Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কবে বন্ধ হবে রাজধানীর সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি?

| প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বসবাসের অযোগ্য রাজধানী হিসেবে শীর্ষে থাকা ঢাকাকে বাসোপযাগী করার কোনো পরিকল্পনা দৃশ্যমান নয়। উল্টো দিন দিন এর অবস্থার চরম অবনতি হচ্ছে। যানজট, পানিবদ্ধতাসহ অপর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধার মতো কমন বিষয়গুলো তো রয়েছেই। এর সঙ্গে ধুলিধূসর হয়ে পড়ার উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। বর্ষায় পানিবদ্ধতা আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলার নগরীতে পরিণত হওয়া এখন রাজধানীর নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীজুড়ে সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নের নামে যা দেখা যায় তা আসলে প্রতীকি ছাড়া কিছু নয়। উন্নয়ন আর সম্পন্ন হয় না। রাজধানীতে নাগরিক সেবার নামে রাজপথ থেকে অলিগলিতে খোঁড়াখুঁড়ি করে চলাচল অচল করে দেয়ার বিষয়টি নতুন নয়। এই কর্মযজ্ঞ বছরের পর বছর ধরে চললেও কোনো সুফল নগরবাসী পাচ্ছে না। বরং তাদের ভোগান্তী দিনে দিনে আরো বাড়ছে। বর্ষায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নগরবিদরা বহুবার পরামর্শ দিয়েছেন। কে শোনে কার কথা? সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, গ্যাস-বিদ্যুৎ, টিএন্ডটিসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব পরামর্শ কানেই তোলে না। রাজধানীর উন্নয়ন হোক, নগরবাসীর সেবা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হোক-এটা কে না চায়? এই উন্নয়নমূলক কাজগুলো যাতে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে করে, তার বুদ্ধি-পরামর্শ নগরবিদরা বরাবর দিয়েছেন। রাজধানীর বেহাল দশা এবং তার ক্রমাবনতি দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো তা আমলেই নিচ্ছে না।

রাজধানীসহ সারাদেশেই শীত অনুভূত হচ্ছে। সাধারণত শীতে মানুষের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই সংক্রমিত হয়। এর সাথে যদি ধুলাবালি যুক্ত হয়, তখন অবস্থা আরও বেগতিক হয়ে পড়ে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলাশহরে এমন আলামত এখন থেকেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। আশঙ্কার বিষয়, এবার করোনার প্রকোপ থাকায় ঠান্ডাজনিত রোগবালাইয়ের কারণে ভাইরাসটির আক্রমণের পথ সহজ হয়ে যেতে পারে। এই পথকে আরও সহজ করে দিচ্ছে, রাজধানীর ধুলোময় অসুস্থ পরিবেশ। রাজধানী এখন ধুলার নগরীতে পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, উন্নয়নের নামে সড়ক খোঁড়খুঁড়ি করে মাসের পর মাস ফেলে রাখা। বর্ষায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুষ্ক মৌসুমেও এসে শেষ হয় না। এর ফলে গর্ত হয়ে থাকা সড়কগুলো ধুলার কারখানায় পরিণত হয়। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উত্তরা, বসুন্ধরা, বাড্ডা, ঝিগাতলা, ধানমন্ডি, গুলিস্থান, মতিঝিলসহ পুরনো ঢাকার অনেক সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। মাসের পর মাস চলে গেলেও এগুলো সংস্কারের কোনো নামগন্ধ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসী বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের কর্তব্যক্তিদের বক্তব্য, অর্থাভাবে এসব খোঁড়াখুঁড়ি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থ না পেয়ে ঠিকাদাররাও কাজ শেষ করছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, অর্থের সংস্থান না করে খোঁড়াখুঁড়ির প্রকল্প হাতে নিয়ে জনভোগান্তি সৃষ্টি করা হয় কেন? আবার অর্থও বরাদ্দ এবং ব্যয় হচ্ছে। এসব অর্থেরও কোনো হিসাব থাকছে না। এমন অভিযোগও তো রয়েছে, একশ্রেণীর ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লোকজনের মধ্যে যোগসাজসে সড়কে নিম্নমানের কাজ করা হয়, যা টেকসই হয় না। কিছুদিন না যেতেই সেগুলো বেহাল হয়ে পড়ে। সড়ক খুঁড়ে সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে বাজেট বাড়ানো হয়, যা অর্থ লুটপাটের প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। সড়কের বেহাল দশা দেখে এসব অভিযোগের সত্যতা নগরবাসী সহজেই অনুধাবন করতে পারে। একটি সড়ক একবার খুঁড়েই শেষ করা হয় না। ওয়াসা খুঁড়ে ফেলে রাখলে, গ্যাস-বিদ্যুৎ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ সেখানে খোঁড়া শুরু করে। বছরের পর বছর ধরে এই খোঁড়াখুঁড়ির ফলে রাজধানীর সড়ক আর ঠিক হচ্ছ না। এতে কাদা এবং ধুলো সৃষ্টি হয়ে জনভোগান্তি চরমে নিয়ে যাচ্ছে। সড়কের এই অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি কবে বন্ধ হবে এবং আদৌ বন্ধ হবে কিনা, তা কেউ বলতে পারে না।

রাজধানীর সড়ক এবং সেবামূলক উন্নয়নের কাজ যে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে হচ্ছে, তা বিশ্বের কোনো দেশে দেখা যায় না। উন্নত বিশ্বে সড়ক ও যেকোনো সেবামূলক কাজ শুরুর আগে নাগরিকভোগান্তির কথা আগে চিন্তা করা হয়। ভোগান্তি যাতে সৃষ্টি না হয় এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই উন্নয়ন কাজ শুরু করে। সড়ক সংস্কার বা খোঁড়ার সময় কাদা বা ধুলাবালি যাতে সৃষ্টি না হয়, তা আগে নিশ্চিত করা হয়। আমাদের দেশে এর কোনো বালাই নেই। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি দেখলেই মনে হয়, ভোগান্তির শুরু এবং তা কবে শেষ হবে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। রাজধানীর খুঁড়ে ফেলে রাখা সড়কগুলো এখন ধুলোর ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছে। এমনিতেই দূষণের নগরী হিসেবে ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ নগরীর একটি। যানবাহন এবং রাজধানীর আশপাশের ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া এর বায়ু অবিরত দূষণ করে চলেছে। নগরবাসী হৃদরোগ, যক্ষ্মা, ব্রঙ্কাইটিসসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে। আমাদের কথা হচ্ছে, নগরের সড়ক ও সেবামূলক উন্নয়ন যেমন করতে হবে, তেমনি তা হতে হবে পরিকল্পিত। সড়ক খুঁড়ে মাসের পর মাস ফেলে রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুপরিকল্পিত সমন্বয় করে কাজ শুরু করতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন হয়। খোঁড়াখুঁড়ির পর ফেলে না রেখে সঙ্গে সঙ্গে মেরামতের কাজ শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে যে ঠিকাদার বা প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যুক্ত থাকবে তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সড়কের নির্দিষ্ট স্থায়িত্বের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেলে তা তাদের নিজ দায়িত্বে মেরামত করে দেয়ার শর্ত বাধ্যতামূলক করতে হবে।

 



 

Show all comments
  • Jack Ali ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:২২ পিএম says : 0
    When we rule our Beloved Country by the Law of Allah then all these criminal activities will stop. In Islam what ever do it will not cause trouble to people. Islamic Government is there to take care every kind of need to be full filled in due time.
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Haider ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ৯:৪৯ পিএম says : 0
    মেয়য়দ্বয় এখন আসমানের ঝুলন্ত তার কাটতে,বিলবোর্ড ভাঙ্গতে আর গরিবের পেটে লাথি( রিকসা উচ্ছেদ) ব্যস্ত! রাস্তা নিয়ে তাঁদের কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না!!,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক

১৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন