড়েছে। মহামারিটি ইতোমধ্যে ভারতবর্ষের অর্থনীতিকে তার প্রথম মন্দায় ফেলেছে, সামাজিক কলহ আরো বিস্তৃত হয়েছে এবং করোনাভাইরাস মহামারি সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে তার সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
২০১৯ সালে তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে প্রথম বড় প্রতিবাদ প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল। বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপ আয়োজিত সমাবেশে বলা হয়েছিল যে, এনআরসি ও সিএএতে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। হিন্দু অধ্যুষিত ভারতে মুসলমানরা জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ এবং প্রায় ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যায় শিখরা প্রায় ২ শতাংশ। সূত্র : এপি, ডন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ