Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হঠাৎ কীভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনলো চীন-ভারত?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

ভারত আর চীন যেমন দ্রুততার সাথে হিমালয় এলাকায় তাদের সীমান্তে উত্তেজনা কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে তা অনেককেই অবাক করেছে।
মস্কোতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র মধ্যে এক দীর্ঘ বৈঠকের পর দুদেশের সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সরিয়ে আনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
যদিও, এর আগে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের গরম গরম কথাবার্তায় উত্তেজনা বেড়ে যাবার আভাসই পাওয়া যাচ্ছিল।
সপ্তাহের গোড়ার দিকে চীনা সরকার নিয়ন্ত্রিত দৈনিক গ্লোবাল টাইমস বলেছিল, "চীনা সৈন্যরা ভারতীয় সেনাদের ওপর দ্রুতই এক মারাত্মক আঘাত হানবে এবং তারা সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। "
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও বলেছিলেন, ভারত তার আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এ নিয়ে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়।
সীমান্তের অবস্থাও ছিল তেমনি। চীন দাবি করে কয়েকদিন আগে ভারতীয় সৈন্যরা 'উস্কানিম‚লকভাবে' গুলিবর্ষণ করেছিল, এবং চীন তখন পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে - যদিও কী সেই ব্যবস্থা তা বলা হয়নি। ভারতীয় পক্ষ দাবি করে, চীনই ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছিল।
তার আগে জুন মাসে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় লাঠি এবং পাথর নিয়ে দু দেশের বাহিনীর এক মারাত্মক সংঘর্ষ হয়, যাতে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়।
সীমান্তে এখনও দু দেশের বিপুল পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করা আছে। তবে হঠাৎ ঠিক কি কারণে দু দেশ উত্তেজনা প্রশমনে একমত হলো - যা কেউই ঘটবে বলে ভাবেননি?
'বরফ-ভাঙা' দ‚ত
উইলসন সেন্টার নামের থিংক ট্যাংকের উপপরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান এবং অন্য বিশেষজ্ঞরা অনেকেই ধারণা করছিলেন যে দু'দেশই একটা সংঘাতের জন্য তৈরি ছিল, তবে তারা এটাও বুঝেছিল যে যদ্ধ কোন বিকল্প নয় এমনকি তা সীমিত আকারে হলেও।
"যুদ্ধ হলে তা দুদেশের জন্যই বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতো, এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ঝুঁকিটা ছিল খুবই বেশি" - বলছিলেন মি. কুগেলম্যান।
তিনি বলছিলেন, মি জয়শংকর অনেক বছর ধরে বেইজিংএ ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং চীনা কূটনীতিকদের সাথে তার ভালো সম্পর্কের কথা অনেকেই জানেন। এটা বরফ গলাতে সহায়ক হয়েছে।
তার কথায়, কূটনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সময় ব্যক্তিগত সম্পর্ক একটা ভূমিকা পালন করে।
আবহাওয়াও হয়তো একটা ভূমিকা পালন করেছে
শীতকালে গালওয়ান উপত্যকা উঁচু এলাকাগুলোর পরিবেশ খুবই প্রতিকুল হয়ে ওঠে। অনেকে হয়তো এদিকটার কথা ভাবেননি, কিন্তু আবহাওয়াও সম্ভবত একটা ভূমিকা পালন করেছে।
ভারতের সেনাবাহিনীর সাবেক একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) বিনোদ ভাটিয়া বলছেন, সৈন্যরা প্রতিকূল পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত কিন্তু সুযোগ থাকলে সৈন্যরা এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে চায়।
কিছু খবরে জানা যায়, ভারতীয় সৈন্যরা স¤প্রতি কিছু উঁচু এলাকার দখল নিয়েছিল যেখান থেকে চীনা ফাঁড়িগুলো দেখা যায়।কোন দেশই এটা সরকারিভাবে নিশ্চিত করেনি।
লে, জেনারেল ভাটিয়া বলছেন - হয়ত ভারত দরকষাকষি করার জন্য এটাকে ব্যবহার করেছে।
দুটি দেশই অন্য বহু সংকট মোকাবিলা করছে। ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে ছড়াচ্ছে এবং এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে।
কোন একটা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তা এসব ইস্যু মোকাবিলার পথে বিরাট বাধা সৃষ্টি করতো।
অন্যদিকে চীন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকগুলো দেশের সাথে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা মোকাবিলা করছে। হংকংএ তারা যে বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন করেছে তা-ও বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছে।
শান্তি পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য কত সময় লাগবে?
বিশ্লেষকরা বলেন, এর কোন পূর্বাভাস দেয়া খুব কঠিন।
ওয়াশিংটনের স্টিমসন সেন্টার নামে থিংক ট্যাংকের চীন বিশেষজ্ঞ ইউন সান বলছেন, মস্কোর আলোচনার পর যে যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়েছে তাতে খুঁটিনাটি অনেক কিছুরই উল্লেখ নেই।
এতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব এ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলএর কথা বলা হয়নি। অথচ এটিই কার্যত দু দেশের মধ্যেকার সীমান্ত এবং এলএসির অনেক জায়গা আছে যেগুলো বিতর্কিত, এবং সেখানে এখনো সেনা মোতায়েন করা আছে - বলছিলেন তিনি।
লে, জে. ভাটিয়াও বলছিলেন, উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সময় লাগে অনেক, এ ক্ষেত্রেও লাগবে। "এটি বিশাল এক এলাকা, সেনা কমান্ডারদের ব্যাপারটা বুঝতে সময় লাগবে। সামরিক স্তরের আলোচনাগুলো হবে এমন সময় সময় যখন উত্তেজনা বিরাজমান, এবং দু-পক্ষেই কাঁচা আবেগ কাজ করছে।"
দু পক্ষই চাইছে স্ট্যাটাস কো অর্থাৎ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে। কিন্তু মিজ ইউন বলছেন, ব্যাপারটা সহজ নয়, কারণ দু পক্ষের চোখে স্ট্যাটাসকোর সংজ্ঞা দু রকমের।
যেসব এলাকা ভারত তাদের বলে দাবি করে, চীনা সৈন্যরা সেসব জায়গা অনেক ভেতরে ঢুকে বসে আছে। তারা সেই জায়গাগুলো ছেড়ে যাবে কিনা - সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছুই বলা হয়নি।
বলা হয়, দুদেশের মধ্যে উত্তেজনার উৎস হচ্ছে একটি নতুন রাস্তা যা ভারতীয় সৈন্যদের শিবিরগুলোকে একটি বিমানঘাঁটির সাথে যুক্ত করবে।
কিন্তু মিজ ইউন বলছেন, এটা একমাত্র কারণ হতে পারে না, কারণ এটা ২০ বছর ধরে তৈরি হচ্ছিল এবং কোন গোপন ব্যাপার ছিল না।
তিনি মনে করেন, ভারত যে এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ওই অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা দানকারী আইনটি বিলুপ্ত করেছে, এবং দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে - তা এই সংঘাতের পেছনে একটা ভূমিকা পালন করেছে।
মিজ ইউন বলছেন, বেইজিং মনে করেছিল, ভারতকে একটা শাস্তি দিলে দিল্লি ও ওয়াশিংটন উভয়কেই একই সাথে একটা বার্তা দেয়া হবে। তবে ভারত যে পিছিয়ে যাবে না তা চীনের হিসেবের মধ্যে ছিল না।
চীন সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে অনেকগুলো দেশের সাথে কূটনৈতিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। একারণে তারা আগের চাইতে বেশি আক্রমণাত্মক আচরণ করছে, এবং সা¤প্রতিক মাসগুলোগুলোতে আক্রমণাত্মক মনোভাবটা চীনের পররাষ্ট্রনীতির একটা বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে বলে মিজ ইউন বলছেন।
তিনি বলছেন, বেজিংএর কর্মকর্তাদের বিবৃতিগুলোতে এই আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রতিফলিত হচ্ছে, চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়াও প্রায়ই তাদের শ্রেয়তর সামরিক শক্তির কথা প্রতিবেশীদের মনে করিয়ে দিচ্ছে।
ভারতের সাথে সংঘাতের ক্ষেত্রেও গত কিছুদিনে এ প্রবণতা দেখা গেছে। গালওয়ানের সংঘাতে ভারতীয় সৈন্য নিহত হলেও জুন-জুলাই মাসে দিল্লি ও চীনের ভাষা সংযতই ছিল।
মি. কুগেলম্যান বলেন, এর কারণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুদেশের সম্পর্ক উন্নত করার যে চেষ্টা চালাচ্ছেন - তা বানচাল করতে তারা চায়নি।
তার কথায়, এটা এখন দেখার বিষয় হবে যে চীন ও ভারত ব্যাপারটা কীভাবে তাদের জনগণের কাছে তুলে ধরে।
মিজ ইউন বলেন, হয়ত চীনের জন্য গরম গরম ভাষার পরিবর্তন আনাটা ব্যাপারটা একটু কঠিন হতে পারে কারণ তারা ভারতের বিপক্ষে দুর্বল বলে চিত্রিত হতে চাইবে না।
ভারত-চীন সীমান্ত বিবাদ বহু দশকের পুরোনো, তাই তা দু'দিনে মিটে যাবে এমন নয়।
তবে সূচনা হিসেবে এটা খারাপ নয়, বলছেন মি. কুগেলম্যান। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Jack Ali ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৫০ এএম says : 0
    Kafir never fight each other whereas so called muslim country fight each other.. Karfirs are always united against Muslim.. But Muslims are not united like Kafir..
    Total Reply(1) Reply
    • ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৫৭ পিএম says : 0

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ