Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জানুয়ারি থেকেই পশ্চিমবঙ্গে আগত হিন্দুদের ‘নাগরিকত্ব’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভারতে প্রায় বছরখানেক আগে পাস হওয়া বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র বাস্তবায়ন পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছরের গোড়াতেই শুরু হয়ে যাবে বলে বিজেপি নেতারা ঘোষণা করেছেন। এই আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিমরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন বলে বলা হয়েছে - কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সরকার আগেই জানিয়েছে তারা এই আইন মানবে না।

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র মাসকয়েক আগে এই উদ্যোগকে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল একটা ‘রাজনৈতিক স্টান্ট’ বলেই বর্ণনা করছে। কিন্তু বিজেপি পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গে সিএএ বা এনআরসি চালু করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। দলের সিনিয়র নেত্রী ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী বিবিসিকে এ কথাও জানিয়েছেন, যারা এই নতুন আইনের আওতায় আসবেন তাদের একটি বিশেষ ‘নাগরিকত্ব কার্ড’ দেয়া হবে। বস্তুত গত ডিসেম্বরে ভারতের পার্লামেন্ট নতুন নাগরিকত্ব আইন পাস করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দিল্লির শাহীনবাগ-সহ দেশের নানা প্রান্তে শুরু হয়ে যায় তুমুল বিক্ষোভ আন্দোলন। সেই রেশ না থিতোতেই দেশ করোনা ভাইরাস মহামারি আর লকডাউনের কবলে পড়ে, ফলে নাগরিকত্ব আইনের বাস্তবায়ন কার্যত হয়নি বললেই চলে। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গে ভোটের যখন আর পাঁচ মাসও বাকি নেই, তখন সে রাজ্যে বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়া ঘোষণা করেছেন, সামনের জানুয়ারি বা ফেব্রæয়ারি থেকেই রাজ্যে পুরোদমে ওই আইনের বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যাবে। যার অর্থ হল, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুরা এবার বৈধভাবে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে শুরু করবেন।

সম্প্রতি বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-ও সেরকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন। রাজ্যে বিজেপির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভারতী ঘোষ বিবিসিকে বলছিলেন কেন এই আইন রূপায়নের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গই তাদের ‘অগ্রাধিকার’। তার কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের যে ২০১৭ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, সেই পথে অনুপ্রবেশ ঘটছে বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে। আর তৃণমূলের আমলে এই বর্ডার তো পুরোপুরি খুলেই দেয়া হয়েছে। এমন কী, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কাজেও রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে কোনও সহযোগিতা করেনি। বরং চিঠি দিয়ে বলেছে, কাঁটাতার বসাতে গেলে নিজেরা জমি কিনে বসান। ফলে বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে আসা লোকজনকে বেআইনিভাবে ভোটার কার্ড দিয়ে, রেশন কার্ড দিয়ে একটা অবৈধ ভোটারের বিশাল বসতি তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গ। তাতে হুমকি তৈরি হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও।’ ‘এই জন্যই পশ্চিমবঙ্গে সিএএ বা এনআরসি-র মতো পদক্ষেপ নিয়ে বৈধ নাগরিকদের চিহ্নিত করা আশু দরকার’, বলছিলেন ভারতী ঘোষ।

কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের মুখে এই পদক্ষেপকে একটা শস্তা রাজনৈতিক চমক হিসেবেই দেখছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার - যারা আগেই ঘোষণা করেছে এই আইন তারা পশ্চিমবঙ্গে প্রয়োগ করতে দেবে না। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও সাবেক এমপি কুনাল ঘোষের কথায়, ‘এটা তো পুরোপুরি একটা রাজনৈতিক স্টান্ট। উন্নয়ন ইস্যু নিয়ে বিজেপির কিছু বলার নেই, তাই তারা এসব বলে মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে সবাই তো আগে থেকেই নাগরিক আছেন। নতুন করে বিজেপি আবার কীসের নাগরিকত্ব দেবে?’
‘পশ্চিমবঙ্গ-বাসীর ভোটার তালিকায় নাম আছে, আধার কার্ড বা প্যান কার্ড আছে, সচিত্র পরিচয়পত্রও আছে। তাহলে নতুন কী এমন জিনিস তারা দেবে যা দিয়ে আবার নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে? আসলে আমরা মনে করি এই গোটা ব্যাপারটাই মানুষকে চরম বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা। যে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নির্বাচনে জিতে বিজেপির এমপি-রা পার্লামেন্টে গেছেন সেটাই যদি ভুয়ো হয়, তাহলে তারা জিতলেন কীভাবে?, এই পাল্টা প্রশ্নও তুলছেন কুণাল ঘোষ।

বিজেপি নেত্রী ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ভারতী ঘোষ অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই তিনি ভারতের নাগরিক - ব্যাপারটা সেরকম নয়। মিস ঘোষ বলছিলেন, ‘শুধু ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড থাকলেই কিন্তু কেউ নিজেকে ভারতের বৈধ নাগরিক বলে দাবি করতে পারেন না।’

আর এই ‘স্বীকৃতি’-টা আসবে নতুন একটি ‘নাগরিকত্ব কার্ডে’র আকারে, বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্যাবিনেটের সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত এমপি দেবশ্রী চৌধুরী। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মিস চৌধুরী বলছিলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে কিংবা সামাজিকভাবে প্রতারিত হয়ে যারা এসেছেন তারাই এই বিশেষ ‘নাগরিকত্ব কার্ড’ পাবেন। বিজেপি সূত্রগুলো আরও দাবি করছে, পঞ্চাশের দশক থেকে ‘মতুয়া’ সমাজের প্রায় তিরিশ লাখ হিন্দু বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন - নতুন আইনের সুবিধা তারাই সবচেয়ে বেশি পাবেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সেই নাগরিকত্ব দেয়ার প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকার যে কোনও সহযোগিতা করবে না-তৃণমূল কংগ্রেস তা এর মধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে। সূত্র : বিবিসি।



 

Show all comments
  • মোঃ দুলাল মিয়া ৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:৩৮ এএম says : 0
    আমাদের দেশে ও হিন্দু সবাইকে চাকরি দিতেছে এবং দিয়াছে। মুসলমানেরা গললা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ