পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়ার পরও হাজার হাজার কোটি টাকার বেদখল ভূমি উদ্ধার করতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা শহর এবং সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, সান্তাহারসহ বহু রেল স্টেশনের আশপাশের মূল্যবান জমি উদ্ধার করতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। এতে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, অন্যদিক প্রতি বছর রেল খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। রেল সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রেলে উচ্ছেদে প্রধান বাধা মামলা, আইনী জটিলতা ও রাজনৈতিক প্রভাব। সরকারদলীয় নেতা, এমপি ও মন্ত্রীদের তদবিরে থমকে যায় উচ্ছেদ অভিযান। এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেন, প্রকৃতপক্ষে রেললাইন ছাড়া সারাদেশেই রেলের জমি বেদখল হয়ে আছে। এগুলো উদ্ধারে এতোদিন কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, রেলের ভূ-সম্পত্তি নীতিমালা সংশোধন হয়ে গেলে জমি উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে। শিগগিরি এ নীতিমালা সংশোধন আকারে পাস হবে বলে আশা করছি।
রেলওয়ে সূত্র জানা গেছে, এখনও সারাদেশে রেলের প্রায় ৮ হাজার একর জমি বেদখলে রয়েছে। এসব জমির মূল্য প্রায় এক লাখ হাজার কোটি টাকা। যদিও জমি উদ্ধারে গত ১০ বছরে ৭ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, জমি উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। দখল জমি উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সাধারণত দেখা যায়, উদ্ধার অভিযান একদিকে শেষ হতে না হতেই আরেক দিক বেদখল হয়ে যায়। যে কারণে অভিযানে কী পরিমাণ জমি উদ্ধার করা হচ্ছে, সেটিও দৃশ্যমান নয়। এর আগে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা একাধিকবার ‘যে কোনো মূল্যে জমি উদ্ধার করা হবে’ প্রতিশ্রুতি দিলেও রেলের জমি আর উদ্ধার হয়নি। তবে বর্তমান রেলপথ মন্ত্রীর নির্দেশে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার যুগ যুগ ধরে দখলে রাখা বেশ কিছু জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এরপরেও বহু মূল্যবান জমি এখনও দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করা যায়নি।
রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগের তথ্যমতে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে রেলের ৩০ একর মূল্যবান জমি ৫০ বছর ধরে বেদখল হয়ে আছে। এসব জমিতে ইতোমধ্যে গড়ে উঠছে তিন তলা থেকে শুরু করে ৮-১০ তলা বহুতল ভবন। চট্টগ্রামের মতিঝর্ণা ও ফুলবাড়িয়ায় এসব জমি উদ্ধারে অভিযান চালানোর অনুমতি চেয়ে ঊর্ধ্বতনদের কাছে শতাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। একযুগ ধরে এ জায়গা উদ্ধারে ভূসম্পত্তি শাখার সংশ্লিষ্টরা তৎপরতা চালিয়ে গেলেও শুধু রাজনৈতিক কারণে জায়গা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। রেলওয়ের হিসাবেই এ পরিমাণ জমির মূল্য কমবেশি দুই হাজার ৬২০ কোটি টাকা। জমিগুলো দখল করে তিনতলা থেকে দশতলা পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব ভবন তৈরি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে রেলওয়ের ৪ জন মন্ত্রী মতিঝর্ণা ও ফুলবাড়িয়ার জায়গা উদ্ধারে প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি দফতর সূত্রে জানা গেছে, রেলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ঘিরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ওপর মহলের কোনো নির্দেশনা নেই। চট্টগ্রামের মতিঝর্ণা ও রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে রেলওয়ের ভূ-সম্পতি দফতর থেকে প্রায় শতাধিকবার রেলওয়ে বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু চিঠির অনুক‚লেই উচ্ছেদের ‘নির্দেশনা’ পাওয়া যায়নি। মূলত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনীহা, মামলা এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণেই জমি উদ্ধার হচ্ছে না। রেলওয়ের তথ্যমতে, রেল লাইনের দু’পাশে ১০ ফুট জায়গা খালি রাখার নিয়ম রয়েছে। দু’পাশের দুই ফুট জায়গায় রেল আইন অনুযায়ী সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। সরকারি নির্দেশনা ছাড়াও যে কোনো দুর্ঘটনা এড়ানো ও বাড়তি সতর্কতার জন্য এমন বিধান রয়েছে। অথচ রাজধানীর মতো দেশের জেলা শহরগুলোর কোথাও খালি জমি রাখার চিত্র দেখা যায় না। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেল লাইনের দুপাশে এখনও বস্তি ও দোকানঘর আগের মতোই আছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৮৫৪ একর বেদখল জমিতে ৯ হাজার ৬২৬টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৬৮৪ একর বেদখল ভূমিতে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে দুই হাজার ৩৪৩টি। আর চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬৯ একর বেদখল ভূমিতে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সাত হাজার ২৮৩টি। এসব ভূমির মধ্যে সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে ৫২৫ একর। তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩৭৫ একর এবং চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ১৫০ একর। আর বিভিন্ন ব্যক্তি দখল করেছে ৩২৮ একর। যদিও গত বছরের শেষের দিকে অভিযানে এসব জমি থেকে কিছু জমি উদ্ধার হয়েছে। করোনার কারণে এখন উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একজন কর্মকর্তা জানান, রেলের ভূমি উদ্ধারে প্রধান বাধা মামলা। অবৈধ দখলদারের কাছ থেকে ভূমি উদ্ধারে গেলে তারা আদালতে রিট করে দেন। এতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। এতে উদ্ধার তৎপরতা থমকে যায়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের চাপ তো রয়েছেই। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রাখা জায়গা কেউ ছাড়তে চায় না।
সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, জমি নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এক হাজার ১৪২টি মামলা চলমান আছে। চট্টগ্রামে কনকর্ড ও মতি ঝরনা ছাড়াও বন্দরের সঙ্গে ১১০ একর ভূমি নিয়ে মামলা চলছে। একই সঙ্গে মামলা চলছে দেশের স্টিল খাতের জায়েন্ট শিল্প গ্রুপ বিএসআরএম ও তৈরি পোশাকশিল্পের কেডিএস গ্রুপের সঙ্গে। এছাড়া চট্টগ্রাম খুলশী এলাকায় ভূমি বিক্রয়-সংক্রান্ত চার একর জমি নিয়ে মামলা চলছে। অপরদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে শেরেবাংলা হকার মার্কেট, কাপ্তান বাজার, আনন্দ বাজারসহ বেশ জায়গা নিয়ে মামলা চলমান আছে। ফলে এসব ভূমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে রেলের ভূ-সম্পত্তি ও আইন বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেন, রেলের কতো সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে সে বিষয়ে প্রকৃত হিসাবও আসলে নেই। আমার মনে হয়, রেললাইন ছাড়া সারাদেশেই রেলের জমি বেদখল হয়ে গেছে। এগুলোকে শত বছরের জঞ্জাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাইলেই এগুলো এত সহজে উদ্ধার করতে পারবো না। তবে প্রকৃত সমস্যা যেখানে সেখানে নজর দেয়া হয়েছে। এজন্য ভূ-সম্পত্তি নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এটি পাস হলেই ধীরে ধীরে আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো। তিনি বলেন, আমরা চাই সবকিছুকে লাইনে আনতে। রেলের জমিতে বহুতল ভবন ভাঙতে গেলে আইনী জটিলতায় পড়তে হবে। আমরা চাই ওই ভবন থেকে ভাড়া নিতে। এভাবে রেলের আয় বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েছি করোনার মধ্যে। আশা করছি নীতিমালা পাস হলে ভাল কিছু করতে পারবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।