Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুফল আটকা সংযোগ সড়কে

চট্টগ্রামের সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প ব্যয় তিন গুণের বেশি বাড়িয়েও শেষ হয়নি এ মেগা প্রকল্প : কর্ণফুলী টানেল চালু হলে যানজট বাড়ার শঙ্কা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে তিন বছর আগে। কিন্তু তিনটি সংযোগ সড়কের একটিও এখনো চালু হয়নি। এর ফলে প্রায় ২৭শ’ কোটি টাকার এ মেগা প্রকল্পের সুফল মিলছে না। কথা ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সাগরতীর ঘেঁষে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সৃষ্টিকারী এ সড়কটি চালু হলে মহানগরীতে ভারী যানবাহনের চাপ কমবে। তাতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম আরও সহজতর হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলওয়ের বাধা এবং ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ নানা কারণে তিনটি সংযোগ সড়কের একটিও চালু করতে না পারায় কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। জানুয়ারিতে খুলে দেয়া হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। তার আগে সংযোগ সড়ক চালু করা না গেলে আউটার রিং রোডকে ঘিরে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিগত ১১ বছরে প্রকল্পের মেয়াদ তিনগুণের বেশি বাড়িয়ে দুই হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আউটার রিং রোড নির্মাণ শেষ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। তবে সংযোগ সড়ক বা ফিডার রোড নির্মাণ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ এখনো আটকে আছে। শুরুতে নগরীর সঙ্গে সড়কটির সংযোগ স্থাপনে স্টিলমিল নারিকেলতলা-বেড়িবাঁধ (ফিডার রোড-১), বড়পোল-আনন্দবাজার-বেড়িবাঁধ (ফিডার রোড-২) এবং সাগরিকা-স্টেডিয়াম-বেড়িবাঁধ (ফিডার রোড-৩) নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ফিডার রোড-২ বাতিল করা হয়। আর ফিডার রোড-১ এর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তবে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে একটি অংশে কাজ বন্ধ রয়েছে।

রেলওয়ের বাধায় ফিডার রোড-৩ এর একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে আছে। পোর্ট কানেকটিং রোড থেকে সাগরিকা হয়ে রাসমনি ঘাট এলাকায় বিভাগীয় আউটার স্টেডিয়াম অংশে এ সংযোগ সড়কটি আউটার রিং রোডের সাথে সংযুক্ত হওয়ার কথা। সেখানে সংযোগ সড়কের পুরো কাজ শেষ হলেও ফ্লাইওভারের রেললাইনের উপরের অংশের গাডার বসানোর কাজ আটকে আছে। উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তুলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে রেলওয়ে। এসব জটিলতায় দুটি সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করতে না পারায় মহানগরীর সাথে আউটার রিং রোডের সংযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না।

নগরীর প্রধান সড়কের বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ। এ মেগা প্রকল্পও চলছে সম্ভুক গতিতে। এর ফলে পতেঙ্গা থেকে ইপিজেড-বন্দর হয়ে লালখান বাজার পর্যন্ত সড়কে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। পণ্যবাহী ভারী যানবাহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন ওই সড়কটি এড়িয়ে চলতে গিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। ফিডার রোড চালু না হওয়ায় বন্দর ও বিভিন্ন বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো থেকে পতেঙ্গা হয়ে আউটার রিং রোডে উঠতে হয় পণ্যবাহী ভারী যানবাহনকে। পাশাপাশি নগরীতে প্রবেশের জন্য টোল রোড ধরে ফৌজদারহাট হয়ে ঘুরে আসতে হয়। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীদেরও আউটার রিং রোড ধরে ফৌজদারহাট হয়ে নগরীতে প্রবেশ করতে হয়।

দক্ষিণ কাট্টলীর খেজুরতলা ঘাট এলাকায় টোল রোডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আউটার রিং রোড। এখান থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত টোলে রোডে গাড়ির চাপ বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের অদূরে পতেঙ্গা এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কন্টেইনার ডিপো। এসব ডিপোতে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করছে আউটার রিং রোড হয়ে। ড্রাইডক জেটিতে খালাস হচ্ছে স্ক্র্যাপ লোহা, পাইপ, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী। এসব আমদানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহনগুলোও পতেঙ্গা হয়ে আউটার রিং রোড দিয়ে চলাচল করছে। আবার টোল রোডেও ভারী যানবাহনের জট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় বন্দর-ইপিজেডকে ঘিরে ভারী যানবাহনের চাপ বেড়েই চলেছে।

ইতোমধ্যে দেশের প্রথম সড়ক টানেল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে। এটি চালু হলে আউটার রিং রোড হয়ে যানবাহনের চাপ ৩৫/৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে। তার আগে সংযোগ সড়ক চালু না হলে ওই এলাকায় যানজট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০১১ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সিডিএ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ কাট্টলী পর্যন্ত ১৫ দশমিক দুই কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণে তখন প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জুলাইতে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। সে সময় সংশোধিত ব্যয় নির্ধারিত হয় এক হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের জুন।

এরপর ২০১৮ সালের জুনে প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় বেড়ে হয় ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৯ সালের জুন। সর্বশেষ প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দুই হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা করা হয়। ২০২০ সালে মূল সড়কের কাজ শেষ হলে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। তবে ফিডার রোড নির্মাণ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি।

এদিকে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, তিনটি ফিডার রোডের একটি আপাতত বাদ দেয়া হলেও বাকি দুটির কাজ এগিয়ে চলছে। সাগরিকার ফিডার রোডের কাজ রেলওয়ের আপত্তির কারণে বন্ধ ছিল। এখন সে আপত্তি তারা তুলে নিয়েছে। আমরা কাজ করার অনুমতি পেয়েছি। খুব শিগগির সেখানে ফ্লাইওভারের অবশিষ্ট কাজ শেষ করে ওই সংযোগ সড়কটি চালু করা হবে।

আর ফিডার রোড-১ এর কাজ শেষ হলেও অধিগ্রহণ জটিলতায় ছোট্ট একটি অংশের কাজ বাকি আছে। আমরা আশা করছি কর্ণফুলী টানেল চালুর আগেই দুটি সংযোগ সড়ক চালু করা সম্ভব হবে। আর তখন আউটার রিং রোডের পুরোপুরি সফল মিলবে বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ