পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. আলমগীর। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একই দাবি করেছেন। এইসঙ্গে তিনি নির্বাচন উৎসবমুখর হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। বলা বাহুল্য, যেখানে নির্বাচন প্রায় একতরফা, সেখানে নির্বাচন তো শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরই হবে। নির্বাচনে শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল না সরকারি দলের। দুর্বল প্রতিপক্ষ বিএনপি তেমন একটা সক্রিয় ছিল না। তারপরও নির্বাচন প্রশ্নের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। গতকালের পত্রপত্রিকাই সাক্ষ্য দিচ্ছে, নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, সহিংসতা হয়েছে। কেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদান, প্রতিপক্ষের নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেয়া, সংঘাত-সংঘর্ষ, নির্বাচন বর্জন- কোনো কিছুই বাদ যায়নি। বিএনপির একজন নির্বাচিত কাউন্সিলর নিহত পর্যন্ত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জের নির্বাচিত এই কাউন্সিলরের নাম তরিকুল ইসলাম খান। তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় সন্ধ্যার পর। নির্বাচনের প্রচারের সময়ও দু’জন নিহত হয়। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, প্রতিপক্ষ যথেষ্ট শক্তিশালী ও সক্রিয় হলে নির্বাচনে সংঘাত-সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা হয়তো আরো বেশি হতো। পৌরসভার এই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিত আগের চেয়ে বেশি হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা স্বীকার করেছেন। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে এমন উপস্থিতি স্বাভাবিক বলেই তারা মনে করেন। কিন্তু আসলেই কি এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে? নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, এ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না। পৌরসভার নির্বাচনে সহিংসতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। সহিংসতা ও নির্বাচন একসাথে চলতে পারে না। একতরফা নির্বাচনের ফলাফলও এক তরফা হয়েছে। বেসরকারি হিসাবে আওয়ামী লীগের ৪৬ জন, বিএনপির চারজন এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৯ জন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। একটি পৌরসভার ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।
পৌরসভাসহ অন্যান্য স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচিত করার জন্যই এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ একটু বেশি হয়। উত্তেজনা, বিরোধ-সংঘাত ও সহিংসতা কম হয়। একইভাবে সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের আশংকাও কম থাকে। অথচ এখন আমরা এসবের ব্যতিক্রমই প্রত্যক্ষ করছি। নির্বাচনব্যবস্থা বলতে যে একটা কিছু আছে, নির্বাচন দেখে তা বুঝার উপায় নেই। নির্বাচন কমিশন দায়িত্বপালনে বরাবর ব্যর্থতার পরিচয়ই দেয়নি, নির্বাচনব্যবস্থাকে ভেঙ্গেচুরে শেষ করে দিয়েছে। একদলীয় নির্বাচন নিশ্চিত করাই যেন নির্বাচন কমিশনের একমাত্র দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে যেমন, তেমনি স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনেও এটা লক্ষ করা যাচ্ছে। গত জাতীয় নির্বাচন কেমন হয়েছে তা বিশদ উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। সবাই জানে, রাতের ভোটে কীভাবে সরকারি দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। পরবর্তীতে আর যেসব নির্বাচন ও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার একটিও গণআস্থা লাভ করতে পারেনি। বার বার প্রতারিত হওয়া মানুষের মধ্যে নির্বাচন, এমনকি রাজনীতির প্রতি একরকম বিমুখতা দেখা দিয়েছে। এটা গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য মোটেই শুভ নয়। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার দায়িত্ব অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের। আর নির্বাচন কমিশনকে সর্বোতভাবে সহায়তা করা সরকারের অপরিহার্য কর্তব্য। আমরা লক্ষ করছি, কাক্সিক্ষত নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার যেমন ঘাটতি রয়েছে, তেমনি আন্তরিকতারও অভাব আছে। এটাই বিদ্বৎজন ও বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত অভিমত যে, এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা আদৌ সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনে যারা আছেন তারা নিরপেক্ষ নন। তাদের পক্ষপাতপুষ্ঠতা নির্বাচনব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিয়েছে। সরকারি দল বা সরকার এ নির্বাচন কমিশনের প্রতি সন্তুষ্ট ও আস্থাশীল এজন্য যে, তার অধীনে যে কোনো নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত। সরকারের এই মনোভাব এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি তার সমর্থন নির্বাচন কমিশনকে রীতিমত বেপরোয়া করে তুলেছে। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থার অকার্যকারিতা সরকারের জন্য মোটেই সুনাম ও শ্লাঘা বহন করে না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক দায়িত্বপালনে শোচনীয় ব্যর্থতার পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, এটা কারো অজানা নয়। নির্বাচন কমিশন অনিয়ম দূর বা রোধ করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। অতীতে কোনো নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। সেটাও উঠেছে এই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। বক্তৃতা দিয়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন চৌধুরী ও কবিতা খানমের বিরুদ্ধে। বেনিয়ম গাড়ি ব্যবহার ছাড়া ইভিএম কেনার ক্ষেত্রেও মোটা দুর্নীতি হয়েছে বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। যেহেতু এই কমিশন দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, সুতরাং তার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিৎ। না হলে পদত্যাগে বাধ্য করা উচিৎ। কিছুদিন আগে বিশিষ্ট কতিপয় নাগরিক নির্বাচন কমিশনের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্টের কাছে। বস্তুত, এ নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্র দিয়েছে। তারা যথেচ্ছ অর্থব্যয় করেছেন, গাড়ি-বাড়িসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করেছেন। তার পরও তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এমতাবস্থায়, তাদের স্ব স্ব পদে বহাল থাকার নৈতিক অধিকার তারা হারিয়েছেন। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের খুব বেশিদিন বাকী নেই। নির্বাচন কমিশনেরও মেয়াদ প্রায় শেষ। কাজেই, তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে ভালো। না করলে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। সরকার এটা করলে তার ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। নিরপেক্ষ ও উচ্চ নৈতিক মানসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল নির্বাচন কমিশনই কাক্সিক্ষত নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে। তেমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।