Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগামীকাল শুরু হচ্ছে নাসার মার্সমিশন আর্টেমিস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২০, ৭:২২ পিএম

নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হবে আগামীকাল ৩০ জুলাই। আর্টেমিস রোভার পারসিভের‌্যান্স পাড়ি দেবে মঙ্গলে। নাসার হিসেবমতো তাতে মোট খরচ হবে ২৪৬ কোটি মার্কিন ডলার।

২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি আর্টেমিস প্রকল্পে মঙ্গলে যাওয়ার জন্য ১৩ জনের নাম ঘোষণা করে নাসা। তাদের মধ্যে আছেন ৪২ বছর বয়সি ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজা চারী। মঙ্গল স্নাতকদের মধ্যে আছেন ৭ জন পুরুষ ও ৬ জন মহিলা। ২০১৭ সালে ১৮ হাজার প্রার্থীর মধ্যে থেকে বাছাই করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মঙ্গলে যেতে সময় লাগবে বেশ কয়েক মাস। তাই যাত্রার প্রথম ধাপ হিসেবে আর্টেমিস ২ অভিযানে নাসার ওরিয়ন মহাকাশযানে চেপে ১০ দিনের অভিযানে পৃথিবীর ২ লাখ ৮০ হাজার মাইল দূরে চাঁদের কক্ষপথ পরিক্রমা করবেন এই স্নাতকেরা। ২০২৪ সালে একসঙ্গে পুরুষ ও মহিলার পদার্পণ ঘটবে চাঁদে। এর পর আরও কঠোর অনুশীলন। তার পর ২০৩০ নাগাদ মঙ্গল মিশন। গত বছর থেকেই এই অভিযানের প্রস্তুতি তুঙ্গে।

এই মিশনে তিনটি ল্যান্ডিং সাইট চিহ্নিত করা হয়েছে। জেজেরো ক্রেটার, এন ই সারটিস এবং কলম্বিয়া হিলস। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্য হল জেজেরো ক্রেটার। সম্ভবত উল্কাপাতে এই ক্রেটারের সৃষ্টি হয়েছিল। আজ থেকে ৩৫০ কোটি বছর আগে সেই খাদে পানি জমে চিল্কা হ্রদের প্রায় দ্বিগুণ আকৃতির একটি হ্রদ তৈরি হয়। হয়তো সে পানিতে ছিল মঙ্গলের মাছ। আজ ক্রেটারে পানি নেই। কিন্তু সেই তখনকার পানির নীচের পলিতে জমাট বাঁধা পাললিক শিলার মধ্যে ধরা থাকতে পারে কোটি বছর আগেকার কোনও অজানা প্রাণীর জীবাশ্ম। রোভার মিশনে ক্রেটার জরিপের পাশাপাশি পাথর খনন করা হবে। উন্নত অ্যানালাইজারের সাহায্যে বিশ্লেষণও করা হবে সেখানেই। ২০২২ সালের মধ্যে জানা যাবে তার প্রাথমিক ফলাফল। ফলে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা) এবং রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস-এর তরফেও ২০২০ সালের জুলাই মাসে রোভার ‘রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন’ পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ দমকা ঝড়ের মতো কোভিড-১৯ সব পরিকল্পনা ওলটপালট করে দিল। নতুন হিসেবমতো এই রোভার মঙ্গলের পথে পাড়ি দেবে ২০২২ সালে। সেখানে পৌঁছবে ২০২৩ সালে।

আর্টেমিস প্রকল্পে মঙ্গলে মানুষের যে প্রথম শিবির বসতে চলেছিল, তার সময়সীমাও এখন অনিশ্চিত। সে জন্য অবশ্য আগে থেকে মঙ্গলের মাটিতে পাঠানো রোভারের ‘চোখ’ দিয়ে স্থান নির্বাচন হবে ২০২৭ সালের মধ্যে। আশা করা যায়, তত দিনে করোনার সমস্যা মিটবে। অর্থনীতি ফের স্থিতিশীল হবে।

১০ জুলাই জাপানের সঙ্গে আমেরিকার এক জয়েন্ট এক্সপ্লোরেশন ডিক্লারেশন অব ইন্টেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। চাঁদ ও মঙ্গল অভিযানে যৌথ ভাবে কাজ করবে দুটি দেশ। এই অভিযানগুলোয় মহাকাশচারীদের পাশাপাশি কাজ করবে উন্নত রোবট। অর্থাৎ, আগামী দু’দশকের মধ্যেই মানুষ এবং কার্গো নিয়ে লাল গ্রহের পথে পাড়ি দেবে এসএলএস। দেরিতে হলেও মঙ্গলে বসবে মানুষের হাট।

জাতিসংঘের ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৯৭০ কোটি হওয়ার সম্ভাবনা। এখনকার জনসংখ্যার থেকে ২০০ কোটি বেশি। এই অতিরিক্ত লোকের জন্য অতিরিক্ত খাবার, জ্বালানি, অক্সিজেন প্রয়োজন। ও দিকে, বেড়ে যাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড। বিশ্ব উষ্ণায়ন আরও ত্বরান্বিত হবে। জনস্ফীতির চাপে দেখা দেবে খাদ্যাভাব। তাই মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ভাবনা, চাঁদে বা মঙ্গলে মানুষের দ্বিতীয় উপনিবেশ গড়ে তোলার। মহামারি সেই ভাবনা রূপায়ণে যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, তার প্রমাণ জুলাইয়ের শেষে একের পর এক মঙ্গল অভিযান। ১৯ জুলাই হোর অরবাইটারের মঙ্গল পাড়ির হাত ধরে শুরু হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের এমিরেটস মার্স মিসন। ২৩ জুলাই যাত্রা শুরু করেছে চীনের মঙ্গলযান তিয়ানওয়েন-১। এর পরে নাসা-র পালা। শুরু হতে চলেছে আর্টেমিস প্রকল্প। মঙ্গলে পাড়ি দেবে নাসা-র মানুষ-বিহীন রোভার।

১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে প্রথম চাঁদে পা রাখে মানুষ। তার প্রায় ২৮ বছর বাদে ১৯৯৭ সালের ৫ জুলাই মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করে রোভার সোজার্নার। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ সমাজ সংস্কারক ইসাবেলা বমফ্রি ওরফে সোজার্নার ট্রুথ-এর নামানুসারে এই রোভারের নামকরণ। সোজার্নারের দুই ‘চোখ,’ যা দিয়ে সে মঙ্গলের মাটি আকাশ পর্যবেক্ষণ করে, তা হল— আলট্রা প্রোটন এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার ও ইমেজার ফর মার্স পাথফাইন্ডার। পৃথিবীর মাটিতে বসে বিজ্ঞানী ও উৎসুক জনতা দেখে নিলেন মঙ্গলের লাল মাটি। শার্ক, জোগি, বার্নাকল বিল, অ্যারে ভ্যালি, কাস্পার ইত্যাদি নানা পাথুরে টিলা রয়েছে সেখানে। সম্প্রতি ২০১২ সালে মঙ্গলের গেল ক্রেটারে নামে কিউরোসিটি রোভার। তার ক্যামেরায় ধরা পড়ে নাটকীয় চিত্র। আজ থেকে ৩৫০ কোটি বছর আগে মঙ্গলে যথেষ্ট পানি ছিল। ছিল পাহাড়, ঝর্না, নদীনালা, হ্রদ। বিশেষত মাউন্ট শার্কের কাছে তোলা কিউরোসিটির ছবিতে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তাই হয়তো এক কালে মঙ্গলে ছিল প্রাণও। সূত্র: স্পেস ডট কম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাসা

১৭ ডিসেম্বর, ২০২১
১৫ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ