Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুধু মালদ্বীপই ভারতের মিত্র!

দ্য ডিপ্লোম্যাট | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভারত তার প্রতিবেশীদের মধ্যে মর্যাদার প্রশ্নে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বর্তমানে, কেবল চির প্রতিদ্ব›দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গেই নয়, ভারতের তিক্ততা দেখা দিয়েছে নেপাল, বাংলাদেশ এবং সম্ভবত শ্রীলংকার সঙ্গেও। এটা এমন এক সময় ঘটছে যখন দেশটি তিব্বত সীমান্ত সংলগ্ন চীন সীমান্তে চাপের মুখে পড়েছে। বর্তমানে গোটা অঞ্চলের মধ্যে কেবলমাত্র মালদ্বীপ ভারতের জন্য অপেক্ষাকৃত একটা ভালো বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

চলতি বছরের মে মাসে নেপালী প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি ভারতকে একটা বিস্ময় উপহার দিয়েছেন। তিনি একটা নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে তাতে ভারতীয় ভূখন্ড হিসেবে পরিচিত কিছু অংশ নেপালের হিসেবে দাবি করেছেন। এই নতুন মানচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের অন্তর্গত কালাপানি, লিম্পিয়াধুরা এবং লিপুলেখ এলাকা নেপালের অন্তর্গত। ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এম. এম. নারাভানে উল্লেখ করেছেন যে, নেপাল সম্ভবত অন্য একজনের পক্ষে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। নাম উল্লেখ না করলেও দেশটি যে চীন, সে বিষয়ে নেপালীদের মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আর সে কারণেই ভারতের বিরুদ্ধে নেপালে ক্ষোভ আরো বেশি তীব্রতা পেয়েছে।

ভারত এবং নেপালের মধ্যকার এই মানচিত্র বিতর্কের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান নিজেও একটি নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করেছে। ওই মানচিত্রে গুজরাটের অংশবিশেষসহ সমগ্র জম্মু এবং কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভারতের বিরোধীদলীয় কংগ্রেস পার্টির সংসদ সদস্য এক টুইট বার্তায় বলেছেন, এটা অবশ্যই একটি ভূ-রাজনৈতিক বিবৃতি। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, নেপালের নতুন মানচিত্রের পটভ‚মিতে এটা হচ্ছে চীন কর্তৃক ভারতের প্রতিবেশী থেকে ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার আর একটা প্রয়াস। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না, যদি এরপর আরো এক বা দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ওই ধরণের একই বিপর্যয়কর পথে অগ্রসর হয়।

ভারত বাংলাদেশের সঙ্গেও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (এনসিএ) মুসলিমদেরকে টার্গেট করে প্রণীত হয়েছে বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীরা পর্যদুস্ত হয়েছেন। শেখ হাসিনার সরকার এটা পরিষ্কার করেছেন যে, ওই নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে বাংলাদেশ কি চোখে দেখে। এবং বাংলাদেশি অভিবাসীদেরকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ‘কীট’ হিসেবে উল্লেখ করেন, তখন তা বোধগম্য কারণেই ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। ঢাকার তরফে এই অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করার কয়েকটি ঘটনা আছে। এরমধ্যে শেষ মুহ‚র্তে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের প্রস্তাবিত দিল্লি সফর বাতিল রয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকশে সরকার ক্ষমতায় আসার কারণে সেটা নয়াদিল্লির উদ্বেগের কারণ হয়েছে। কারণ রাজাপাকশেকে চীনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা হয়। শ্রীলংকা সরকার সম্প্রতি জাপানি অর্থায়নে নির্মিত একটি হালকা রেল প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে এটাই দেখা যায় যে, সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে না। একইভাবে ভারত-জাপানের যৌথ উদ্যোগে নির্মীয়মান শ্রীলংকার ইস্ট কন্টেইনার টার্মিনাল (সিটি) প্রকল্প কলম্বোতে সংকটের মধ্যে পড়েছে। মাত্র এক বছর আগে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি ত্রিদেশীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। কিন্তু এখন এর কোনো নিশ্চয়তা নেই যে এই প্রকল্পটি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। অন্ততপক্ষে ভারত এবং জাপানকে অংশীদার রেখে এটা হওয়ার নয়।

এভাবে ভারতের প্রতিবেশী সম্পর্ক নানাভাবে দুর্দশা কবলিত হয়ে পড়েছে। ভারত মালদ্বীপে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সীমিত করতে নানাভাবে তৎপর। ভারতীয় গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে মালদ্বীপের যে অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা থেকে কাটিয়ে উঠতে ভারত একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছে। এর প্রকৃত লক্ষ্য কৌশলগত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। মালদ্বীপ যাতে তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে, সেজন্য ভারত তাকে চারশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বর্ধিত মুদ্রা সহায়তাও দিয়েছে। এর বাইরেও মহামারি সংকট কাটিয়ে উঠতে অতিরিক্ত আরো ১৪০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে মালদ্বীপকে।

তবে মালদ্বীপকে এইসব অর্থনৈতিক সহায়তার প্যাকেজ দেয়া সত্তে¡ও সেখানে ভারতের ভূমিকা এবং প্রভাব কতটা টিকে থাকে, সেটা দেখার বিষয়। নয়াদিল্লি অবশ্যই তার অন্যান্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট হবে। কিন্তু আপাতত কেবলমাত্র মালদ্বীপকে নিয়েই ভারতকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। (নিবন্ধটি লিখেছেন ডক্টর রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালান। তিনি একজন সাবেক কূটনীতিবিদ ও দিল্লিভিত্তিক ভারতের শীর্ষস্থানীয় থিংকট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নিউক্লিয়ার এন্ড স্পেস পলিসি ইনিশিয়েটিভের প্রধান)।



 

Show all comments
  • সিরাজ ১০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশে আছে না?
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ১০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৮ এএম says : 0
    ভারতের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখার কোনো যুক্তি নেই
    Total Reply(0) Reply
  • রফিক ১০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৯ এএম says : 0
    ভারত শুধু নিজের স্বার্থটাই দেখে অন্য কোন দেশের স্বার্থ কখনো চিন্তা করে না
    Total Reply(0) Reply
  • আশরাফুল ইসলাম ১০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৯ এএম says : 0
    ভারতের সাথে সম্পর্ক রাখা মানে নিজেদের বিপদ ডেকে আনা
    Total Reply(0) Reply
  • হিমেল ১০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫০ এএম says : 0
    ভারতের স্বভাব পরিবর্তন না হবে কেউ তাদের বন্ধু হিসেবে থাকবেন না
    Total Reply(0) Reply
  • saif ১০ আগস্ট, ২০২০, ৯:৪৭ এএম says : 0
    এটা একটা ভারতীয় কটুচালের অংশ, তারা এমন ভাবে দেবেযাতে আদৌ মালদ্বীপের কোন কাজেই আসবেনা, উদাহরণ বাংলাদেশে ভারতের নেয়া প্রকল্পগুলো। আল্লাহ্‌ আমাদেরদেশকে এবং সকল মুসলিম দেশকে রক্ষাকরুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Kaisar ১০ আগস্ট, ২০২০, ১০:৩৮ এএম says : 0
    Indian extremist deplomacy doesn't allow friendship with neighbors
    Total Reply(0) Reply
  • Ovi ১০ আগস্ট, ২০২০, ১০:৪০ এএম says : 0
    Indiar narrow mind niye bondhu powa duskor.
    Total Reply(0) Reply
  • Dulu ১০ আগস্ট, ২০২০, ১০:৪১ এএম says : 0
    India shudhu nite Jane dite Jane na. So bondhu powao jabe na.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ