Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কথিত দূরত্ব বাস্তব নাকি মিডিয়া হাইপ?

মোবায়েদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে সেই বিষয় নিয়ে আমি তেমন একটা লিখি না। কারণ অন্য কিছু নয়। কারণটা হলো, পরিমিত এবং সঠিক তথ্যের অভাব। অবশ্য আমি দেখছি, দেশ এবং বিদেশে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। ঐ সব লেখালেখিতে নানা রকম গসিপও হচ্ছে। জুড়ে দেওয়া হচ্ছে চাইনিজ ফ্যাক্টর। জল্পনা-কল্পনামূলক এই ধরনের লেখার সবই যে অনুমাননির্ভর সেটা বলছি না। সত্যের কিছু এলিমেন্ট থাকলেও থাকতে পারে। তবে আমি সাধারণত তখনই একটা বিষয় নিয়ে লিখি, যখন সে সম্পর্কে কিছু ইনফরমেশন আমার হাতে থাকে। আজ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে লিখছি একটি সংবাদ দেখে। ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকে দেখলাম বাংলাদেশসহ প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক নিয়ে রাহুল গান্ধীর মন্তব্য। রাহুল গান্ধীর খবরকে তো উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সোনিয়া গান্ধী তার মাতা। পরলোকগত প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী তাঁর পিতা। পরলোকগত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী তার দাদী। পন্ডিত নেহরু তাঁর দাদীর পিতা। মতিলাল নেহরু, বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিত, সঞ্জয় গান্ধী, মেনকা গান্ধী- এদের কথা নাই বা বললাম। রাহুল গান্ধী নিজেও তো কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আগামী দুই এক টার্মের মধ্যে কংগ্রেস যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে রাহুল গান্ধীই হবেন ভারতের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং সেই রাহুল গান্ধীর মন্তব্যকে উড়িয়ে দেই কী করে?

গত ২৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সংবাদ মোতাবেক, রাহুল গান্ধী এক টুইটে বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে প্রতিবেশীদের সাথে কংগ্রেস যে সম্পর্ক গড়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা শেষ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বন্ধুহীন প্রতিবেশীদের মধ্যে বসবাস করা বিপজ্জনক। রাহুল গান্ধী তাঁর টুইটের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন লন্ডনের ‘ইকোনোমিস্টের’ একটি রিপোর্ট। একে তো রাহুল গান্ধী, তার সাথে আবার ‘ইকোনোমিস্টের’ মতো একটি বিশ্ববিখ্যাত ও মর্যাদাশীল সাময়িকীর রিপোর্ট। এই দুটো বিষয় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে লিখতে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে।

ইকোনোমিস্টের ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক ক্রমশঃ দুর্বল হচ্ছে। অন্যদিকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হচ্ছে। ইকোনোমিস্টের রিপোর্টের শুরুতেই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের উল্লেখ রয়েছে। এগুলো হলো, ভারতীয় সংস্থাকে হারিয়ে একটি চীনা সংস্থা সিলেট বিমানবন্দরের ২৫ কোটি ডলারের কাজ পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, চীন বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যের রপ্তানির ওপর শুল্ক রেয়াতের ঘোষণা দিয়েছে। তৃতীয়ত, তিস্তা অববাহিকা ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের ১০০ কোটি ঋণদানের প্রস্তাব। রাহুল গান্ধী তাঁর টুইটে ইকোনোমিস্টের এই রিপোর্টকে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আক্রমণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর টুইটে ইকোনোমিস্টের এই রিপোর্ট জুড়ে দিয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন, দশকের পর দশক জুড়ে ভারত তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে ধীরে ধীরে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন হয়ে মোদি সেই সম্পর্ক ধ্বংস করে দিয়েছেন। আলোচ্য পত্রিকাটির দিল্লী প্রতিনিধি লিখেছেন, গত কিছুদিন ধরে ভারত এবং বাংলাদেশ এই দু’ দেশেরই গণমাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। আলোচনা চলছে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যাপ্তি নিয়ে। দুই দেশেরই মন্ত্রীরা বলছেন যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘সোনালি অধ্যায়’ চলছে। তারপরেও জল্পনা-কল্পনা অব্যাহত আছে।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম এই ধরনের জল্পনা-কল্পনা সম্পর্কে এক কাঠি সরেস। এর মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছিলেন। এই টেলিফোনের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম আকাশ পাতাল আবিষ্কার করেছিলেন। ইমরান খানশেখ হাসিনার মধ্যে সেটি ছিল নেহায়েত একটি সৌজন্য সংলাপ। সংলাপে ইমরান খান কাশ্মীর প্রশ্ন তুলেছিলেন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন যে, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। অথচ সেটিকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম কতোই না জল্পনা-কল্পনার জাল বুনেছিল।

দুই
বাংলাদেশের বিদায়ী ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস লাগাতার বলে যাচ্ছেন যে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এই সম্পর্ক এত উঁচু যে, এর চেয়ে উঁচুতে ওঠা আর সম্ভব নয়। সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠার পরও দেখছি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যা অপ্রতিহত গতিতে চলছে। দুই দেশের রাজনৈতিক পর্যায়ে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয় যে, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র (Lethal) ব্যবহার করবে না। তারা লাঠি বা এই জাতীয় বস্তু ব্যবহার করবে। কিন্তু এই সেপ্টেম্বর মাসেও দেখা যায় যে, ভারতীয় বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে একাধিক বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে।
বাংলাদেশের তরফ থেকে এমন কোনো পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান হয়নি, যেটা দেখে বলা যায় যে বাংলাদেশ ভারতের ‘সোনালি সম্পর্কে’ কোনো দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বরং উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে। যেদিন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলো, সেদিনই বাংলাদেশ থেকে ইলিশের প্রথম চালান ভারতে পাঠানো হলো। ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়ার’ এই ইলিশ প্রেরণকে Durga puja gift from Hasina, , অর্থাৎ ‘শেখ হাসিনার নিকট থেকে দূর্গা পূজার উপহার’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।

ভারতে ইলিশ পাঠানো হবে ১৮০০ টন। ইলিশের মূল্য ধরা হয়েছে ৮০০ শত টাকা কেজি। ওজন ১০০০ গ্রামের বাইরে ১২০০ গ্রাম হলেও দাম থাকবে ৮০০ শত টাকা কেজি। এই ১৮০০ শত টন এক চালানে যাবে না। কয়েক চালানে যাবে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পরও আমরা ইলিশ রপ্তানি করছি কেন? প্রথম চালানের পর পরের চালানগুলো কি বন্ধ করা যেত না? ইলিশের রপ্তানি নাকি দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা। তবে শুভেচ্ছা কি ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক হয়?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছিলেন, আমরা এ পর্যন্ত দিল্লীকে যা দিয়েছি, সেটি দিল্লী চিরদিন মনে রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেছেন সেটি একেবারে খাঁটি কথা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে ২০০৯ সালে। তারপর সাড়ে ১১ বছর পার হয়ে গেছে। ভারতের সবচেয়ে মাথা ব্যাথা ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের সংহতি এবং নিরাপত্তা। বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭টি রাজ্যে ভৌগোলিক সংহতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে আর চিন্তা করতে হয় না। উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য আগেকার মতো সেখানে আর সেনাবাহিনীও নিয়োগ করতে হয় না। দ্বিতীয়ত সবচেয়ে বড় যে উপকার বাংলাদেশ সরকার ভারতকে করেছে সেটি হলো ট্রানজিট বা করিডোর প্রদান। এটি ছিল ভারতের ৪০ বছরের প্রত্যাশা। এই ৪০ বছরের প্রত্যাশা বাংলাদেশ সরকার পূরণ করেছে। তৃতীয়ত সবচেয়ে বড় উপকার যেটি বাংলাদেশ ভারতকে করেছে সেটি হলো মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে মালামাল ও পণ্য পরিবহনের সুযোগ প্রদান।

ট্রানজিট বলুন আর করিডোর বলুন আমরা তো সেটি ভারতকে দিয়েছি। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতীয় পণ্য উত্তর-পূর্ব ভারতে পরিবাহিত হওয়ায় ভারতের ১৭৬০ কিলো মিটার রাস্তা কমে গেছে। সময়ও কমে গেছে ৩৬ ঘণ্টা। কিন্তু তার বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশকে আজও ১৪ মাইল করিডোর দেয়নি। স্থল পথে বাংলাদেশের একেবারে উত্তর থেকে নেপালে যেতে হলে মাঝখানে ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর পার হতে হয়। এটিকে চিকেন নেকও বলে। ট্রানজিট ট্রান্সশিপমেন্ট এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা বাংলাদেশ অ্যাড্রেস করা সত্তে¡ও নেপালের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ভারত বাংলাদেশকে ঐ ১৪ মাইল চিকেন নেক নামক করিডোরটি আজও ব্যবহার করতে দেয়নি।

তিন
যদি বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট এবং ট্রান্সশিপমেন্ট না দিত তাহলে ওষুধপত্র সহ অনেক বাংলাদেশি পণ্য সহজেই উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজার দখল করতে পারত। কারণ সংক্ষিপ্ত হতো রাস্তা। সময় লাগতো কম। ফলে পরিবহন খরচও কম পড়তো। ভারতীয়দের মনে সব সময় একটা বড়ত্বের ভাব রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যখনই কোনো চুক্তি হয়, তখনই ওরা এমন একটি ভাব দেখায়, যেন মনে হয় ওরা বাংলাদেশকে কৃতার্থ করলো। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বেঁচে থাকার সময়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডাকেন এবং বেরুবাড়ী ভারতকে দিয়ে দেন। বিনিময়ে দহগ্রাম, আঙ্গুর পোতা যেতে ১৮৫ মিটার লম্বা তিন বিঘা করিডোর তাৎক্ষণিকাভাবে বাংলাদেশকে লিজ দেওয়ার কথা। সেই কাজটি করতে ভারত করেছে গড়িমসি। বছরের পর বছর ধরে গড়িমসি করে অবশেষে ৪২ বছর পর তারা তিন বিঘা খুলে দেয়। তারপরেও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে দূরত্বের সৃষ্টি হয়নি।

যারা বলেন যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে তারা ভারতের নাগরিক পঞ্জী, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন, বাবরি মসজিদের স্থলে রাম মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু ইত্যাদি ঘটনার কথা বলেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফর এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর কলকাতা সফর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, এই দুটি সফরে প্রধানমন্ত্রীকে শীতল অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রামমন্দির নির্মাণ, নাগরিক পঞ্জী বা নাগরিকত্ব সংশোধন আইন প্রশ্নে কোনো মন্ত্রী, এমপি এমনকি আওয়ামী লীগের কোনো বড় নেতা এমন কোনো বক্তৃতা বা বিবৃতি দেননি, যেখান থেকে মনে হতে পারে, দুই দেশের সম্পর্কে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। দূরত্বের যে কথা বলা হয়, সেটাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলাফুর ইয়াসমিন বলেন, এটি একটি মিডিয়া হাইপ। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, এটা ওভার রিঅ্যাকশন।
[email protected]

 

 

 



 

Show all comments
  • Mostafa Sarker ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:০৯ এএম says : 0
    এখন সময় শুধু আমাদের ।আমরা আর ভারতের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবো না ।আমাদের কাজ আমাদেরকেই করতে হবে।করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • রিপন ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১০ এএম says : 0
    আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলাফুর ইয়াসমিন ম্যাডামের সাথে একমত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন