Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিহারের কুর্সিতে বসছে মহাজোট!

মোদি-নীতীশ জুটি ফিকে এগজিট পোলে ইঙ্গিত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিহারে বেকায়দায় নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নীতীশ বাহিনীকে টেক্কা দিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে কংগ্রেস-সমাজবাদী পার্টির মহাজোট। এগজিট পোলের ফলাফলে এমন আভাসই মিলছে। অধিকাংশ এগজিট পোলের ফলেই দেখা যাচ্ছে, এনডিএ শিবিরকে টেক্কা দিয়েছে মহাজোট। তবে, বিহারের নির্বাচনের ফল ত্রিশঙ্কু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে সমীক্ষা।

টাইমস নাও-সি ভোটারের এগজিট পোল অনুযায়ী, বিহারে এনডিএ পেতে পারে ১১৬টি আসন, মহাজোট পেতে পারে ১২০টি আসন, এলজেপি ১টি আসন পেতে পারে। অন্যরা পেতে পারেন ৬টি আসন।
অন্যদিকে, ইন্ডিয়া টিভি’র এগজিট পোল দেখে বোঝা যাচ্ছে, বিহারে এনডিএ বনাম মহাজোটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে। এনডিএ পেতে পারে ১১২টি আসন। মহাজোট পেতে পারে ১১০টি আসন।

রিপাবলিক টিভি-জন কি বাত এগজিট পোল অনুযায়ী, এনডিএ-র ঝুলিতে থাকবে ৯১-১১৭টি আসন। মহাজোটের হাতে থাকতে পারে ১১৮-১৩৮টি আসন, এলজেপি জিততে পারে ৫-৮টি আসন। অন্য০রা জিততে পারে ৩-৬টি আসনে।

টিভি নাইন ভারতবর্ষের এগজিট পোল অনুযায়ী, এনডিএ পেতে পারে ১১০-১২০টি আসন, মহাজোট পেতে পারে ১১৫-১২৫টি আসন, অন্যরা ১৩-১৮টি আসন। নীতীশ কুমারকে টেক্কা দিতে চলেছেন তেজস্বী যাদব। ইন্ডিয়া টিভি অ্যাক্সিস পোল অনুযায়ী, ৪৪ শতাংশ ভোটারই তেজস্বীকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চান। নীতীশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চান ৩৫ শতাংশ ভোটার। চিরাগ পাসওয়ানকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চান ৭ শতাংশ ভোটার।

এবার বিহারের নির্বাচনে এনডিএ বনাম মহাজোটের যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে, তার আন্দাজ মিলেছে এগজিট পোলের ফলাফলে। একে অপরের ঘাড়ে কার্যত নিঃশ্বাস ফেলছে দুই শিবির। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় জেতার জন্য প্রয়োজন ১২২টি আসন। আগামী ১০ নভেম্বর বিহারে ভোটগণনা। এগজিট পোলের ফলাফল আদতে মেলে কিনা সেটাই দেখার।

গতকালই শেষ হয়েছে তৃতীয় দফার নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এদিন বিহারে ভোট পড়েছে ৫৫.২২ শতাংশ। শেষ দফায় ৭৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এসব কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিল ২ কোটি ৩৫ লাখ। এবারের হাই-প্রোফাইল প্রার্থীদের মধ্যে বিহার বিধানসভার স্পিকার থেকে শুরু করে রয়েছেন ১২ জন মন্ত্রীও। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোট নির্বিঘেœ মিটলেও গতকাল তৃতীয় দফার ভোটে অশান্তি ছড়িয়েছে।

পূর্ণিয়ার কসবায় ভোট দিতে আসা এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বিএসএফের বিরুদ্ধে। তার পরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ভোটদাতারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ফলে দু’ঘণ্টা ভোট বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছে। অন্যদিকে, পূর্ণিয়ারই ধামদহতে ২৮২ নম্বর বুথের বাইরে গুলি চলেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। এ ঘটনার পর গোটা এলাকায় নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয় দফায় ভোট হয় কোশী-সীমাঞ্চলেও। ভোট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পর্বে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হবে এই এলাকা। জোর টক্কর হবে এনডিএ এবং মহাজোটের। তবে এ অঞ্চলে আবার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি-র অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর আধিপত্য বেশি। সীমাঞ্চলের ২৪টি প্রভাবিত আসনের মধ্যে ১৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে এআইএমআইএম। ফলে এ অঞ্চলে লড়াইটা ত্রিমুখী হবে। আসাদউদ্দিন ফ্যাক্টর তো আছেই, পাশাপাশি এটা প্রাক্তন সংসদ সদস্য পাপ্পু যাদবেরও এলাকা। সেই ফ্যাক্টরটাও এ দফায় কাজে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়েছিল। ভোট পড়েছিল ৫৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। ৯৪টি আসনে ভোট হয়েছিল ওই দফায়। দ্বিতীয় দফায় হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন লালুপ্রসাদ যাদবের দুই ছেলে তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী ও তেজপ্রতাপ যাদব। ছিলেন শত্রæঘœ সিন্হার ছেলে লাভ সিন্হা। দ্বিতীয় দফার ভোট নির্বিঘেœই মিটেছে। করোনা আবহের মধ্যে ভোট হওয়ার কারণে প্রথম দফায় সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। তবে দ্বিতীয় দফায় আরও সতর্ক ভাবে পা ফেলে নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বিহারের ভোট প্রসঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, করোনা আবহে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোট গ্রহণ হয়েছে। দু’দফাতেই ভাল সাড়া মিলেছে।

এদিন টুইট করে শেষ দফার ভোটের আগে নতুন রেকর্ড গড়ার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি হিন্দিতে লিখেছেন, বিহারের মানুষরা বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট দিতে চলেছেন। আমি সব ভোটারদের কাছে অনুরোধ করছি এই গণতন্ত্রের উৎসবে বাড়ির বাইরে এসে প্রচুর সংখ্য ভোট দিন ও নতুন রেকর্ড গড়ুন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই মাস্ক পরুন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলুন।’ প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি সব ভোটারদের ভোট দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে টুইট করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-ও। গণতন্ত্র উৎসবে শামিল হতে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। সোশ্যাল মিডিয়ায় গণতান্ত্রিক অধিকারের সঠিক প্রয়োগের বার্তার জানিয়ে টুইট করেছেন রাহুল গান্ধী।

বিহারে ভোটের আগেই ছাপড়ার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মূল নিশানা ছিলেন তেজস্বী যাদব। উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ টেনে এনে মোদি ‘জোড়া যুবরাজ’ বলে কটাক্ষ করেন কংগ্রেস সংসদ সংসদ রাহুল গান্ধী ও সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদবকে। সেখানকার নির্বাচনে রাহুল গান্ধী ও অখিলেশ যাদবের জোটের কথা মনে করিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন বা চার বছর আগে উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের সময়, মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন জোড়া যুবরাজ। উত্তরপ্রদেশে তাদের বাড়ি পাঠিয়েছিল জনতা।’ মোদির কটাক্ষ, ‘সেখানকার এক যুবরাজ এখন জঙ্গলরাজের যুবরাজের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।’

এগজিট পোল কেন গুরুত্বপূর্ণ? নির্বাচনের ফল কী হতে চলেছে, তার একটা আগাম আভাস মেলে এই বুথ ফেরত সমীক্ষায়। তবে সবসময় যে এগজিট পোলের ফলের সঙ্গে নির্বাচনের ফল মেলে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। প্রসঙ্গত, এ দেশে এগজিট পোল অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য নয় বলে অতীতে প্রমাণিত হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনের ফল সম্পর্কে ভুল ভবিষ্যদ্বাণীর উদাহরণও রয়েছে। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি, টাইমস নাউ।



 

Show all comments
  • Dilshad Khan ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    উগ্রবাদিদের এভাবেই সবজায়গায় বয়কট করা হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    মোদি জোটের সময় শেষ।
    Total Reply(0) Reply
  • জাবের পিনটু ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    সন্ত্রাসীদের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • রমজান আলি ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
    সমাজবাদী দলের জন্য শুভ কামনা।
    Total Reply(0) Reply
  • সুজন হালদার ৮ নভেম্বর, ২০২০, ২:৩৩ পিএম says : 0
    আগামীতে আর বিজেপী ক্ষমতায় আসবে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ