পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতি কতটা নাজুক হয়ে পড়েছে, তা সবারই জানা। যেখানে উন্নত দেশগুলো তাদের অর্থনীতির ভঙ্গুরদশা উত্তরণে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি কতটা বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে রয়েছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। করোনার মতো এক অদৃশ্য ও মরণঘাতী ভাইরাস এভাবে পুরো বিশ্বকে নাস্তানাবুদ করে দেবে, তা হয়তো কেউ ভাবেনি। এই ভাইরাসের কাছে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিও খাবি খাচ্ছে। বিগত সাত-আট মাস ধরে একে ঠেকানোর কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বিশ্বের তাবৎ খ্যাতিমান বিজ্ঞানী এর প্রতিষেধক আবিষ্কারে উঠেপড়ে লেগেছেন। যেখানে যেকোনো রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও এর নিরাপদ প্রয়োগ নিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় লেগে যায়, সেখানে বিজ্ঞানীরা সাত-আট মাস কিংবা তার কিছু বেশি সময়ে করোনার মতো ভয়ংকর ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে এক অসম্ভব অভিযানে নেমেছেন। ইতোমধ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশ এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে চীন, রাশিয়া, ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই এগিয়েছে। চীনের টিকা চূড়ান্ত পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় তার উদ্ভাবিত টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশেও হওয়ার কথা রয়েছে। কোনো এক রহস্যজনক কারণে তা এখনও শুরু হয়নি। অন্যদিকে রাশিয়ার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন প্রেসিডেন্ট পুতিনের মেয়ের শরীরে প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে রেমডিসিভির নামে একটি ওষুধ বেক্সিমকো ফার্মা, এসকেএফ-এর মতো খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। গ্লােব ফার্মা নামে একটি প্রতিষ্ঠানও করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনের সাফল্য দাবী করেছে। যাই হোক, আশা করা হচ্ছে, করোনা ঠেকানোর মতো কার্যকর ভ্যাকসিন হয়তো এ বছর কিংবা আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। তবে সে পর্যন্ত অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সবকিছু অচল করে বসে থাকা কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই সব দেশই করোনার মধ্যেই অর্থনীতি সচল করতে পুর্নদ্যোমে কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ইতোমধ্যে সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
দুই.
করোনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার সঠিক হিসাব জানা নাই। তবে অনুমান করতে কষ্ট হয় না, এ ক্ষতি সহসা কাটিয়ে ওঠা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এই কষ্টসাধ্য কাজটিই এখন সরকারসহ বেসরকারি খাত এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও উদ্যোগী হতে হবে। করোনার ক্ষতি নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন পরিসংখ্যান ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। উন্নতির সূচক হিসেবে যে জিডিপির কথা বলা হয়, বিভিন্ন সংস্থার মতে, তা আড়াই শতাংশে নেমেছে। যদিও সরকার বলছে, পাঁচ শতাংশের ওপর রয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক চলছে এবং চলবে। কারণ, এর পরিমাপের বিষয়টি অনেকটা সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। সম্প্রতি টিআইবি জিডিপিকে রাজনৈতিক সংখ্যা হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে দেশের যে অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। সাধারণ মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে, তার একটি পরিসংখ্যান সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা বিআইজিডি ও পিপিআরসি’র জরিপে উঠে এসেছে। জরিপে বলা হয়েছে, করোনার আগে দেশে দরিদ্র্যের হার ছিল ২১ শতাংশ। করোনাকালে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে ২১.৭ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে এখন দারিদ্র্যের হার প্রায় ৪৩ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে, মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ধরলে, তা দাঁড়ায় ৭ কোটি ৩১ লাখ। বলা যায়, মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। জরিপে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা খরচ, সন্তানের শিক্ষা ব্যয় এবং যোগাযোগের ব্যয় সামলাতে না পেরে রাজধানী ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে ১৫.৬৪ শতাংশ মানুষ। রাজধানীর মোট জনসংখ্যার হিসেবে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ রাজধানী ছেড়েছে। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম থেকেও কাজ হারিয়ে ৯ শতাংশ মানুষ গ্রামে চলে গেছে। জরিপে করোনাকালে সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছে গৃহকর্মীরা। জরিপ অনুযায়ী, ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী কাজ হারিয়েছে। এরপর রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এ পেশার ৩৫ শতাংশ কাজ হারিয়েছে। তারপর রয়েছে কাজ হারিয়েছে ৩১ শতাংশ অদক্ষ শ্রমিক। অন্যদিকে আয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রিকসাচালকদের আয়ে। তাদের আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। জরিপের অন্য একটি দিক ছিল, করোনার কারণে আয় কমে যাওয়া মানুষের খাদ্য গ্রহণের হারও কমে গেছে। ৩০ শতাংশ পরিবার অর্থাভাবে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। করোনার আগে তারা তনি বেলা খেতে পারলেও তা একবেলা বা দুই বেলায় নামিয়ে এনেছে। এতো গেল নিম্ন আয়ের মানুষের করুণ দশার চিত্র। তবে যে শ্রেণীটি চিরকাল নানা অভাব-অনটন ও দুঃখ-কষ্ট পুষে জীবনযাপন করে সেই নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কী শোচনীয় অবস্থা, তা অনেকের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আত্মমর্যাদার কারণে তারা তা জানতেও দেয় না। এই যেমন একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী, তার চাকরিটি যখন চলে যায়, তখন তার কী অবস্থা হয়, তার খোঁজ কেউ জানে না, তিনিও জানান না। নীরবেই দুঃখ-কষ্ট নিয়ে বসবাস করেন। রাজধানী ছেড়ে যে কর্মহীন হয়ে লাখ লাখ মানুষ চলে গেছে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের মধ্যেও এরা রয়েছে। এই যে কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে বা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, তা দেশের অর্থনীতির জন্য এক বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে বন্যা যে রূপ ধারণ করেছে, তাতে গ্রামে গিয়েও যে এসব মানুষের কর্মসংস্থান হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। বন্যা যেন তাদের কাছে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে চেপে বসেছে। করোনার শুরুতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মানুষের দুর্দশার কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী চিন্তা দ্বারা দ্রুত প্রণোদনামূলক প্যাকেজ চালু করেন। এর মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠান, কৃষিখাত থেকে শুর করে দরিদ্র মানুষের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা রয়েছে। প্রায় এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন তিনি। তবে দুঃখের বিষয়, প্রধানমন্ত্রীর এই আন্তরিক এবং জনদরদী উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ধীর গতি চলছে। এর মধ্যে আবার দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। ত্রাণ চুরি, নগদ সহায়তার অর্থ লোপাটের মতো ঘটনা ঘটেছে। ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে মাসে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তার অর্থ বিতরণে দুর্নীতির বিষয়টি সকলের জানা। তবে বেশিরভাগ পরিবার এখনো নগদ সহায়তার এই অর্থ পায়নি। জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ সহায়তা পেয়েছে। এর মধ্যে গ্রামে দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে কম পেয়েছে। তাদের হার মাত্র ৩ শতাংশ। বোঝা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনামূলক প্যাকেজের সুবিধা নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে পড়ে গেছে। এই সুবিধাটি যদি ঠিকঠাকভাবে বাস্তবায়িত হতো, তাহলে মানুষের দুর্দশা কিছুটা হলেও লাঘব হতো। মূল বিষয় হচ্ছে, সরকার দেশের মানুষ এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে। তবে এ উদ্যোগ আপৎকালীন সহায়তা। দেশের মানুষকে সরকারের এই সহায়তার দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। নিজেদের কর্মে নিয়োজিত করার জন্য উদ্যোগী হতে হবে।
তিন.
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের সিংহভাগেরই লক্ষ্য থাকে পড়াশোনা শেষে একটি ভাল চাকরি পাওয়া। প্রাধান্যর তালিকায় এক নম্বরে থাকে সরকারি চাকরি। তা না পেলে, দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে বেসরকারি কোনো ব্যাংক বা কর্পোরেট হাউজে চাকরি করা। যুগের পর যুগ ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন সানাতন ধ্যান-ধারণা কাজ করছে কিংবা অভিভাবকরা তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে সরকারি চাকরির বিষয়টি তাদের কাছে ‘সোনার হরিণ’ হিসেবে বিবেচিত। এ চাকরি পেলে সারাজীবনে আর চিন্তার কিছু নেই, এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে। বাস্তবিকই সরকারি চাকরি এমন একটি পেশা, যেখানে চাকরির যেমন নিশ্চয়তা আছে, তেমনি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আর এখন সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের যে বিপুল সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, তাতে এ চাকরি ‘হিরার হরিণ’-এ পরিণত হয়েছে। বলা যায়, সরকারি চাকরিজীবীরা এখন দেশের সবচেয়ে সুবিধাভোগী শ্রেণী। এদের বেতন-ভাতার পেছনেই সরকারের তথা জনগণের অনেক অর্থ ব্যয় হয়। তাদের এ সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পেছনে সরকারের সদিচ্ছাই প্রাধান্য পেয়েছে, যাতে তারা আরও বেশি দেশের ও মানুষের সেবায় কাজ করতে পারে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে নিতে পারে। অন্যদিকে বেসরকারি চাকরির বিষয়টি অস্থায়ী। যে কোনো সময় প্রতিষ্ঠানের মালিক তার ইচ্ছা অনুযায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারে। এর নজির এই করোনাকালে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। গার্মেন্ট থেকে শুরু করে বেসরকারি ব্যাংক ও বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য চাকরিজীবী ছাঁটাই হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ছাঁটাই না করে বেতন কমিয়ে দেয়ার নীতি অবলম্বন করেছে। এর পেছনের প্রধান কারণ প্রতিষ্ঠানের আয় কমে যাওয়া। তবে প্রতিষ্ঠানের আয় কমে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে কর্মী ছাঁটাই বা বেতন কমিয়ে দেয়ার বিষয়টির মধ্যেও এক ধরনের প্রবঞ্চণা রয়েছে। যেমন যে প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক সময়ে বছরে এক হাজার কোটি টাকা লাভ করত, করোনার মন্দায় সে লাভ পাঁচশ’ কোটি টাকায় নেমে যাওয়ায় মালিক পক্ষের মধ্যে হায় হায় শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ ক্ষতি না হয়ে লাভ অর্ধেকে নেমে আসাই তাদের কাছে বিরাট লস হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এতে ব্যাকুল ও বিচলিত হয়ে কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কমিয়ে দেয়ার নীতি তারা অবলম্বন করছে। অথচ তারা এটা ভাবছে না, যে কর্মকর্তা ও কর্মীকে ছাঁটাই বা বেতন কমিয়ে দেয়া হচ্ছে, তাদের শ্রমে-ঘামেই তার প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়েছে। এটাও ভাবছে না, তাদের এই ছাঁটাইয়ের কারণে বেকার হওয়া চাকরিজীবী দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেশের বেকারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের এই মানসিকতার মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মাণ হয়, তারা শুধু নিজেদের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখছে, দেশ প্রেম বা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের যে ভূমিকা রাখা দরকার তা ভাবছে না। অথচ সরকারের সহযোগিতা নিয়েই তাদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। করোনা কর্মক্ষেত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং মানুষের আচরণের অনেক কিছুই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ফলে যেসব শিক্ষিত এবং বেকার তরুণ রয়েছে, তাদের এ থেকে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চাকরি জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, সনাতন এ চিন্তা-ভাবনা তাদের বদলাতে হবে। উদ্যোগী হয়ে নিজে কিছু করার মানসিকতা ধারণ করতে হবে। সরকারি চাকরি পেলে ভাল কথা, তবে তা পাওয়া যে কঠিন এবং সবাই পায় না, এটা মাথায় রাখতে হবে। আবার বেসরকারি চাকরি পেলে, তাতে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তা তো দেখাই যাচ্ছে। তার চেয়ে এটাই কি ভাল নয়, নিজে উদ্যোক্তা হয়ে নিজের স্বাধীনমতো জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নেয়া? এক্ষেত্রে বেকার তরুণদের অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। সন্তানদের বেকারত্বের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত না করে কিংবা চাকরির সন্ধান করার কথা না বলে তারা যাতে নিজে কিছু করতে পারে, এ ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া এবং সহযোগিতা করা দরকার। গ্রামের এক বেকার তরুণকে যদি নিজের পুকুর বা জমিতে মৎস্য চাষ, পশুপালন, হাস-মুরগীর খামার বা উচ্চফলনশীল ফল, শাক-সবজি, ফসলাদি করার জন্য উৎসাহী এবং সহযোগিতা করা হয়, তবে দেখা যাবে ঐ তরুণ তাতে আগ্রহী হয়ে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছে। তদ্রুপ শহরের শিক্ষিত তরুণদেরও যদি তাদের বাবা-মা স্বউদ্যোগে কিছু করার জন্য উৎসাহ দেয়, তাতেও সে তার মেধা কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারবে।
চার.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি যুবকদের উদ্দেশে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরা যাতে কিছু করে দেখাতে পারে-এমন প্রেরণাদায়ক কথা বলেছেন। পাশাপাশি তিনি উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে যুবকদের সহযোগিতা ও উৎসাহিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ আহবান অত্যন্ত দূরদর্শী। কারণ করোনা পুরো পৃথিবীর অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকার ধরণ বদলে দিয়েছে। আগের মতো প্রথাগতভাবে জীবন-জীবিকা এখন আর চলবে না। চাকরির বাজারও সংকুচিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দক্ষতা সম্পন্ন স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়েই প্রতিষ্ঠান চালানোর নীতি গ্রহণ করবে। তাছাড়া শিল্পকারখানাগুলো আগামী দশকের মধ্যে অটোমেশনে চলে যাবে। অর্থাৎ মেশিনের মাধ্যমেই উৎপাদন থেকে শুরু করে প্যাকেজিং পর্যন্ত সব কাজ করা হবে। বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতে এ প্রযুক্তি সবার আগে চালু হবে। ফলে এক মেশিনের মাধ্যমেই কাটিং, সেলাইসহ একটি পরিপূর্ণ পোশাক তৈরি হবে। এতে লোকবলও কম লাগবে। একজন অপারেটর হলেও কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। অন্যান্য শিল্পকারখানায়ও তাই হবে। ফলে তরুণদের উচিৎ হবে পড়াশোনা শেষ করে নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করা। নিজে উদ্যোক্তা হলে যেমন স্বাধীনভাবে কাজ করা এবং স্বাবলম্বী হওয়া যাবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ করা যাবে। এতে চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগা থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।