চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মাওলানা আবদুর রাজ্জাক
॥ শেষ কিস্তি ॥
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “চন্দ্রের জন্য আমি বিভিন্ন মনজিল নির্ধারণ করেছি। অবশেষে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।” (সূরা ইয়াসিন ৩৯-৪০)
“তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।” (সূরা যুমার-৫)
প্রকৃতি জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান লাভে গবেষণা
আল্লাহতায়ালা তার স্বীয় প্রকৃতিকে বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সুন্দর উপকরণ দ্বারা সজ্জিত করেছেন। আর তা গবেষণার মাধ্যমে বের করা সম্ভব। আল্লাহ বলেন, “মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক, আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি, এর পর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি, অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যাইতুন, খর্জুর, ঘন উদ্যান, ফল এবং ঘাস, তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।” (সূরা আবাসা ২৪-৩২)
আল্লাহতায়ালা আরো বলেন “তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে”। (সূরা ইয়াসিন-৩৩)
“আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে অতঃপর আমি তা মৃত ভূ-খ-ের ওপর পরিচালিত করি। অতঃপর তা দ্বারা সে ভূ-খ-কে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই।” (সূরা ফাতির-৯)
সত্য জ্ঞান লাভের জন্য গবেষণা
যারা গবেষণা করবে তারা সত্য জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হবে। এ মর্মে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে “আর যখন তাদের কাছে পৌঁছে কোন সংবাদ শাস্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রাসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সে সব বিষয়, যাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মতো।” (সূরা নিসা-৮৩)
পরকালে জবাবদিহিতা থেকে মুক্তির জন্য গবেষণা
আল্লাহপাক মানুষকে কান, চোখ, অন্তর দান করেছেন সব কিছুকে কাজে লাগিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার জন্য। কিন্তু যদি তা না করা হয় তাহলে এর জন্য পরকালে জবাবদিহিতা করতে হবে। তাই আল্লাহ ইরশাদ করেন “নিশ্চই কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল-৩৬)
নিজেদেরকে জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত রাখার জন্য ভিন্যাস গবেষণা করা অপরিহার্য একটি বিষয়।
আইন গবেষণা করা
ইসলামী আইন এবং প্রচলিত আইন, আল্লাহর আইন এবং মানব রচিত আইনকে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা। অর্থাৎ আল্লাহর আইন কীভাবে মানব জাতির সমূহ কল্যাণ ও শান্তিবাদ আনতে পারে। আর মানব রচিত আইন দ্বারা কীভাবে অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি হয়। আল্লাহর আইন কীভাবে সংকট ও সমস্যা করতে সক্ষম আর মানব রচিত আইন কীভাবে সংকট তৈরি করে এগুলোকে চিন্তা-গবেষণা করে বের করা। ইসলামী আইনের বৈশিষ্ট্যগুলোকে খুঁজে খুঁজে বের করে এর শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার জন্য গবেষণা করা। বর্তমান দুনিয়াতে অপরাধের মাত্রা দৈনন্দিন বেড়েই চলছে। এই অপরাধ ধমনের জন্যে ইসলামী আইনের পন্থা ও পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে তা প্রকাশ করা।
ফিকাহ গবেষণা
মানব জাতিকে এই পৃথিবিতে সিরাতে মুস্তাকিমের পথে পরিচালিত করার জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব বিধান দান করা হয়েছে সেসব বিধানকে সুবিন্যস্ত করার জন্য গবেষণা করা। কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াসকে মৌলিক উৎস সাব্যস্ত করে মুজতাহিদ ইমামগণ ইসলামের সূচনা থেকেই সেই কর্ম চালিয়ে আসছেন। বর্তমান পৃথিবীতে বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ ও পাশ্চাত্য অপশক্তির বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলনের কারণে নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এবং মানুষের জিজ্ঞাসাও বাড়ছে। এ কারণে ইমামদের প্রণিত মূলনীতির আলোকে আধুনিক বিশ্বে আবর্তিত জটিলতা সমাধানের জন্যে ইসলামী ফিকাহের গবেষণা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।
তাফসির গবেষণা
কিয়ামত অবধি আগত মানব জাতির যাবতীয় সমস্যার সমাধান আল্লাহতায়ালা কোরআনে পাকের মাঝে রেখে দিয়েছেন।
কোরআনে হাকিম থেকে সে সমস্যার সমাধানকল্পে গবেষণা করা সময়ের দাবি। তবে তাফসির গবেষণার ক্ষেত্রে সাহাবি, তাবেয়ী ও পূর্বসূরীদের রচিত মূলনীতি অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। পূর্বসূরীদের প্রণিত মূলনীতিকে বাদ দিয়ে কেউ যদি যুগোপ বুলি তাফসিরকারক সাজে তাহলে তা বর্জনীয়।
হাদিস গবেষণা
পূর্বসূরিদের রচিত মূলনীতি অবলম্বন করে মুসলিম উম্মাহর যাবতীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্য হাদিস থেকে উৎসারিত জ্ঞানকে কাজে লাগানো। হাদিস নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য হাদিস গবেষণা অব্যাহত রাখা।
সিরাত গবেষণা
রাসূলে কারিম (সা.) মানব জাতির সামগ্রিক জীবনের আদর্শ মডেল। মানব জীবনের সকল দিক ও ক্ষেত্রে রাসূল (সা.)-এর সিরাতকে সামনে নিয়ে তার প্রয়োগ ঘটানোর জন্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে গবেষণা করা।
অর্থনীতি গবেষণা
পুঁজিবাদী অর্থনীতির কারণে সারা বিশ্বে অবৈধ পন্থায় যেভাবে সম্পদ আহরণ চলছে এতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। এমনকি পুঁজিবাদি অর্থনীতির কারণে মানুষ ¯্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নাফরমানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। এ জন্য ইসলামী অর্থনীতির গবেষণা সময়ের দাবি। যে পথ দেখিয়েছেন আমাদেরকে বিশ্ব বিখ্যাত আলেমে দীন আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা.।
রাজনীতি গবেষণা
আমাদের দেশে ইসলামী রাজনীতি সম্পর্কে দুটি ধারা চলছে। একটি ধারার মতে ইসলাম কেবলই নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত তথা ইবাদত সর্বস্ব একটি ধর্মাদর্শের নাম মাত্র, এতে রাজনীতির কে নো স্থান নেই। অপর ধারাটির মতে, ইসলাম রাজনীতি সর্বস্ব একটি ধর্মাদর্শের নাম। হুকুমত প্রতিষ্ঠাই এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। ইবাদত ইত্যাদি এর সহায়ক মাত্র মূল উদ্দেশ্য নয়। ‘ইসলামে রাজনীতির অবস্থান’ সম্পর্কিত এ ধারণা দুটিই কোরআন সুন্নাহ তথা দীন ইসলামের মূল চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী। এসব বিষয়ে গবেষণার সঠিক তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা।
ইসলামের পূর্ণাঙ্গতা সম্পর্কে গবেষণা করা
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ দীন; পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। আকীদা বিশ্বাস থেকে আরম্ভ করে ইবাদত, লেনদেন, ব্যক্তি জীবনের সামগ্রিক বিষয়, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনীতি, রাজনীতি, দাওয়াতে তাবলীগ, জিহাদ ও তাসাউফ সব কিছুই ইসলামের মধ্যে বিদ্যমান। এসব বিষয়ে গবেষণাধর্মী আর্ট তৈরি করা।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক বিকিরণ
শিক্ষা সচিব, দারুল উলূম মুহিউসসুন্নাহ নূরপুর মাদরাসা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।