মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
চিরাচরিত অতীতের মতোই এবারও কথা রাখলো না ভারত। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিজ দেশ (ভারত) ও বাংলাদেশে একই দিনে শুরুর ‘কথা’ দিলেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখেনি বন্ধু প্রতীম দেশটি। গতকাল দেশটিতে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও বাংলাদেশে এখনো ভ্যাকসিন আমদানিই করেনি।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইই) শীর্ষ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন গত ৪ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানান, ‘ভারতের নিজস্ব চাহিদা না মিটিয়ে ভ্যাকসিন রফতানি করা হবে না’। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে এই খবর প্রচার হওয়ার পর টিকা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের স্ববিরোধী কথাবার্তায় মানুষের মধ্যে শুরু হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা চীনসহ অন্য যে কোনো দেশ থেকে টিকা আনার জন্য বিশেষ ক‚টনৈতিক তৎপরতা শুরুর পরামর্শ দেন। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, ঢাকায় কর্মতর হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী জানান, ভারতে যেদিন টিকা কর্মসূচি শুরু হবে একই দিন বাংলাদেশেও করোনার টিকা দেয়া হবে। কিন্তু গতকাল ভারত টিকা কর্মসূচি শুরু করলেও বাংলাদেশে টিকা দেয়া শুরু হয়নি। এমনকি জানুয়ারির শেষে বাংলাদেশ টিকা পাবে এমন প্রচারণা থাকলেও বাংলাদেশে টিকা রফতানির প্রকৃত তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অথচ বাংলাদেশ গত ৪ জানুয়ারি তিন কোটি ডোজ টিকার দাম ৬শ কোটি টাকা পরিষোধ করেছে।
ভারতে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার সারা দেশের তিন হাজার ৬টি কেন্দ্রে একই সঙ্গে টিকাদান কর্মসূচির সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতিটি কেন্দ্রে ১০০ জন করে মোট প্রায় তিন লাখ স্বাস্থ্য-কর্মীকে (ডাক্তার, নার্স) এই টিকা দেয়া হয়।
টিকাদান কর্মসূচির সূচনা করে এক ভিডিও কনফারেন্সে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ইতিহাসে এত বড় টিকাদান কর্মসূচি এই প্রথম। তবে টিকাদান শুরু হলেও, মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখায় ঢিলেমি দেয়া যাবে না। প্রথম দফায় চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স চালক, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাই-কর্মীরা টিকা পাচ্ছেন। এর পরে পুলিশ, সামরিকবাহিনীর সদস্যরা এবং অন্যান্য করোনা যোদ্ধাদের টিকা দেয়া হবে। প্রথম দফায় টিকা পাবেন তিন কোটি মানুষ। দ্বিতীয় ধাপে টিকা দেয়া হবে ৫০ বছরের বেশি বয়স্কদের- বিশেষত যাদের আগে থেকেই কোনও না কোনও অসুস্থতা রয়েছে। ভারতে এদের সংখ্যাটা প্রায় ২৭ কোটি।
ভারতে টিকা দেয়ার জন্য ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ২ হাজার ৩৬০ জন মূল প্রশিক্ষক, সারা দেশে ৬১ হাজার প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবং দু’লক্ষ ভ্যাক্সিনেটার (যারা টিকা দেবেন) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মোট ২১২টি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে টিকা দেয়ার জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। প্রথম দফায় রাজ্যের মোট ৬ লাখ স্বাস্থ্য-কর্মীকে টিকা দেয়া হবে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের টিকা ফাইজার, অ্যান্ট্রোজেনেকা, গ্যামলিয়া, মডার্না, সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর ‘পরীক্ষাম‚লক’ প্রয়োগ শুরু হতে না হতেই বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো আবিষ্কার করা ভ্যাকসিনের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্রয়ের জন্য অগ্রিম অর্থ দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় চীন। ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট চীনা কোম্পানী ‘সিনোভ্যাক’ ভ্যাকসিনের বাংলাদেশে ট্রায়াল চালাতে সম্মত হয়। ঢাকায় কর্মরত চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিনোভ্যাকে পরীক্ষামূলক ব্যবহারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর শুরু হয় প্রসাদ ষড়যন্ত্র। টাকার সঙ্কটের অজুহাতে চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়াল বন্ধ রেখে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইই) সঙ্গে ভ্যাকসিনের চুক্তি করা হয়। ভ্যাকসিন নেয়ার লক্ষ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের চুক্তিতে সই করেন। অতপর ৪ জানুয়ারি তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের ম‚ল্য হিসেবে ৬শ’ কোটি টাকা অগ্রিম পাঠানো হয়। এ টাকা ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়াকে (এসআইই) অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। সরকার থেকে জানানো হয় ভারত প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পাঠাবে। দেশবাসী আশ্বস্ত হন ভারত ও বাংলাদেশে একই দিনে টিকা দেয়া শুরু হবে।
ওই সময় একই দিনে দুই দেশে টিকা দেয়া শুরু হবে জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। ভারতে উৎপাদিত টিকা বাংলাদেশ প্রথম থেকেই পাবে। টিকা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভারতের যেদিন শুরু হবে সেদিনই প্রতিবেশী বাংলাদেশের জনগণ টিকা পাবে। ঢাকায় কর্মরত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছিলেন, দুই দেশে এক সঙ্গে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। অথচ সে কথা রাখলো না ভারত।
ভারতে করোনা টিকা দেয়া শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে টিকা না পাঠানো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ফেসবকু, ব্লগ, টুইটারে বিভিন্ন জন বলেছেন, বাংলাদেশকে কথা দিয়ে কথা না রাখা ভারতের পুরোনো অভ্যাস। তিস্তার পানি ঝুলিয়ে রেখেছে যুগের পর যুগ ধরে অথচ ফেনি নদীর পানি তারা নিয়ে গেছে। উত্তর-পূর্বের ৭ রাজ্যে স্বাধীনতাকামীদের দমিয়ে রাখায় বাংলাদেশ সহায়তা করছে; অথচ ভারত এখনো সীমান্তে হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। তবে গতকাল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান জানিয়েছেন ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকার করোনার টিকা বিনামূল্যে প্রদান শুরু করবে। বেসরকারিভাবে টিকা কীভাবে প্রয়োগ হবে, সেটাও সরকার থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হবে। দেশে করোনার টিকা উৎপাদনের বিষয়ে যাচাই বাছাই চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।