Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ম্যারাডোনার বিদায় ঘুমাতে দেয়নি মেসিকে

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বার্সেলোনা লিওনেল মেসির ‘জীবন’। সম্ভবত তার পার্থিব জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয়। এই ক্লাব মেসির শৈশবের ক্লাব, মেসির ভীষণ ভালোবাসার দল। কাউকে খুব বেশি ভালোবাসলে, খুব কাছাকাছি থাকলে যেমন মাঝেমধ্যে ঠোকাঠুকির শব্দ হয়, মেসি-বার্সেলোনার ক্ষেত্রেও তেমন হয়, যার সর্বশেষ উদাহরণ গত আগস্টে। ভালোবাসার ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে যেতে চেয়েছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা। পরে অনেক পানি ঘোলা হওয়ার পর কাতালান ক্লাবটিতে থেকে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মেসি। তবে এখনই ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বার্সার সঙ্গে এ মৌসুম শেষেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে মেসির। গুঞ্জনটা তাই আগেই উঠেছে। মেসি বার্সাতেই থেকে যাবেন নাকি পাল্টাবেন নিজের ঠিকানা? স্প্যানিশ টেলিভিশন চ্যানেল ‘লা সেক্সতা’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি এ নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনোকিছুই নিশ্চিত করেননি। বার্সা তার কাছে যেমন ‘জীবন’ তেমনি সেই জীবন কখনো ছেড়ে গেলে ভালোভাবেই যেতে চান এই আর্জেন্টাইন।
আর্থিকভাবে দুঃসময় পার করছে বার্সা। এদিকে ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজির মতো ক্লাবগুলো কিনতে চায় ৩৩ বছর বয়সী অন্যতম সেরা এই ফুটবলারকে। ইউরোপের এ দুটি ক্লাব মেসিকে যে পরিমাণ পারিশ্রমিক দিতে চায়, আর্থিক দৈন্যতার কারণে বার্সা পারবে কি না, এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। গত আগস্টে বার্সা ছাড়তে বুরোফ্যাক্সের সেই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে মেসি বলেন, ‘আমি সবকিছুর জন্য দুঃখিত। সব সময় বলে এসেছি বার্সেলোনা আমার জীবন। সেই ১৩ বছর বয়স থেকে এখানে আছি। আর্জেন্টিনার চেয়ে বার্সেলোনায় বেশি সময় ধরে আছি। এখানে সবকিছু শিখেছি। এই ক্লাব আমাকে খেলোয়াড় বানিয়েছে।’ ক্যাম্প ন্যু তে নিজের বর্তমান অবস্থাও জানিয়েছেন মেসি, ‘সত্য কথা হলো ভালো আছি। হ্যাঁ, এটাও সত্য যে গত মৌসুমে বাজে সময় কেটেছে কারণ মৌসুমটা যেভাবে শেষ হলো। এরপর বুরোফ্যাক্স...সত্য হলো আমি-ই শুরুতে একটু পানি ঘোলা করেছি। কিন্তু এখন ভালো আছি এবং সামনে সব শিরোপার জন্য জান দিয়ে লড়তে চাই। আমি জানি ক্লাব এখন বাজে সময় পার করছে। কিন্তু আমি সামনে তাকাতে চাই।’
চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলের হার দিয়ে গত মৌসুম শেষ করেছিল বার্সা। এরপরই বার্সা সভাপতির সঙ্গে মেসির বিরোধের খবর চলে আসে প্রকাশ্যে। মেসি তখন বলেছিলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় এখন সময় পরিবর্তনের। আমি চলে যেতে চাই এবং ভালো করতে চাই।’ কিন্তু নতুন মৌসুমের এ পথ পর্যন্ত আসার পর বার্সার সঙ্গে বিরোধ মিটেছে মেসির। অন্তত তার সুখে থাকার কথায় তেমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তবে মৌসুম শেষেই যেহেতু চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আর বার্সাও এর মধ্যে মেসির মেয়াদ বাড়াতে পারেনি, তাই প্রশ্নটা থেকেই যায়। যদিও মৌসুম শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত অন্য কোনো ক্লাবের সঙ্গে কথা বলবেন না, এমন প্রতিশ্রুতি নিজেই দিয়েছেন মেসি। তবে সাক্ষাৎকারে এ কথাও জানিয়ে রাখলেন, ‘আমি জানি বার্সা ছাড়ব কি না। তবে ছাড়লে সবচেয়ে ভালোভাবেই ছাড়তে চাই। কল্পনা করি, হয়তো একদিন এখানে (বার্সা) ফিরব, এই ক্লাবের সঙ্গে কাজ করব, সাহায্য করব। বার্সা যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বড়, আমার চেয়ে বড় তো বটেই। আশা করি নতুন প্রেসিডেন্ট এসে গুরুত্বপূর্ণ সব শিরোপা জিততে সাহায্য করবেন।’
কিন্তু বার্সা ছাড়লে সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে ইউরোপের কোনো ক্লাবের কথাই বলেননি মেসি। যুক্তরাস্ট্রের মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) ক্যারিয়ারের শেষ দিকে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা আছে তার। যদিও বার্সায় এখন সুখেই আছেন বলে সাক্ষাৎকারে জানালেন মেসি। ফুটবল পাড়ায় গুঞ্জন রয়েছে মেজর সকার লিগে ডেভিড বেকহামের ইন্টার মিয়ামিতে খেলতে পারেন মেসি। আর সে গুঞ্জন যে সত্যি তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি, ‘আমি সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। সেখানকার লিগে খেলার কথা ভেবেছি। জানি না, এটা সম্ভব হবে কি না। এটা এখন নয়, ভবিষ্যতের ভাবনা।’
ম্যারাডোনার অবসরের পর এই মেসিকেই আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা ভেবেছেন আশার বাতিঘর। ম্যারাডোনা নিজেও বিভিন্ন সময়ে মেসিকে নিজের যোগ্য উত্তরসূরির মর্যাদা দিয়েছেন। সেই পূর্বসূরি ম্যারাডোনাই যখন সবাইকে ছেড়ে পাড়ি জমালেন পরপারে, কেমন লেগেছিল মেসির? সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছেন ম্যারাডোনাকে নিয়ে নিজের অনুভূতির কথাও।
২০১০ বিশ্বকাপে মেসির সরাসরি গুরুর ভূমিকা পালন করেছিলেন ম্যারাডোনা, জাতীয় দলের কোচ হিসেবে। সেবার যদিও মেসি-ম্যারাডোনার জুটি আর্জেন্টিনাকে প্রত্যাশিত সাফল্য এনে দেয়নি। ঘোচাতে পারেনি বিশ্বকাপ-আক্ষেপ। সেই গুরুই যখন অসীমের পানে পাড়ি জমালেন, মেসি বলে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি, ‘আমার এখনো বিশ্বাস হয় না ম্যারাডোনা নেই। আমি আমার বাবার মাধ্যমে জানতে পারি খবরটা। উনি আমার বাসাতেই ছিলেন, উনিই আমাকে ম্যারাডোনা মারা যাওয়ার সংবাদটা দেন। হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। অস্বাভাবিক লাগছিল। পুরো ব্যাপারটাই ছিল আমার কাছে একটা ধাক্কা। এমনকি এখনো আমি এটা বিশ্বাস করতে পারি না। খুবই কষ্টদায়ক একটা অনুভূতি।’
ম্যারাডোনা চলে যাওয়ার পর সবাই সবার মতো কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ব্যতিক্রম কিছু হননি মেসিও। বরং ম্যারাডোনাকে দেওয়া মেসির শ্রদ্ধার্ঘ্যটা বেশ অভিনব ছিল। কিংবদন্তির বিদায়ে তাঁকে স্মরণ করতে সেদিন সেই নিওয়েলসের স্মৃতিকেই টেনে এনেছিলেন মেসি। ওসাসুনার বিপক্ষে গোল করে বার্সেলোনার জার্সি খুলেছেন, দেখিয়েছেন গায়ে চাপানো নিওয়েলসের জার্সিটা। যে জার্সি পরে তার প্রিয় ক্লাবে খেলতেন ম্যারাডোনা। ত্রিনকাওর কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের ওপর ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে যে শট নিয়েছেন, তা ঠেকানো সম্ভব ছিল না। এরপরই বার্সেলোনার জার্সিটা খুলেছেন। দেখিয়েছেন ‘১০ নম্বর’ জার্সিসংবলিত নিওয়েলসের জার্সি। নিজের ওই উদ্যাপন নিয়েও কথা বলেছেন মেসি। জানিয়েছেন উদ্যাপন নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা, ‘নিউয়েলসের কেউ একজন আমাকে জার্সিটা দিয়েছিল। আমি জার্সিটা আগলে রেখেছিলাম। মনে হলো, এখনই জার্সিটা বের করার সময়। ওদিন আমাকে গোল করতেই হতো। হুট করেই গোলটা চলে এল ওই দিন। যখন আমি একেবারেই গোল আসবে, এটা ভাবিনি।’



 

Show all comments
  • Md. Amirul Islam ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৩৩ পিএম says : 0
    very good
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেসি

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ