গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাদা দলের শিক্ষকরা। এরমাধ্যমে শুধু ড. মোর্শেদ নয় এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কুঠারাঘাত করা হয়েছে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে বিএনপিপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরা এসব কথা বলেন।
সাদা দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন মতপ্রকাশ ও মুক্তবুদ্ধির লালন ও চর্চার কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ঐতিহ্য। কিন্তু আমরা হতাশা ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সুমহান ঐতিহ্যটি নস্যাৎ হতে চলেছে। ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬ ধারার ৩ উপধারা এবং ১ম স্ট্যাটিউটের ৪৫ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ, অদক্ষতা এবং চাকরিবিধি পরিপন্থী কাজের সাথে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা যায়। ড. মোর্শেদ এসবের কোনটিতে অভিযুক্ত নন। আসলে বাংলাদেশের সর্বত্র এখন ভিন্ন মতের মানুষের প্রতি নিপীড়ন, নির্যাতন চলছে। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেউ রেহাই পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, ভিন্নমতের বক্তব্য কেবল পাল্টা বক্তব্য দিয়েই খ-ন করা উচিত। কিন্তু এই সরকারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই সরকার জবাব দেয় হামলা, মামলা, খুন, গুম ও ধর্ষণের মাধ্যমে। ভিন্ন মত প্রকাশের কারণে এই সরকারের হাত থেকে রেহাই পাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি মরহুম ড. এমাজউদ্দীন আহমদও। তার বাসায় হামলা হয়েছে, বৃদ্ধ বয়সে তাকে দাঁড়াতে হয়েছে আদালতে। ভিন্ন মত প্রকাশের কারণে এই সরকারের হাত থেকে রেহাই পান নাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. একেএম ওয়াহিদুজ্জামান এ্যাপোলোও। এমন আরো অনেক উদাহরণ আছে।
ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ঢাবি পরিচালিত হয় ১৯৭৩ সালের আদেশে। ওই আদেশের ৫৬ ধারার ২ উপধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা রাজনীতি করার তথা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রাখেন। একটি দৈনিক পত্রিকায় লিখিত একটি নিবন্ধে কিছু বক্তব্যের কারণে (নিবন্ধটি প্রত্যাহার, দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা সত্ত্বেও) তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনক। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত চাকুরিবিধিরও সুস্পষ্ট ব্যত্যয়। এটি স্বাধীন মতপ্রকাশ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুমহান ঐতিহ্যেরও পরিপন্থী। কেবল ভিন্ন মতের প্রতি আক্রোশের কারণেই সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে ড. মোর্শেদকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। আমরা এ ধরণের নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
ড. মামুন আহমেদ বলেন, অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে আমরা মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। কেবল কিছু মানুষের অযৌক্তিক দাবির কাছে নত হয়ে ড. মোর্শেদকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এমন অমানবিক আচরণ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারে তা বিশ্বের কোনো দেশে আছে বলে বিশ্বাস করিনা। শুধু দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এরমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কুঠারাঘাত করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সকল শিক্ষককে প্রতিবাদ করতে হবে। শুধু ব্যাক্তি মোর্শেদ নয় এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদার প্রতি কুঠারাঘাত।
ড. মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ড. মোর্শেদ খানের একটা ছোটো লেখার কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া আইনের পরিপন্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। রাজনৈতিক মতাদর্শ গ্রহণের অধিকার দিয়েছে। লেখাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে লেখাটি প্রত্যাহার করেছে।
তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত সহ নানা কার্যক্রম করেছে। চাকুরি থেকে অব্যাহতি বাইরের কারো চাপে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ ও স্ট্যাটিউট ফলো করা হয়নি।
শুধু দলীয় কারণে ড. মোর্শেদকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এভাবে একদলীয়ভাবে কাউকে স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হলে ভবিষ্যতে আরো খারাপ খবর শুনতে হবে। অবিলম্বে ড. মোর্শদকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার জন্য দাবি জানান মো. হাসানুজ্জামান।
অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির মুক্ত বুদ্ধি চর্চার প্রাণকেন্দ্র। ১৯৭৩ সালের আদেশ দ্বারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা আরো দৃঢ় হয়েছে। কিন্তু একটি লেখার কারণে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোর্শেদকে ৭৩’র আদেশের অধিকার ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। আমাদের দাবি অবিলম্বে তাকে চাকুরিতে পুনর্বহাল করা হোক।
তিনি বলেন, ড. মোর্শেদকে অব্যাহতি দেয়ার মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাধীন মত প্রকাশ ও শিক্ষক সমাজের প্রতি অন্যায়।
ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বেআইনীভাবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে অধ্যাপক মোর্শেদকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাবি আমাদের অহংকার ও গর্ব। ঢাবি বিশ্বের ইতিহাসে ব্যাতিক্রম। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশের অপর নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ ও স্ট্যাটিউটে কলংক লেপন করা হলো ড. মোর্শেদকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার মাধ্যমে।
আদেশ লংঘন মানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও অপমান করার শামিল। এটি বহাল থাকলে ভবিষ্যতেও কিন্তু ঢাবির আদেশের অপব্যবহার করা হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ড. মোর্শেদকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার সবার আছে। অধ্যাপক মোর্শেদকে চাকুরিতে পুনর্বহাল করার দাবি জানাই। দলীয় কোনো দৃষ্টিতে কোনো অপরাধ করে কোনো শিক্ষক যেন পার পেয়ে না যায়। কাউকে গুরু দন্ডে লঘু শাস্তি আবার কাউকে লঘু দ-ে গুরু শাস্তি না দেয়া হয়।
মো. আল আমিন বলেন, ড. মোর্শেদ নিবন্ধের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরও তাকে অন্যায়ভাবে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই কর্মসুচীতে সব শিক্ষকের অংশগ্রহণ করা দরকার ছিলো। স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য কাউকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। আবার গুরু অপরাধের পরও কাউকে শাস্তি না দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক বানানো হয়েছে। এটা ঢাবির চেতনার পরিপন্থী। আজকে ঢাবিতে ভিন্নমতের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঢাবির চেতনা ছিল স্বাধীন মত প্রকাশ করা। সেই চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হবে।
সাদা দলের আহ্বায়ক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. লুৎফর রহমানের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মামুন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. মো. হাসানুজ্জামান, ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, মো. আলামিন প্রমুখ।
এসময় অন্যানের মধ্যে ড. মুজাহিদুল ইসলাম, ড. এহসান মাহবুব যুবায়ের, আবুল কালাম সরকার, মো. শহীদুল ইসলাম, ড. গোলাম রব্বানী, এম এম কাউসার, মো. মিজানুর রহমান, ড. মো. সাইফুল্লাহ, ইসরাফিল প্রামানিক রতন, মো. নুরুল আমিন, মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।