Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনাকালে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতায় সাফল্য

| প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২০, ১২:০৪ এএম

বৈশ্বিক মহামারীতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতি ও সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা যখন রুদ্ধ হয়ে পড়েছে, তখন তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হয়ে উঠেছে একমাত্র ভরসাস্থল। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প এবং সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড টিকিয়ে রাখতে মাইলফলক ভূমিকা পালন করছে। বলতে গেলে করোনা মহামারীতে দীর্ঘমেয়াদী সাধারণ ছুটি, শাটডাউন, লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে তথ্যপ্রযুক্তিই হয়ে উঠেছে মানুষের বিকল্পহীন মাধ্যম। যখন সব মার্কেট, শপিংমল বন্ধ, তখন অনলাইন কেনাকাটার ওয়্যার হাউজগুলোর ব্যবসা বেড়েছে কয়েকগুণ। করোনা সংক্রমণের ভয়ে স্বাস্থ্যখাত ও হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা কার্যত ভেঙ্গে পড়ার বাস্তবতায় সাধারণ মানুষ যখন দিশাহারা, তখন টেলিমেডিসিনের উপর নির্ভরশীল হয়েছে অনেকে। বিভিন্ন সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে হাজার হাজার ডাক্তার টেলিমেডিসিন পরিষেবায় যুক্ত হয়ে রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। করোনা মহামারীর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের হঠাৎ এই উত্তরণ সম্ভব হয়েছে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব নীতিমালা ও অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের কারণে। যদিও সরকারের ঘোষিত রূপরেখা অনুসারে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কাক্সিক্ষত বিকাশ ও উন্নয়ন এখনো সম্ভব হয়নি, তথাপি ইতোমধ্যে যা অর্জিত হয়েছে, তাতে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতায় অগ্রসর দেশগুলোর তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম।

করোনাভাইরাসের প্রাদুভার্ব যেমন একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা, একইভাবে এই মহামারীতে ঘরবন্দি কোটি কোটি মানুষের জন্য অনলাইন মার্কেটিং, টেলিমেডিসিন, ঘরে বসেই অফিসের কাজ করা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সভা, গণমাধ্যম এবং জাতিসংঘ থেকে শুরু করে সব আন্তর্জাতিক সংস্থা পর্যন্ত তাদের সভা-সম্মেলনগুলো টেলিকনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ স্ট্রিমিং এখন নতুন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সহজেই দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিরা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণ করছেন। এ এক নতুন বাস্তবতা। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের রূপরেখায় এসব অর্জনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হলেও করোনাভাইরাস মহামারী আমাদেরকে অনেক আগেই এই বাস্তবতায় উপনীত করেছে। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভরতায় এমন এগিয়ে যাওয়ার পেছনে আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর সুযোগ্য সন্তান সজিব ওয়াজেদ জয়ের অসামান্য অবদান। সরকারের ডিজিটালাইজেশন নীতিমালা, সাবমেরিন ক্যাবলে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে কানেক্টিভিটি, এ খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সর্বোপরি দেশে ১৬ কোটি মোবাইলফোন গ্রাহক এবং ১০ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বিশাল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তিখাতে উচ্চ সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। তবে এ খাতের আউটসোর্সিং কর্মসংস্থান, সফ্টওয়্যার প্রোডাক্টিভিটি ও রেমিটেন্সের লক্ষ্যমাত্রা থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে রয়েছি। করোনাকালে আকস্মিক অভাবনীয় তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভরতার বাস্তবতা এ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

এ কথা ঠিক যে, মুখোমুখি বা সরাসরি শারীরিক যোগাযোগ ও আদান-প্রদানের বিকল্প হিসেবে ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় বেশ কিছু অপূর্ণতা ও সীমাবদ্ধতাও আছে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সব মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা বাস্তবায়ন, মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা, নিত্যপণ্যসহ কেনাকাটা, দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত রাখা, ভার্চুয়াল আদালত এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ড নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস বন্ধ রেখেও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা অব্যাহত রাখার ন্যূনতম প্রয়াসকে কার্যকর রাখতে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা অন্ধের যষ্ঠির ভূমিকা পালন করছে। এই অস্বাভাবিক বিশ্ববাস্তবতায় বাংলাদেশের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিগত একদশকের বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। এখন দেশে করোনাভাইরাসের পিকটাইম চলছে। আসন্ন কোরবানির ঈদে পশু ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে যাবতীয় কেনাকাটায় অনলাইন নির্ভরতা এখন সময়ের বাস্তবতা। সময় হয়েছে উচ্চগতিসহ নেটওয়ার্কের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ফোর-জি নেটওয়ার্কের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তা ফাইভ-জিতে উত্তরণের পথ সুগম করা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং আইএসপিদের যথেচ্ছ মুনাফাবাজি বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে আরো কমমূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে সরকার যে সব উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল করোনাকালীন বাস্তবতা সে ক্ষেত্রে শাপে বর হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে মানুষ সামাজিকভাবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে। এহেন বাস্তবতায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল নিশ্চিত করতে হলে সরকারের প্রশাসন, আমলাতন্ত্র ও আদালত সংশ্লিষ্ট সকলকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি কানেক্টিভিটি ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে। সব মানুষের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতার বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে এ খাতের বিকাশ ও বিনিয়োগে বিদ্যমান সমস্যা এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রতি বিশেষ নজর দেয়া এখন সময়ের দাবি।



 

Show all comments
  • * শওকত আকবর * ৩ জুলাই, ২০২০, ১০:৩৫ এএম says : 0
    সম্পাদক,ভক্তিপুর্ন সালাম নিন।ইনকিলাবের মাধ্যমে ডেকোরেটর মালিকদের কষ্ট ও দুঃখের কথা সরকারের কাছে পৌছে দিন।আমরা আজ খুবই কষ্টে দিন কাটাই।সহজ শর্তে ঋন চাই।প্রনোদনা চাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাকাল


আরও
আরও পড়ুন