Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে পার্লামেন্টের কাছে ফেসবুকের জবাবদিহি

বিজেপির পক্ষপাতিত্ব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভারতে ফেসবুক কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছে এবং ঘৃণা ও বিদ্বেষমুলক প্রচারণায় সহায়তা করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেজন্যে ফেসবুকের শীর্ষ নির্বাহীদের এক পার্লামেন্টারি কমিটির সামনে এসে তার জবাবদিহি করতে হয়েছে।

ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ঘৃণা এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণার বিষয়ে ফেসবুকের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে গেলেও ফেসবুক বিজেপির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে ভারতে ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিজেপি পাল্টা অভিযোগ করে বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধ পক্ষের প্রতি ফেসবুক পক্ষপাত দেখাচ্ছে। তবে ফেসবুক দুই তরফ থেকে আসা অভিযোগই অস্বীকার করেছে।

এ অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের মধ্যে পড়ে ভারতে ফেসবুক বেশ বিপাকে আছে। ভারতে ফেসবুকের ব্যবহারকারী প্রায় ৩০ কোটি। তাদের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারী আরও বেশি, ৪০ কোটি। কাজেই বলা যেতে পারে, এ সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির জন্য ভারত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগের কথা প্রথম ফাঁস হয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে। তবে ফেসবুক দাবি করছে, তারা তাদের প্ল্যাটফর্মে ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারের কোন সুযোগ দেয় না।

বিবিসিকে এক ইমেইলে ফেসবুক এ প্রসঙ্গে জানিয়েছে, ‘যে ধরনের কথা ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ায় বা সহিংসতায় উস্কানি দেয়, আমরা সেসব কথা নিষিদ্ধ করেছি। আমাদের এ নীতি কার্যকর আছে গোটা বিশ্বেই। কার কী রাজনৈতিক অবস্থান বা কোন দলের সঙ্গে সম্পর্ক, সেগুলো বিবেচনা না করেই আমরা এই নীতি প্রয়োগ করি’।

কিন্তু ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক অনুসন্ধানী রিপোর্টের পর ভারতে ফেসবুকের ভ‚মিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। এ বিতর্কের পটভ‚মিতেই গতকাল পার্লামেন্টারি কমিটির সামনে ফেসবুকের নির্বাহীদের তলব করা হয়। ভারতে ফেসবুকের ‘হেড অব বিজনেস’ অজিত মোহান গতকাল ৩০ সদস্যের পার্লামেন্টারি কমিটির সামনে হাজির হবেন বলে কথা ছিল। এ কমিটিতে ভারতের সব রাজনৈতিক দলের এমপিরাই আছেন। তবে এটির প্রধান হচ্ছেন বিরোধী দল কংগ্রেসের একজন স্পষ্টভাষী এমপি শশী থারুর।

পার্লামেন্টারি কমিটির শুনানি হবে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। সেখানে ‘নাগরিকদের অধিকারের সুরক্ষা’ এবং ‘সোশ্যাল/অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের’ ব্যাপারে ফেসবুকের নীতি নিয়ে কথাবার্তা হবে।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ঠিক কী?

ফেসবুকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে তারা ভারতে মুসলিম বিরোধী প্রচারণা তাদের প্লাটফর্মে চালিয়ে যেতে দিচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ফেসবুকে এ কাজ বিজেপির প্রতি একধরনের পক্ষপাত।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের রিপোর্টে জানিয়েছিল, বিজেপির একজন নেতা, যিনি আইনসভার সদস্য, তিনি কিছু মুসলিম বিরোধী পোস্ট দিয়েছিলেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ বিষয়ে ফেসবুকের কাছে জানতে চাইলে ফেসবুক সেসব পোস্ট ডিলিট করে দেয়। এ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছিল, বিজেপি সমর্থক আরও অন্তত তিন ব্যক্তি একই ধরনের পোস্ট দেয়। এগুলো ছিল ফেসবুকের ‘ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা’ বিষয়ক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং বিষয়টি ফেসবুকের নজরেও আনা হয়। অথচ তারপরও এসব পোস্ট ডিলিট করা হয়নি।

এ পুরো বিতর্কের কেন্দ্রে আছে ভারতে ফেসবুকের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা আঁখি দাস। তিনি ভারতে ফেসবুকের পাবলিক পলিসি বিষয়ক একজন শীর্ষ নির্বাহী। আঁখি দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তিনিই এসব পোস্ট ডিলিট না করার সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী, আঁখি দাস তার কর্মীদের বলেছিলেন, ‘মিস্টার মোদির দলের লোকজনের বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নিলে ভারতে ফেসবুকের ব্যবসার সম্ভাবনার ক্ষতি হবে’।

আঁখি দাসের ব্যাপারে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল গত সপ্তাহান্তে আরেকটি রিপোর্ট ছেপেছে। এ রিপোর্টে অভিযোগ করা হচ্ছে, তিনি ফেসবুকের কিছু আভ্যন্তরীণ বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার দলকে সমর্থন করেছেন, একই সঙ্গে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অবজ্ঞাপূর্ণ কথা বলেছেন। ফেসবুক অবশ্য জোর গলায় কোন দলের প্রতি পক্ষপাত দেখানোর কথা অস্বীকার করে চলেছে। তারা বলছে, আঁখি দাসের এসব কথা অপ্রাসঙ্গিকভাবে এনে ভুল অর্থ করা হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ