Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারী কোথাও নিরাপদ নয়

সুলেখা প্রয়াসী | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

যদি প্রশ্ন ওঠে নারী কোথায় নিরাপদ, তাহলে উত্তর আসবে নারী আসলে কোথাও নিরাপদ নয়। কী ঘর, কী বাইরে, কী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কী কর্মক্ষেত্র কোথাও নয়। নারী অনিরাপদ আত্মীয়-অনাত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশি কিংবা স্বামীর বাড়ির লোকেদের কাছে। নারী অনিরাপদ মৃত্যুর পরে লাশ কাটা ঘর কিংবা কবরেও। নারী অনিরাপদ জন্মদাতা পিতার কাছেও। তাইতো ২৬ দিন বয়সে বাবার হাতের আছাড় খেয়ে মরতে হয় শুধু নারী হয়ে জন্ম নেয়ার কারণে। আবার মাদকাসক্ত বাবা ২২ দিনের সন্তানকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নেশার টাকা না পেয়ে। কতটা নৃশংস, কতটা বর্বর, কতটা ঘৃণিত কাজ কল্পনাও করা যায় না। সদ্যজাত শিশুর কোমল স্পর্শ, তার মোহনীয় শব্দ কোন কিছুই এই পাষন্ডদের হৃদয় স্পর্শ করেনা। আসলে ওদের হৃদয় বলে কিছু নেই, যেটা আছে সেটা শুধু নিকৃষ্ট পশুত্ব। এমন কোন শাস্তি নেয় যেটা এদের উপর প্রয়োগ করা যায়। আবার ঐ মাকে অত্যাচারিত হতে হয় কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য। অথচ গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে তা নারীর উপর নির্ভর করে না। লিঙ্গ নির্ধারিত হয় পুরুষের শুক্রানু থেকে। কিন্তু দায় নারীর। আসলে নারীর উপর সব চালিয়ে দেওয়া যায়।

নারী নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়, বহু আগ থেকেই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তবে পূর্বে মানুষের এতো বিস্তৃত শিক্ষা, সচেতনতা, জ্ঞান-বুদ্ধি ছিলনা। তারা এটাও হয়তো বোঝেনি যে, নারীর উপর নির্যাতন করাটা অন্যায়। কিন্তু বর্তমান সমাজ যতই আধুনিক হচ্ছে, নারী নির্যাতনের মাত্রাও ততই যেনো বেড়ে যাচ্ছে। সমাজের কাছে, সমাজের মানুষের কাছে নারী নিরাপত্তা যেনো অপাংতেয় বিষয়। সমাজে এমন কোনো যায়গা নেই যেখানে নারী নির্যাতনের শিকার হয় না, যৌন হয়রানির শিকার হয় না। নারী আর নিরাপত্তা শব্দ দুটি যেনো বিপরীতমুখী হয়ে গেছে। নারীর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় কারো নেই। নারীর জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভাবতে হয় তার নিরাপত্তার কথা। কিন্তু সমাজে মূল্যবোধের চরম বিপর্যয়ের ফলে নারী মরেও নিরাপদ নয়। একজন মানুষ মরে গেলও আসলে সব শেষ হয়ে যায়না, মৃত্যুর পরও তাকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। মৃত্যুর মতো চরম সত্যও নারীকে যৌন লালসার হাত থেকে মুক্তি দেয়না।

প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সে যুগে কবর থেকে লাশ তুলে ধর্ষণ করা হতো। বর্তমান আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে এসে মুন্না ভগতরাও মৃতদেহকে ধর্ষণ করে। আসলে এটাকে ধর্ষণ বলতে মন সায় দেয় না। এটা তারও বেশি। এই বীভৎসতা, এই বর্রবরতার আসলে কোন নাম হয়না। প্রাচীন মিশরের ইতিহাসেও মেলে এসব বীভৎসতার কথা। ইতিহাসের জনক হিরোডোটাসের গ্রন্থেও এমন বীভৎসতার বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমান সভ্য সমাজে এসব বর্বরতম ঘটনা স্বাভাবিক সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। একজন নারীর সাথে তার সম্পর্ক কি, ঐ নারীর সম্মতি আছে কিনা, এরকম পাশবিক কাজ করা উচিত কিনা এখন এসব আর কোন বিষয় হয়ে দাড়ায় না, বিষয় শুধু একটাই যে সেটা নারী শরীর কিনা। সে শরীর নিথর হোক, সে শরীরে প্রাণের সঞ্চার না হলেও চলবে। নারী হয়ে জন্ম নিয়ে যেনো সে বড্ড পাপ করে ফেলেছে। যে কোন সময়, যে কোন পরিস্থিতিতে তাকে শুধু তার শরীর নিয়ে ভাবতে হয়। কারণ বিকৃত রুচির পুরুষরা তার শরীরে শুধু যৌনতা দেখতে পায়। এসব পুরুষের কাছে নারী শুধুই ভোগ্যপণ্য, সে জীবিত বা মৃত যাই হোক।

গবেষকরা বলছেন, এসব ঘৃণিত কাজ করা ব্যক্তিরা বেশিরভাগই মর্গ বা গোর খোদকের কাজে নিযুক্ত। এখানে মৃত দেহ দেখতে দেখতে এদের মধ্যে একটা বিকৃত যৌন লালসা তৈরি হয়। যেটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় নেক্রোফিলিয়া। নেক্রোফিলিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তি মৃতের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়। তাই এদের হাত থেকে মৃত দেহ নিরাপদ রাখতে নিয়মিত মনিটরিং বিশেষভাবে প্রয়োজন। আরো প্রয়োজন শাস্তির পাশাপাশি চিকিৎসার। তেমনি মর্গে প্রয়োজন প্রশিক্ষিত নারী ডোম। একটা মানুষ সমাজের কাছে বা তার পরিবারের কাছে যত কম গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেনো, তার জীবন প্রদীপ নিভে গেলে মুহুর্তে সে সবার কাছে আপন হয়ে ওঠে। তার প্রতি সবার প্রগাঢ় একটা অনুভূতি কাজ করে। তবে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার ফলে যদি মৃতদেহ হাসপাতালে পৌছায় তাহলে মুহুর্তে সে হয়ে উঠে টাকা উপার্জনের মাধ্যম। ময়না তদন্তের রিপোর্টসহ রোগী খালাস করতে হরহামেশায় হয়রানির শিকার হতে হয়। এই ধরনের অপরাধমূলক কাজ বা মুন্না ভগত তৈরিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই তাদের দায় এড়াতে পারে না।

এরকম মুন্না ভগত সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব এবং মাদকের যত্রতত্র ব্যবহারেরই ফল। তাই আমাদের সর্বপ্রথম জোর দেওয়া উচিত মূল্যবোধের জায়গাতে। একজন ব্যক্তি যখন মূল্যবোধের বিষয়টিতে উদাসীন হয়ে যায় তখন সে যা খুশি করতে পারে। এখানে পারিবারিক শিক্ষাটা খুবই জরুরি। সবার আগে সমাজের মানুষকে বুঝতে হবে, প্রত্যেকটা প্রাণই খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র। তাকে অবহেলা বা অপবিত্র করার অধিকার কারো নেই। বিশেষ করে নারীর প্রতি সমাজের প্রচলিত নেতিবাচক ধারণাগুলোর পরিবর্তন করতে হবে। সকলকে বুঝতে হবে শুধু নিজের ঘরের গুটিকয়েক নারীকে সম্মান করে বাকী অন্য নারীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টি দেয়া অনুচিত। আর অযোগ্য ব্যক্তির হাতে কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলে এরকম মুন্না ভগত তৈরি হয়। দায়িত্ব অর্পনের ক্ষেত্রে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে, যেনো দায়িত্ব পেয়ে সমাজে এরকম মুন্না ভগত আর তৈরি না হয়। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের দিকে জোরালোভাবেই দৃষ্টি দেয়া জরুরি। আরো জরুরি আইনের যথাযথ প্রয়োগ। তাহলেই এই ধরনের বর্বরতম অপরাধ একেবারে নির্মূল না হলেও সংখ্যায় কমে আসবে।



 

Show all comments
  • Jack Ali ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৩৫ এএম says : 0
    When country ruled by the Law of Kafir then Allah with held His mercy as such government and general people commits every Harram things which Allah strongly forbade. Only a way that we are muslim our country must be ruled by the Law of Allah as such Allah's mercy will come back.
    Total Reply(2) Reply
    • Wasiq Omie ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৩৫ পিএম says : 1
      Your comment is supposed to spread extremism and hatred in the society, and devoid of the subject matters too. Indeed, you are a racist!
    • ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:২০ পিএম says : 0

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারী

১৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন