নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
অস্বস্তির দশটি দিন কাটিয়েছে ফুটবল বিশ্ব। শুধু ফুটবলই কেন? ক্রীড়াবিশ্ব বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। এই দশটি দিন ধরে পানি কম ঘোলা হয়নি, পরতে পরতে হলো রঙ বদল। শেষ দৃশ্যে অবশ্য পরিচিত ছবিটাই থাকল- লিওনেল মেসিকে দেখা গেল সেই বার্সেলোনার জার্সিতেই। ৩৩ বছর বয়সে এসে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড কেন বার্সেলোনার সঙ্গে দুই দশকের সম্পর্কটার শেষ টানতে চেয়েছিলেন, সে নিয়ে অনেক ব্যাখ্যাই এসেছে বিভিন্ন বিশ্লেষণে। মেসি নিজেও সেটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাক্ষাৎকার দিয়েই।
কিন্তু থেকে যেহেতু গেছেনই, চুক্তির বাকি থাকা এক মৌসুমে মেসি কেমন খেলবেন সে নিয়ে সংশয় ছিল অনেকের। সে ক্ষেত্রে জবাব হয়ে আসতে পারে বার্সেলোনাভিত্তিক স্প্যানিশ ক্রীড়াদৈনিক স্পোর্তের সঙ্গে মেসির সাক্ষাৎকার। গতকালই পুরো সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হবার কথা, তবে তার আগের দিন নিজেদের অনলাইন সংস্করণে সাক্ষাৎকারের বিশেষ কিছু অংশ তুলে দিয়েছে স্পোর্ত। সেখানে মেসি বলেছেন, তিনি যা করেছেন, তা অনেকের কাছে ভুল মনে হলেও হতে পারে, তবে সবকিছু তিনি করেছেন বার্সেলোনার ভালোর জন্যই, ‘আমার দিক থেকে কোনো ভুল হয়ে থাকলে আমি সেটির পুরো দায়িত্ব নিচ্ছি। তবে যা করেছি, সেটা বার্সেলোনাকে আরও ভালো ও শক্তিশালী করার জন্যই করেছি’।
বার্সেলোনায় মেসি যে এখন সুখে নেই, সেটা বুঝে নিতে হয়তো খুব একটা কষ্ট হয় না। মাঠে সময়টা মোটেও ভালো কাটছে না। যে চ্যাম্পিয়নস লিগ ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে প্রার্থিত শিরোপা, ২৭ বছর বয়সের মধ্যেই চারবার সেটি জিতে যাওয়া মেসি গত পাঁচ বছরে আর ট্রফিটা হাতে তুলতে পারেননি। শিরোপা জেতা তো দ‚রের কথা, একের পর এক লজ্জা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বাদ পড়েছে বার্সা। তার দায়? বিশ্লেষণে গেলে জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর অধীন বার্সেলোনার বোর্ডের দিকেই আঙুল যায়।
দলের প্রয়োজন মাথায় না রেখে আক্রমণে একের পর এক তারকা খেলোয়াড়কে এনেছেন বার্তোমেউ। তা-ও চড়া দামে, বেশি বেতনে। মাঝমাঠ আর রক্ষণ এদিকে শীর্ণকায়। ফল? চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ পর্যায়ে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছে বার্সা, মেসিকে আটকে দিলেই সহজেই সফল হয়ে গেছে প্রতিপক্ষ। আর মাঠের বাইরে বার্সার আর্থিক অবস্থা এত সঙিন হয়ে গেছে যে, চাইলেই এখন আর প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় কিনে দলটাকে গোছাতে পারছে না বোর্ড। সব মিলিয়েই মেসির চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। গত ২৫ আগস্ট ক্লাবকে এক বুরোফ্যাক্স পাঠিয়ে সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
এরপর অনেক নাটক হয়েছে। চুক্তির জটিলতা দেখিয়ে বার্সা তাঁকে ছাড়েনি। বার্তোমেউও সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা করে গেছেন ‘মেসিকে বিক্রি করে দেওয়া বার্সা সভাপতি’ পরিচয়ে পরিচিত না হতে। ওদিকে মেসি বুঝতে পেরেছেন, তার চুক্তি কাজে লাগিয়ে বার্সা ছাড়ার পথ খোলা আছে, কিন্তু সেটি কাজে লাগাতে হলে ঝামেলাটা মিটমাট করতে হতো আদালতে। যে বার্সা তাঁকে শৈশবে এনে লালন করেছে, তাঁকে ‘মেসি’ বানিয়েছে, সেই ক্লাবকে আদালতে নিতে চাননি মেসি। চুক্তির বাকি থাকা আরেকটি বছর থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার ক্ষোভ বোর্ডের ওপর, বার্সার প্রতি ভালোবাসা যে একই আছে- সেটি তো ক্লাবে থেকে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া সাক্ষাৎকারেই জানিয়েছেন। ওই সাক্ষাৎকারেই তখন মেসি বলেছিলেন, ক্লাবের প্রতি আনুগত্যও তার একটুও বদলায়নি। স্পোর্তেও নতুন মৌসুম নিয়ে ভাবনায় একই সুর মেসির কণ্ঠে, ‘(বোর্ডের সঙ্গে) এত এত বেশি মতের অমিলের পর আমি চেয়েছিলাম সবকিছুর শেষ টেনে দিতে। কিন্তু এখন আমাদের সবাইকে এক হতে হবে, বুঝতে হবে সেরাটা এখনো আসতে পারে।’ অধিনায়ক তিনি, নতুন মৌসুমের শুরুতে আশার বাণী যে ছড়াতেই হয়!
নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের অধীনে বদলে যাওয়ার ডাক বার্সায়। এরই মধ্যে দলে ভিদাল-সুয়ারেজ-রাকিতিচদের মতো ‘বুড়ো’দের হটিয়ে ফাতি-ত্রিনকাও-পেদ্রিদের মতো তরুণদের সুযোগ করে দিয়েছেন ডাচ কোচ। তবে সুয়ারেজদের বিদায় নিয়ে বার্সা যত পানি ঘোলা করেছে, সেটিও হয়তো অনুচ্চারে বার্সার এই বোর্ডের ভাবমূর্তির কথা জানিয়ে দেয়। সেটি নিয়েও বিরক্ত মেসি ইনস্টাগ্রামে সুয়ারেজকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এক পোস্টে ধুয়ে দিয়েছেন বোর্ডকে।
সেসব একপাশে রাখলে নতুন মৌসুমের শুরুটা ভালোই হয়েছে বার্সার। গত রোববার ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে লিগের প্রথম ম্যাচেই জিতেছে ৪-০ ব্যবধানে। তরুণ আনসু ফাতি করেছেন জোড়া গোল, মেসিও গোল পেয়েছেন। আর মৌসুম যেহেতু শুরু হয়েই গেছে, তিনিও যেহেতু থাকছেনই, নতুন মৌসুম ঘিরে তাই স্বপ্ন বুনছেন মেসি। বার্সা অধিনায়কের কণ্ঠে আহবান, ‘রোমাঞ্চ আর প্রেরণার সঙ্গে প্যাশন যোগ হলেই শুধু আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। সব সময় আমাদের এক হয়ে থাকতে হবে, একই দিকে তরী বাইতে হবে।’ আজ বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টায় লিগ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ সেল্টা ভিগো।
কিন্তু তারপরেও মেসিকে নিয়ে সংশয় থাকতেই পারে বার্সা সমর্থকদের। ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছার কথা একবার জানিয়ে দিয়েছেন, আবেদনটা কি তার আগের মতোই থাকবে? তাঁদের প্রতি মেসির বার্তা, ‘বার্সার সকল সোশিও (বার্সার নিবন্ধিত সদস্য) ও আমাদের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু বলার আছে। যদি কখনো তাঁদের কেউ আমার কোনো কথায় বা কাজে বিরক্ত হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে এ নিয়ে নিঃসংশয় থাকতে পারেন যে আমি যা-ই করেছি সব সময় ক্লাবের সবচেয়ে ভালোটা চাওয়া থেকেই করেছি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।