Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী গবেষণা কী ও কেন

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাওলানা আবদুর রাজ্জাক

॥ দুই ॥
গবেষণা কেন করবে?
মহান আল্লাহতায়ালার মা’রিফাত লাভের জন্য
দৃশ্যমান এ বিশ্ব জগৎ মহান আল্লাহতায়ালারই সৃষ্টি। তিনি আপন শক্তি প্রদর্শনের নিমিত্তে সৃষ্টি করেছেন এ নভম-ল ও ভূ-ম-ল। যারা জ্ঞানী-বুদ্ধিমান তারা এ সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে। আল্লাহতায়ালার পরিচয় ও মা’রিফাত লাভে ধন্য হতে পারে। হাদিসে এসেছে “তোমরা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা কর। তবে আল্লাহকে নিয়ে গবেষণা কর না”।
“হযরত শেখ সাদী (রহ.) বলেন, এ সবুজ শ্যামল বৃক্ষরাজির প্রতিটি পাতা জ্ঞানীদের জন্য মা’রিফাতের এক একটি দপ্তর”।
সূরা আ’রাফের ১৮৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, তারা কি লক্ষ্য করেনি? আকাশ ম-ল ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব এবং আল্লাহ যে সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি এবং এর প্রতিও যে, সম্ভবত তাদের নির্ধারিত সময় কাছেই এসে পড়েছে। সুতরাং এরপর আর কোন কথায় তারা ঈমান আনবে?”
সূরা বাকারার ১৬৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আকাশ ম-ল ও পৃথিবীর সৃজনে, রাত-দিনের একটানা আবর্তনে সেসব নৌযানে যা মানুষের উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগরে বয়ে চলে, সেই পানিতে যা আল্লাহ আকাশ থেকে বর্ষণ করেছেন এবং তার মাধ্যমে ভূমিকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করেছেন ও তাতে সর্বপ্রকার জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং সেই মেঘমালাতে যা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে আজ্ঞাবহ হয়ে সেবায় নিয়োজিত আছে, বহু নিদর্শন আছে সেই সকল লোকের জন্য যারা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগায় ”।
আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ব-জগতের এমন সব অভিজ্ঞানের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যা আমাদের চোখের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যৌক্তিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় সেগুলো আল্লাহতায়ালার অস্তিত্ব ও একত্বের প্রতি সুস্পষ্ট নিদর্শন বহন করে। প্রতিদিন দেখতে দেখতে আমাদের চোখ যেহেতু তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তাই তাতে আমাদের কাছে বিস্ময়কর কিছু অনুভূত হয় না। নচেৎ তার এক একটি বস্তু এমন বিস্ময়কর বিশ্ব-ব্যবস্থার অংশ, যার সৃজন আল্লাহতায়ালার অপার কুদরত ছাড়া মহাবিশ্বের আর কোনো শক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। আসমান-জমিনের সৃষ্টিরাজি নিরবধি যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, চন্দ্র-সূর্য যেভাবে এক বাঁধাধরা সময়সূচি অনুযায়ী দিবা-রাত্র পরিভ্রমণরত আছে, সাগর যেভাবে অফুরন্ত পানির ভা-ার হওয়ার সাথে সাথে নৌযানের মাধ্যমে স্থলভাগের বিভিন্ন অংশকে পরস্পর জুড়ে রেখেছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী স্থান হতে স্থানান্তরে পৌঁছে দেয়, মেঘ ও বায়ু যেভাবে মানুষের জীবন-সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেয়, তাতে এসব বস্তু সম্পর্কে কেবল অকাট্য মূর্খই এটা ভাবতে পারে যে, এগুলো কোন ¯্রষ্টা ছাড়া আপনা-আপনিই অস্তিত্ব লাভ করেছে।
আরব মুশরিকগণও স্বীকার করত এ বিশ্ব জগৎ আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। তবে সে সাথে তারা এ বিশ্বাসও রাখত যে, এ কাজে কয়েকজন দেব-দেবী তার সাহায্যকারী রয়েছে। কোরআন মাজিদ বলছে, যেই সত্তার শক্তি এত বিশাল যে, যিনি অন্যের কোনো অংশীদারিত্ব ছাড়াই এ মহাজগৎকে সৃষ্টি করেছেন, ছোট ছোট কোনো কাজে তার কোনো শরিক বা সহযোগীর দরকার হবে কেন? সুতরাং যে ব্যক্তি তার বুদ্ধি-বিবেচনাকে কাজে লাগাবে সে জগতের প্রতিটি বস্তুর মধ্যেই আল্লাহতায়ালার একত্বের সাক্ষ্য-প্রমাণ দেখতে পাবে।
সূরা আল-ইমরানের ১৯০-৯১ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, “নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে), পরওয়ারদেগার! এ সব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।”
আসমান এবং জমীন সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহতায়ালার এক বিরাট নিদর্শন বিদ্যমান। এ দুয়ের মধ্যে অবস্থিত আল্লাহতায়ালার অসংখ্য সৃষ্টিরাজিকেও এ আয়াত দ্বারা বুঝানো হয়েছে। এ বিরাট সৃষ্টি জগতের মধ্যে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যম-িত প্রতিটি সৃষ্ট বস্তুই স্ব স্ব সৃষ্টিকর্তার নিদর্শনরূপে দাঁড়িয়ে আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলামী গবেষণা কী ও কেন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ