মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়ায় স্পেন ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন দেশটির সাবেক রাজ হুয়ান কার্লোস। গত সোমবার স্পেনের রাজপ্রাসাদ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তিনি গত সোমবারই দেশ ছেড়ে বের হয়ে যান বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে।
৮২ বছর বয়সী কার্লোস দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি এক চিঠির মাধ্যমে তাঁর ছেলে বর্তমান রাজা ফিলিপকে জানিয়েছেন। তবে ফিলিপ জানিয়েছেন, তদন্তের জন্য যদি তাঁর সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হয়, তাহলে কার্লোসের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। ছয় বছর আগে কার্লোস ফিলিপের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
সউদী আরবে একটি দ্রুতগতির রেল প্রকল্প নির্মাণের চুক্তিতে কার্লোসের বিরুদ্ধে গত জুন মাসে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে তাঁর জামাতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শুরু হয়েছিল।
এ ছাড়া স্পেনের আর্থিক মন্দার সময় রাজ পরিবার হাতি শিকারের জন্য ভ্রমণে গিয়েও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।
দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এভাবে দেশ ছেড়ে যাওয়া একজন সাবেক রাজার জন্য খুবই অপমানজনক। ১৯৭৫ সালে স্পেনের স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্রাংকোর মৃত্যুর পর দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কার্লোস বেশ দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই সময় তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়। স্পেনের মানুষ তাঁকে সেই ভূমিকাতেই সব সময় মনে রাখবে- এমনটি প্রত্যাশিত ছিল। রাজ সিংহাসনে ৪০ বছর থাকার পর ২০১৪ সালে তিনি ছেলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
ছেলের কাছে চিঠিতে সাবেক এই রাজা লিখেছেন, ‘স্পেনের জনগণ, প্রতিষ্ঠান এবং রাজা হিসেবে তুমি যাতে ভালো কাজ করতে পারো সে জন্য আমি এখন দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সউদী আরবের মক্কা-মদিনা দ্রুত গতির রেল প্রকল্পের জন্য ৬০০ কোটি ডলারের কাজ পায় স্পেনের একটি কম্পানি। ওই কম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কার্লোসের ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এর জন্য তিনি ওই কম্পানির কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলেও শোনা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৮ সালে সৌদির সঙ্গে রেল চুক্তি থেকে ১০ কোটি ইউরো ঘুষ নিয়েছেন হুয়ান কার্লোস এবং অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে তা পাচার করেছেন। এ কারণে সুইজারল্যান্ডেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান।
৬৭০ কোটি ইউরোর চুক্তিতে মক্কা ও মদিনার মধ্যে হাই-স্পিড রেল লাইনের কাজ পেয়েছিল স্পেনের একটি ফার্ম। সেখান থেকেই নাকি হুয়ান কার্লোস বাগিয়ে নেন ১০ কোটি ইউরো। স্পেনের দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, কিছু অর্থ বেনামে সুইস ব্যাংকেও সরিয়ে ফেলতে পারেন কার্লোস, তাই সেখানেও তদন্ত চলছে।
১৯৭৫ সালে স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্রাঙ্কোর পতনের পর হুয়ান কার্লোসই দেশকে স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে আসতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ফ্রাঙ্কো স্পেন শাসন করেন ৩৬ বছর। সব মিলিয়ে ৪৪ বছরের মধ্যে হুয়ান কার্লোস স্পেনের প্রথম রাজার সিংহাসনে বসেন। ফ্রাঙ্কোর অনুসারীদের হতাশ করে তিনি দেশটিতে স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যান। এছাড়া কাতালোনিয়া ও বাস্ক অঞ্চলে স্বাধীনতা আন্দোলনও তিনি অনেকটা প্রশমিত করেন। আর ১৯৮১ সালে দমন করেন সামরিক ক্যু। তার অবদানের জন্য স্পেনের ইতিহাসেই বিরাট জায়গা পাওয়ার দাবিদার তিনি। অথচ সেই কার্লোসকে কিনা দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে দেশ ছাড়তে হচ্ছে। এটা তার জন্য ভীষণ লজ্জাজনক ঘটনাই হতে চলেছে।
গত মার্চ মাসে রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ দুর্নীতির অভিযোগে কলঙ্কিত পিতার উত্তরাধিকার অস্বীকার করেন। তখন জারজুয়েলা রাজপ্রাসাদ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিশেষ ভাতা হিসেবে বার্ষিক ১ লাখ ৯৪ হাজার ইউরো আর পাবেন না কার্লোস। সেই থেকে বাবার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে থাকেন ফিলিপ। সূত্র: বিবিসি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।