Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাওরে হচ্ছে দু’টি উড়াল সড়ক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

জীব-বৈচিত্র্যের কথা চিন্তা করে হাওরাঞ্চলে আর নতুন করে কোনো সড়ক করবে না সরকার। তবে দুটি উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গতকাল শনিবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে মন্ত্রী এই কথা বলেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের (বেন) আয়োজনে বার্ষিক সম্মেলন শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বাংলাদেশের হাওর, নদী ও বিল: সমস্যা ও প্রতিকার’। সম্মেলনের কারিগরি অধিবেশন শুরুর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
সরকার হাওরের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় আন্তরিক জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘হাওরে এখন থেকে আর কোনো রাস্তা নির্মাণ করা হবে না। সেখানকার ভূমিরূপ ও প্রতিবেশব্যবস্থাকে মাথায় রেখে সরকার একটি উড়ালসড়ক নির্মাণ করছে। আরেকটি উড়ালসড়কও নির্মাণ করা হবে। সরকার পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাসী, যা পরিবেশ রক্ষা করে করা হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, দেশের হাওর ও উপকূলে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের ফলে বন্যা ও পানিবদ্ধতার সমস্যা বাড়ছে। তাই উন্নয়ন প্রকল্প করার ক্ষেত্রে নদী-জলাশয় ও হাওরের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে মাথায় রাখতে হবে। এতে দেশের উন্নয়ন টেকসই হবে ও জনগণের ভোগান্তি হবে না।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান। অনুষ্ঠানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মুজিবর রহমান হাওলাদার, বেনের প্রতিষ্ঠাতা ও বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, হাওরে রাস্তা নির্মাণের আগে আমরা গবেষণা করে দেখিয়েছিলাম ওই রাস্তার অন্তত ৩০ শতাংশ এলাকা কালভার্ট ও সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ফাঁকা রাখতে হবে। নয়তো উজানে বৃষ্টি শুরু হলে তা ওই রাস্তায় আটকে গিয়ে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র হবে। কিন্তু দেখা গেছে মাত্র আড়াই শতাংশ জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। অন্যদিকে হাওর এলাকার বৃষ্টিপাতের দীর্ঘমেয়াদী তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে সেখানে আগে মে মাসে বেশি বৃষ্টি হতো। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেভাগে সেখানকার একমাত্র ফসল বোরো ধান পেকে যেত। ফলে কৃষকের ক্ষতি হতো না। এখন এপ্রিলে বৃষ্টি বাড়ছে। ফলে ধান পাকার আগে বন্যা এসে তা ডুবিয়ে দিচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ জেলার তিন উপজেলা ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থাকে এক সুতোয় গেঁথেছে ৩০ কিলোমিটারের একটি অল-ওয়েদার সড়ক। ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ আনুষ্ঠানিকভাবে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সড়কটি নির্মাণ শেষে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর সড়কটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

হাওরের বিস্ময় হিসাবে খ্যাত অল-ওয়েদার এ সড়কটি চালু হওয়ার পর হাওরে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি পাল্টে যায়। পাশাপাশি দৃষ্টি কাড়ে সারা দেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের। ইতিমধ্যে সারা বছরই সেটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ সুগম হচ্ছে হাওরবাসীর। তবে এই সড়কের কারণে হাওরের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন পরিবেশবাদীরা। ফলে সরকার নতুন করে হাওরে আর সড়ক না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ