চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মাওলানা আবদুর রাজ্জাক
॥ চার ॥
তারপর চিন্তা-গবেষণা করে এই তাৎপর্য আবিষ্কারে সমর্থ হয়েছে যে, গোটা এই বিশ্ব-সৃষ্টি নিরর্থক নয় বরং এগুলো সবই বিশ্ব¯্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অসীম কুদরত ও হিকমতেরই প্রকৃত প্রমাণ। রাসূলে করিম (সা.) ইরশাদ করেন “কিয়ামতের দিবসে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, বুদ্ধিমান লোকেরা কোথায়? মানুষ বলবে, বুদ্ধিমান কারা? উত্তর দেয়া হবে, ওইসব বুদ্ধিমান যারা দাঁড়িয়ে, বসিয়ে ও শয়নে আল্লাহর জিকির করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করনি। আমরা তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। সুতরাং তুমি আমাদিগকে জাহান্নামের আজাব হতে রক্ষা কর। রাসূল (সা.) বলেন, তারপর তাদের জন্য একটি ঝা-া তৈরি করা হবে যার পেছনে তারা যেতে থাকবে। তাদেরকে বলা হবে তোমরা অনন্ত কালের জন্য বেহেশতে প্রবেশ কর।
একদা নবী কারীম (সা.) সাহাবাদের চুপচাপ বসে থাকা একটি দলের নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছ? তারা বললেন, আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে চিন্তা করছি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করিও; কিন্তু তার সত্তা সম্বন্ধে চিন্তা করিও না। যেহেতু তিনি ধারণার অতীত।
উপরোল্লিখিত সূরা আলে ইমরানের ১৯০ নং আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূল (সা.) বললেন, “ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস, যে উক্ত আয়াত পড়েও চিন্তা-গবেষণা করে না।”
হযরত আমর বিন আবদে কায়েস (রহ.) বলেন, আমি দু’এক জন নয় বরং অনেক সাহাবি হতে শুনেছি যে, ঈমানের নূর হলো চিন্তা-গবেষণা করা। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসূল করীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন “এক ব্যক্তি ছাদের ওপর শয়ন করে আসমান ও তারকারাজির প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে, তোমাদের এক জন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাপ করে দাও। সাথে সাথে তার দিকে রহমতের দৃষ্টি পড়ল এবং তার মাগফেরাত হয়ে গেল”।
“হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কিছু সময় চিন্তা গবেষণা করা সারা রাত ইবাদত করার চেয়েও উত্তম”। “হযরত আবু দারদা এবং হযরত আনাস (রা.) এর থেকেও এরূপ বর্ণনা এসেছে। এমনকি হযরত আনাস (রা.) বলেন, এক ঘণ্টা চিন্তা গবেষণা করা আশি বছরের ইবাদত হতেও উত্তম”।
মানব সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে অবগতি লাভের লক্ষ্যে
আল্লাহতায়ালা মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর আকৃতি ও সর্বাধিক জ্ঞান দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর এটা আল্লাহতায়ালা এ জন্যই করেছেন যাতে তার দয়া ও কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। মানুষই আল্লাহতায়ালার সুন্দরতম সৃষ্টি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম অবয়বে।”(সূরা তীন-৪)
মানুষকে সৃষ্টি করে আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন ধরনের ভাষা ও বর্ণ প্রদান করেছেন যা সত্যিই বিস্ময়কর। আর চিন্তাশীলদের জন্য এখানেও রয়েছে চিন্তার অনেক উপাদান। কালামে পাকে ঘোষিত হয়েছে “তাঁর আরও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোম-ল ও ভু-ম-লের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।”
সৃষ্টি থেকে কল্যাণ লাভের লক্ষ্যে
প্রাণী, উদ্ভিদ, জড় তথা পৃথিবীর সকল বস্তু আল্লাহতায়ালা মানব জাতীর কল্যাণের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, “আসমান-জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে যা আছে তার কিছুই আমি অনর্থক সৃষ্টি করিনি। (সূরা আন-আম)
আল্লাহর এ সৃষ্টিকে কীভাবে ঘর্ষণ করলে, কীভাবে মিশ্রণ করলে, কীভাবে খ- খ- করলে, কীভাবে আগুনে পোড়লে, কোন বস্তু আবিষ্কার করা যায়। কোথায় খনন করলে কী উদ্ভাবন করা যায়, এ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে সৃষ্টিকে স্বীয় কল্যাণে ব্যবহার করা।
পৃথিবীর গতি নির্ধারণের জন্য গবেষণা
পৃথিবীতে আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি নামে দুই ধরনের গতি আছে। এ গতি না থাকলে জীবনের অস্তিত্ব থাকত না। এ আহ্নিক গতির কারণে দিন রাতের আবর্তন, বায়ু প্রবাহ, সমুদ্র¯্রােত, সময় গণনা, জোয়ার-ভাটা হয়। অন্য দিকে বার্ষিক গতির জন্যে ঋতুর পরিবর্তন, দিন-রাতের হ্রাস-বৃদ্ধি ও প্রাণীয় উদ্ভিদের জীবন বৈচিত্র্যের পরিবর্তন হয় আর এসব বিষয়াবলী সম্পর্কে জানতে আমাদেরকে কোরআন এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াবলীর ওপর গবেষণা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।