পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা ও বন্যার কারণে দেশ এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনার ধাক্কা সামলানোর মধ্যেই ভয়াবহ বন্যা মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দ্বিবিধ কারণে দেশের অর্থনীতিতে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। করোনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণায় দেশের অর্থনীতির চাকা প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। সরকারি অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে। প্রশাসনের সচিব থেকে শুরু করে বড় কর্মকর্তারা বাসায় বা ‘হোম অফিস’ করা শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই দেশ ও প্রশাসন পরিচালনার মতো বৃহৎ কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। আমাদের মতো উন্নয়নকামী দেশের পক্ষে মাসের পর মাস এ পরিস্থিতিতে চলা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে এর প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতির কী দুর্দশা হয়েছে, তা সকলেরই জানা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিচক্ষণ নেতৃত্ব দিয়ে করোনার মধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল করার বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি প্রশাসনকে পুরোপুরি সচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রশাসনের সচিব থেকে শুরু করে সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের পুর্নদ্যোমে অফিস করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অফিসের কাজ কখনোই বাসায় বসে হয় না। যেখানের কাজ সেখানে থেকেই করতে হয়। হোম অফিসের নামে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক ধরনের ছুটি কাটিয়েছেন বলা যায়। অফিসে থেকে তাদের কাছ থেকে যে ধরনের সেবা পাওয়া যেত, হোম অফিসের মাধ্যমে সে ধরনের সেবা খুব কমই পাওয়া গেছে। এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের যে ভয়াবহ অবস্থা চলছে, তা মোকাবেলায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পুরোপুরি সক্রিয় হওয়ার বিকল্প নেই।
প্রশাসনকে বলা হয় দেশের সৌল বা আত্মা। এ আত্মা সচল রাখে সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারি। প্রশাসন যদি স্থবির হয়ে পড়ে, তবে দেশের গতিও ধীর হয়ে যায়। দেশের যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রশাসন যন্ত্রকেই সক্রিয় হতে হয়। দেশে যে দুর্যোগময় পরিস্থিতি চলছে, এ সময়ে প্রশাসন এবং এর কর্তাব্যক্তিদের সেবা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। করোনার মহামারি তো চলছেই, তার উপর বন্যার ভয়াবহতায় ইতোমধ্যে সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। অসংখ্য বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, ফসলি জমি, মৎস্য ও গবাদি পশুর খামার, রাস্তা-ঘাট, উপকূলীয় বাঁধ তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিলীন হয়ে গেছে। দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এবারের চলমান বন্যায় এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজারের মতো স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ফসলি জমি এবং অন্যান্য স্থাপনা তলিয়ে গেছে। এ এক মহাদুর্যোগ। এ সময়ে প্রশাসন তথা এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার উন্নয়ন ও সংস্কারে দিন-রাত সক্রিয়া থাকা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে শৈথিল্যের কোনো সুযোগ নেই। তাদের সেবা এখন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন। এর ব্যত্যয় ঘটলে মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। তাদের এখন স্বউদ্যোগে দুর্যোগ মোকাবেলার সকল কার্যক্রম চালাতে হবে। মনে রাখা দরকার, প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরকারের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী। তাদের মতো এমন সুযোগ-সুবিধা দেশের আর কোনো মানুষ পায় না। কাজেই তাদের কাছ থেকে মানুষ শতভাগ সেবা প্রত্যাশা করে। এ বিষয়টি তাদের মন ও মননে রাখা অত্যাবশ্যক। বন্যায় দেশের কোথায়, কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে নির্মাণ, সংস্কার এবং পুনর্বাসনের পরিকল্পনা এখন থেকেই করা উচিৎ। অনেক সময় স্থানীয় পর্যায় থেকে বন্যার ক্ষয়-ক্ষতির যেসব হিসাব দেয়া হয়, তা সবসময় সঠিক হয় না। করোনা নিয়েও ইতোমধ্যে নানা ধরনের তথ্য দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা গেছে, এসব তথ্য ভুল ও বিভ্রান্তিকর। তদ্রুপ বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি নিয়েও বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে, যা বাস্তবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এবারের বন্যা প্রলম্বিত হতে পারে। এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশকে বন্যার ‘হট স্পট’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা মনে করি, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বন্যার সার্বিক অবস্থা মনিটর করে প্রকৃত ক্ষতি নিরুপণের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
করোনা ও বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে ইচ্ছামতো ছুটি কাটালে চলবে না। দুর্যোগ মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতিকে সচল করতে তাদের সক্রিয় হতে হবে। বন্যার পানি নেমে গেলে জমি-ভূমি যখন জেগে উঠবে, তখন প্রকৃত ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠবে। মূলত সেই সময়টাতেই সবকিছু সংস্কার ও বিনির্মানের উদ্যোগ সবচেয়ে বেশি জরুরি হয়ে পড়বে। তবে এখন থেকেই তার সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, রাস্তা-ঘাট, বাঁধ, বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর পুনঃনির্মাণ ও সংস্কারের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। বন্যার্তদের পুনর্বাসনের কাজ থেকে শুরু করে কৃষি কার্যক্রমে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দেশের অর্থনীতি সচল করতে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সামনের সারিতে থাকতে হবে। তারা যেমন দেশের সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছে, তেমনি দেশের মানুষও তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সেবা প্রত্যাশা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।