মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সময় লেগেছে তিন দশক। ছিল সাড়ে আটশো সাক্ষী। দেখা হয়েছে সাত হাজারের বেশি দলিলপত্র, ছবি আর ভিডিও টেপ। এত কিছুর পর ভারতের একটি আদালত ষোড়শ শতকের একটি মসজিদ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য কাউকে দোষী বলে খুঁজে পায়নি। অযোধ্যার ওই মসজিদটিতে হামলা চালিয়েছিল উচ্ছৃঙ্খল হিন্দু জনতা।
এই মামলায় যে ৩২ জন জীবিত অভিযুক্ত, তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী এল কে আদবানী এবং আরও অনেক সিনিয়র বিজেপি নেতা। বুধবারের রায়ে এদের সবাইকে খালাস দেয়া হয়েছে। আদালত বলেছে, ১৯৯২ সালে এই মসজিদটি ধ্বংস করেছে অচেনা ‘সমাজ-বিরোধীরা’ এবং এই হামলা পূর্ব-পরিকল্পিত ছিল না। মসজিদটি ধ্বংস করতে সময় লেগেছিল মাত্র চার ঘন্টা। এই কাজটি করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে। এটি ধ্বংসের আগে যে এই কাজের মহড়া দেয়া হয়েছে, এতে যে স্থানীয় পুলিশের প্রচ্ছন্ন সম্মতি ছিল এবং হামলাকারীদের যে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল - এমন বিশ্বাসযোগ্য বিবরণ দিয়েছেন অনেক প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। তবে তারপরও আদালত এরকম রায় দিয়েছে। গত বছর ভারতের সুপ্রিম কোর্টও বলেছিল, এটি ছিল এক ‘সুপরিকল্পিত ঘটনা’ এবং ‘আইনের শাসনের এক গুরুতর লঙ্ঘন’।
সাধারণভাবে এই রায়কে দেখা হচ্ছে ভারতের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা কতটা ঢিমে-তালের এবং বিশৃঙ্খলাপূর্ণ- তারই আরেকটা নজির হিসেবে। অনেকের আশংকা, কয়েক দশক ধরে বিচার বিভাগের ওপর যেরকম নগ্ন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলেছে, প্রয়োজনীয় তহবিল দেয়া হয়নি এবং এর সক্ষমতা দুর্বল করা হয়েছে, তাতে এটিকে আর সংস্কার করা সম্ভব নয়। কিন্তু এই রায় একই সঙ্গে আরেকটি বিষয়ের ওপর তীব্র আলোকপাত করেছে- সেটি হচ্ছে কীভাবে ভারতের ২০ কোটি মুসলিমকে ক্রমশই এক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে পরিণত করা হচ্ছে।
ভারতে নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির শাসনে মুসলিমদের কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়া যে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতন্ত্র বলে কথিত, তার বহুত্ববাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাসের যে কোন সময়ের চেয়ে মুসলিমরা এখন ভারতে নিজেদের অনেক বেশি অপমানিত বলে মনে করে। গরুর মাংস খাওয়ার কারণে কিংবা গাড়িতে গরু নিয়ে যাওয়ার কারণে মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যা করেছে উন্মত্ত জনতা। ভারতের মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু এবং কাশ্মীর তারা কয়েক টুকরো করে ভেঙ্গে দিয়েছে। সাংবিধানিক স্বায়ত্বশাসন হরণ করেছে।
এ বছর একটি মুসলিম ধর্মীয় গোষ্ঠী দিল্লিতে এক ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজন করার পর করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য কেবল মুসলিমদের ওপরই দোষ চাপানো হয়। মহামারির মধ্যে যখন হিন্দুদের বড় ধর্মীয় সমাবেশ হয়েছে, সেটিকে কিন্তু একই রকমের নিন্দা আর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি গণমাধ্যম বা রাজনীতিকদের কাছ থেকে, একইভাবে দোষ চাপানোর চেষ্টাও চোখে পড়েনি। এখানেই শেষ নয়। গত শীত মৌসুমে বিতর্কিত এক নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় উস্কানি দেয়ার কথিত অভিযোগে মুসলিম ছাত্র আর কর্মীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, জেলে ঢোকানো হয়েছে। অথচ দাঙ্গায় উস্কানি দেয়া অনেক হিন্দু মুক্তভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে।
অনেক মুসলিমের মতে, ভারতে মুসলিমদের যেভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, বাবরি মসজিদের ঘটনার রায় আসলে তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে এই বিচ্ছিন্নতার বোধ একেবারেই বাস্তব। মোদির দল তাদের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরের আদর্শ নিয়ে কোন রাখ-ঢাক করে না। জনপ্রিয় টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলগুলো প্রকাশ্যেই মুসলিমদের দানবরূপে চিত্রিত করার কাজ চলে। ভারতের এক সময়ের অনেক শক্তিশালী আঞ্চলিক দল, যারা তাদের জনগণের পাশে দাঁড়াতো, তারাও যেন মনে হচ্ছে মুসলিমদের পরিত্যাগ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি যে ধরণের ধর্মভিত্তিক নির্বাচনী রাজনীতির চর্চা করে, তাতে করে মুসলিমদের ‘আলাদাকরণ’ করা হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফে জাফরেলট বলেন, ‘কিভাবে আপনি মেরুকরণের কাজটা করবেন? এটা আপনি করবেন অন্যদেরকে আপনার পরিচয়ের প্রতি একটা হুমকি হিসেবে চিত্রিত করে।’ তার মতে, ভারত এখন এক ধরণের ‘এথনিক ডেমোক্রেসির’ দিকে যাচ্ছে, যা এথনিক জাতীয়তাবাদ থেকে উৎসারিত। এর মূলে আছে একধরণের ‘শ্রেষ্ঠত্বের’ বোধ।
তবে সবকিছু এখনো অন্ধকারে হারিয়ে যায়নি। এক তরুণ মধ্যবিত্ত গোষ্ঠির উত্থান ঘটছে, দেশভাগের ভূত যাদের ঘাড়ে চেপে নেই। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল, তখন সেখানে এই তরুণ, স্পষ্টভাষী মুসলিম নারী-পুরুষদের দেখা গেছে ভারতের রাস্তায়। ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায় এক ঘরকুনো এবং নির্বাক সংখ্যালঘু বলে যে গৎবাঁধা ছবি, সেটা তারা ভেঙ্গে দিয়েছে। এলাকায় এলাকায় এখন গড়ে উঠেছে কমিউনিটি কোচিং ক্লাস। সেখানে তরুণ মুসলিমদের ভারতের মর্যাদাপূর্ণ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জহির আলি বলছেন, ভারতের অনেক তরুণ মুসলিম এখন তাদের মুসলিম পরিচয়কে ইতিবাচক হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা তাদের মত প্রকাশে মোটেই কুন্ঠিত নয়। কিন্তু তার মতে, শেষ পর্যন্ত বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় অভিযুক্তদের খালাস দেয়ার এই ঘটনা ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে উৎকন্ঠা এবং অবিচারের বোধ আরও গভীর করবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।